অস্ত্রবাহী সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের দিনগুলো

মুহাম্মদ শামসুল হক: ১৯৭১ সালের ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে দেশব্যাপী যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় তাতে চট্টগ্রামের বীর জনতা অনন্য ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয়, পাকিস্তান থেকে অস্ত্র বোঝাই ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে বাধা দিতে গিয়ে...

বাংলাদেশ-ভারত: মুক্তি, মানবতা ও অগ্রযাত্রার যুগলবন্দি সম্পর্ক

১৯৭১ সাল। বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ চলছিল, তখন পড়শি দেশ হিসেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি ভারতের সরকার ও গণমানুষের সহযোগিতার ইতিহাস তাৎপর্যপূর্ণ। সেসময় প্রায় এক কোটি মানুষ প্রাণের তাগিদে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে। শুধু তাই নয়, ভারত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়ে আমাদের স্বাধীনতার রক্তাস্নাত যুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম...

একাত্তরের এই দিনে- হরতাল অব্যাহত রাখাসহ বঙ্গবন্ধুর ৩৫ নির্দেশ

১৪ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিনে রাজপথে নেমে আসে। সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিমাল্লাদের দখলে। সামরিক আইনের ১১৫ ধারা জারির প্রতিবাদে সেদিন বেসরকারী কর্মচারীরাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১১৫-এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও এদিন শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদ...

পহেলা মার্চ দুপুর থেকেই শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি আমরা নিজেদের প্রথমত বাঙালি, পাঞ্জাবি ও সিন্ধি ভাবতে শুরু করি এবং শুধুই ঘটনাচক্রে নিজেদের মুসলমান ও পাকিস্তানি ভাবি, সে ক্ষেত্রে পাকিস্তান ভেঙে যাওয়া অনিবার্য।’ ২৩ বছর পর জিন্নাহর সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়; পাকিস্তান ভেঙে ১৯৭১ সালে ...

অসহযোগ আন্দোলনে নারী

নীরু শামসুন্নাহারঃ ১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ। একাত্তর সালের পহেলা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় আহ্বানকৃত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আকস্মিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কোনোরকম আলোচনা না করেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একতরফাভাবে এ-ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ...

অসহযোগ আন্দোলন- ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ এর ঘটনাবলি

ভাষণ শেষে আড়াইটা বাজে বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কিছুটা দেরিতে মঞ্চে ওঠেন। স্বাধীনতার ডাকসহ ঐতিহাসিক ভাষণটি দেন ঠিকই, কিন্তু সেটি সর্বস্তরে তখনো পৌঁছায়নি। কারণ পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের হস্তক্ষেপে বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের লাইভ সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন বেতারের কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। পরদিন (৮ মার্চ) পাকিস্তান বেতারে...

অসহযোগের উত্তাল দিন

সেলিনা হোসেনঃ বাঙালি-বাংলাদেশের ইতিহাস একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দিগ্দর্শন। বাঙালির অতিজাগরণে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরবর্তী পর্যায়ে যোদ্ধা জাতি হিসেবে বাংলাদেশের সৃষ্টি বাঙালির এক দীপ্ত নতুন পরিচয়। নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পৃথিবীর সীমানায় বাঙালি জাতিসত্তার গৌরব ছড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছে আত্মমর্যাদার ভিত্তি। মাতৃভাষার মর্যাদার জন্...

জনসমুদ্রে গণজোয়ার তোলা সেই দিন

এম. নজরুল ইসলামঃ  সে এক দিন এসেছিল বটে বাঙালি জাতির জীবনে। ৭ মার্চ ১৯৭১। জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা ভাষণ দেবেন। সকাল থেকেই প্রতীক্ষার প্রহর গুণেছে মানুষ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভীড় জমিয়েছিলে রমনার রেসকোর্স ময়দান, আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। জনসমুদ্রে গণজোয়ার তোলা, ইতিহাস গড়া এক অপরাহ্নে তিনি এলেন। মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করলেন মানুষেরই মনের কথা। ‘ঘরে...

স্বপ্নের বিজয় যেভাবে এলাে

শামসুজ্জামান খানঃ বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটেছে ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় ১৯৭১ সালে। ইতিহাসে লেখা আছে বাঙালির স্বাধীনতা কামনার, স্বপ্ন কুঁড়ির মতাে বা অস্পষ্ট আকাঙ্ক্ষার ও ইচ্ছার মতাে বীজাকারের, অঙ্কুর উদগমের অবয়বের মতাে কিছু দিকচিহ্নের কথা। লেখা আছে সেই স্বাধীনতা-স্বপ্নের আগুনে প্রবেশ করে ওই স্পর্ধার জন্য পুড়ে মরার কথা। লেখা আছে অগণন ত্যাগ-তিতিক্...

১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১: পথ করতে আলো, রাতভর জ্বলেছিল ঘরের বাতি

নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর যেদিন বিজয়ের সূর্য হেসেছিল বাংলার আকাশে, সেদিন কেমন ছিল ঢাকা? নয় মাস অবরুদ্ধ থাকা মানুষগুলোর মুক্তির আনন্দের প্রকাশইবা ছিল কেমন? ৫০ বছর পর তার চাক্ষুস সাক্ষী অনেকে হারিয়ে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে, কিন্তু যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের মনে এখনও জ্বলজ্বল করে সেই স্মৃতি। তেমনই একজন সত্তরোর্ধ্ব আনোয়ারুল আলীম; ওষুধের ব্যবসা করতেন এক সময়। এখন অবসর নিয়ে...

বঙ্গবন্ধু ও বিজয়ের স্মৃতি

তোফায়েল আহমেদঃ স্মৃতির পাতায় বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের অনেক ছবি ভেসে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন সামনে নিয়ে দীর্ঘ ২৪টি বছর সংগ্রাম পরিচালনা করে, নিজের জীবন উত্সর্গ করে ধাপে ধাপে অগ্রসর হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন মানুষের হূদয়ে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী গৌরবগাথা অম্লান থাকবে। তিনি এমন এক মহামানব, যার হূদয় ছিল মানুষ...

বন্দিদশায় যেভাবে পরিবারকে বাঁচিয়েছিলেন বেগম মুজিব

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করলেও বঙ্গবন্ধুপত্নী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যরা তখনও মুক্ত হননি। ওই সময়য়ে ঘটনাবলি নিয়ে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে দৈনিক বাংলা পত্রিকা। বেগম শেখ মুজিব কেবল ঠান্ডামাথায় কৌশল অবলম্বন করে কীভাবে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচিয়েছিলেন সেই কথা তুলে ধরেছিলেন সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি ডিসেম্বরে...

একজন বিদেশি বীরপ্রতীকের গল্প

অজয় দাশগুপ্তঃ কিছুদিন আগে ইসলামাবাদে পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী লেখকদের এক সভায় বাংলাদশের ভূয়সী প্রশংসার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে বয়স্ক এক ভদ্রলোক আমাদের নারী নেতৃত্বের উন্নতি, শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা আর নারীদের কারণে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন বারবার। তিনি আমাদের মুদ্রায় মা-ছেলের বই পাঠ করার ছবিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, এখানেই বোঝা সম্ভব কেন বাংলাদেশ...

জ্ঞান ফেরার পর দেখি লাশের স্তূপে পড়ে আছিঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান সরকার

'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে দেখি, হলের পাশেই লাশের স্তূপে পড়ে আছি। তখন আসলে কী ভেবেছিলাম, মনে করতে পারব না। পরে বুঝতে পেরেছি, মরে গেছি ভেবে আমাকেও লাশের সঙ্গে ফেলে রেখে গেছে। তাকিয়ে দেখছিলাম, চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। রক্ত ও পচা গন্ধে দম বন্ধ যাওয়ার মতো অবস্থা।' কথাগুলো বলছিলে...

৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ

এই দিনে মিত্রবাহিনীর বিমানবাহিনী ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয়। বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন উত্তপ্তহয়ে পড়ে। আর জাতিসংঘে বাংলাদেশকে নিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। এদিকে বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। এতে যুদ্ধ বিরতির জন্য মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র বুশের চেষ্টায় সোভিয়েত প্রতিনিধি কমরেড মালিক ‘ভেটো’ প্রয়...

ঢাকা মহানগরের ক্র্যাক প্লাটুনের সর্বশেষ সফল অপারেশন

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমঃ ডিসেম্বর মাস হচ্ছে চূড়ান্ত লড়াইয়ের মাস। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ঘটনা তা হলো, সপ্তম নৌবহর যখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানি জান্তাদের পক্ষে আসতে থাকে, তখন আমাদের কাছে খবর পাঠানো হলো। যেহেতু সপ্তম নৌবহর আমেরিকার। পুরো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অত্যন্ত কঠিনভাবে বিরোধিতা করবে। তাই আমাদের কাজ হবে ঢাকা শহরে আমেরি...

মুকুন্দপুর ট্রেন ব্লক অপারেশন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ

মেজর নাসির উদ্দিন (অব.): আমি খুব অল্প বয়সে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। এক বছর পর ’৭০ সালের মার্চে কমিশন অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পাই। আমার প্রথম পোস্টিং ছিল রংপুরে। আমি মূলত ট্যাংকের অফিসার। রংপুরে তখন সবে একটা ট্যাংক রেজিমেন্ট পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসেছে। সেখানে ৫৫টি ট্যাংক ছিল। মার্কিন এম ২৪ ট্যাংকগুলো সেফি নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ২...

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট

মজিবর রহমানঃ যার নেতৃত্ব ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হতো না, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই লেখাটি উৎসর্গ করছি বঙ্গবন্ধুর নামে। আমার রাজনৈতিক জীবনের অতিতের স্মৃতিগুলো আমাকে সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী হতে এবং অনুপ্রেরণা যোগাতে সহায়তা করে। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনে অংশগ্...

অপ্রতিরোধ্য বিজয়ে ভেস্তে যেতে থাকে পাকবাহিনীর সব পরিকল্পনা

‘অনেক যুদ্ধ গেল/অনেক রক্ত গেল/ শিমুল তুলোর মতো সোনা-রুপো ছড়াল বাতাস।/ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,/নরম নোলক পরা বোনটিকে/আজ আর কোথাও দেখি না।/কেবল পতাকা দেখি,/কেবল পতাকা দেখি,/স্বাধীনতা দেখি!/তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?/তবে কি আমার বোন,/ তিমিরের বেদিতে উৎসব?’[উচ্চারণগুলি শোকের: আবুল হাসান] এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বিজয়ের...

মুক্তিযুদ্ধের ৭ শ্রেষ্ঠ বীর

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দেশের সর্বস্তরের লাখো বাঙ্গালি প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পথে শহীদ হয়েছেন তিরিশ লক্ষ বাঙ্গালি, সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লাখেরও বেশি মা-বোন। সশস্ত্র বাহিনীর বাঙ্গালি সদস্যেরাই প্রথম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বাং...