১৯৭১, নীলফামারীর গোলাহাট গণহত্যা

সাব্বির মাহমুদ রাবাতঃ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তান সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে। ২৫ মার্চ থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানী সেনা ও তাদের সহযোগী জামায়াত, মুসলিম লীগ, বিহারীরা মিলে বাঙালী হিন্দু-মুসলিমদের জোর করে ধরে নিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে বিমানবন্দরের কাজ করিয়ে নিতে থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। ১ জুন বিহারী সম্...

গণহত্যা ১৯৭১- মৌলভীবাজারের পাঁচগাঁও

২৭ মার্চ বিকাল ৩টায় পাকিস্তানী বাহিনী মৌলভীবাজার জেলার উত্তরের রাজনগর উপজেলায় প্রবেশ করে। পাকিস্তানী বাহিনীর প্রথম শিকারে পরিণত হয় রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ভূমিউড়া গ্রামের পণ্ডিত শ্যামাপদ কাব্যতীর্থ। একাত্তরে রাজনগরে পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানের কারণে স্থানীয় কিছু রাজাকার সুবিধা লাভ করতে শুরু করে। তারা শান্তি কমিটিতে নাম লেখিয়ে গ্রামে প্রভাব খাটাতে থাকে।...

মহিমান্বিত মার্চ- ইতিহাসের মাইলফলক

নাজনীন বেগমঃ ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় কালপর্ব অতিক্রম করে আবারও নতুন এক পথপরিক্রমা বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় অধ্যায় হয়ে বিরাজ করছে। বসন্তের মিষ্টি হাওয়া প্রকৃতির মাঝে তার স্নিগ্ধ আমেজ নিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে। নব বসন্তের পাতায় পাতায় সবুজের সমারোহ, দক্ষিণা বাতাসের সুবাসিত শিহরণ- সব মিলিয়ে নিসর্গের বাতাবরণ এক অনন্য রূপে সজ্জিত। এমন সুশোভিত, মনোমুগ্ধকর পরিবে...

১৯৭১, ছুটি খাঁ দীঘি গণহত্যা

মাসুদ রানাঃ ২৬ ও ২৭ মার্চ বিকেলে পাকিস্তানী বাহিনী চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলাধীন জোরারগঞ্জ ইউনিয়নে প্রবেশ করে ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৭-২৮ মার্চ থেকে পাকিস্তানী বাহিনী এলাকার অসহায় বাঙালী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াতরত মানুষকে এখানে ধরে এনে অত্যাচার-নিপীড়ন করে হত্যা করতে থাকে। অসহায় বাঙালীদের হত্যার পরে তাদের মৃতদেহ ফেলার জন্য জোরারগঞ্জ বাজারের আধা কিলোমিটা...

নিবিড় নজরদারিও রুখতে পারেনি অনন্য উত্থান

অজয় দাশগুপ্তঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। আর কয়েকদিন পরেই (২০১৯, ১৭ মার্চ) তিনি শতবর্ষে পা দেবেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের ৭ মাসের মধ্যেই (১৯৪৮, ১১ মার্চ) তিনি বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে হরতাল পালন করতে গিয়ে জেলে গেলেন। তখন তার বয়স ২৮ বছরও পূর্ণ হয়নি। অথচ সদ্যোজাত পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ বা ইন্টে...

অগ্নিঝরা মার্চঃ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম

তোফায়েল আহমেদঃ ৫ মার্চ ১৯৭১। এই দিন হরতাল কর্মসূচি পালনকালে টঙ্গীতে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ৬ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। খুলনা ও রাজশাহীতেও যথাক্রমে ২ জন ও ১ জন নিহত হন। টঙ্গীতে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বায়...

ক্ষুধামুক্তির সংগ্রামে জয়

অপূর্ব আজাদঃ পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭ কোটি মানুষের এই জাতির লক্ষ্য এখন মধ্য আয় এবং সেখান থেকে উন্নত বিশ্বের সোপানে ওঠা। বাংলাদেশকে একসময় বলা হতো ক্ষুধার দেশ, দুর্ভিক্ষের দেশ। সেই শায়েস্তা খানের আমলে টাকায় যখন ৮ মণ চাল পাওয়া যেত তখনো এ দেশে দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গায় মানুষ প্রাণ হারাত। ব্রিটি...

১৯৭১, বরিশালের কাঠিরা গণহত্যা

বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রাম কাঠিরা। স্বাধীনতার পূর্বে একটি সাধারণ হাটবাজার ছাড়া আগৈলঝাড়ার পরিচয় দেয়ার মতো বিশেষ কিছু ছিল না। কাঠিরা ছিল খুব সাধারণ একটি গ্রাম, যা চারদিক থেকে বিল দিয়ে ঘেরা। তাই কাঠিরাকে প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলই বলা যায়, যেখানে বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোন পথ ছিল না। যদিও পাকিস্তানী বাহিনীর আক্রমণের সময় কাঠিরা...

১৯৭১, খুলনার আজগড়া গণহত্যা

আরিফ রহমানঃ অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করে। বাঙালীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে নির্মূল করতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা এ কার্যক্রম চালায়। দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের সহায়তাকারী দালালরা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করে। ৬ লাখ না...

মুক্তির মন্ত্রে জ্বলন্ত মার্চ

ড. শফিক আশরাফঃ বাংলায় ফাগুন এলেই প্রকৃতিতে আগুন জ্বলে। চারদিকে শিমুল-পলাশের মতো আগুন রঙা ফুল দেহ ও মনে একটি বিপ্লবী বার্তা ছড়ায়। মার্চ মাস এই ফাল্গুনকে বুকে নিয়ে গৌরব ও ইতিহাসকে জড়িছে রেখেছে। মার্চকে আমরা ডাকি স্বাধীনতার মাস বলে। মার্চ মাস প্রচুর ঘটনাবহুল। বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির যত জাগরণের কথা স্মরণ করা যায়, মার্চের জাগরণের সঙ্গে তার কোনো তুলনা চল...

অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা

তোফায়েল আহমেদ: 'মার্চ' আমাদের স্বাধীনতার মাস। ১৯৭১-এর মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফেব্রুয়ারি যেমন আমাদের ভাষার মাস, মার্চ তেমনি আমাদের স্বাধীনতার মাস। '৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে '৭১-এর ছাব্বিশে মার্চ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি দিনই ছিল সংগ্রামমুখর। আর '৭১-এর মার্চ মাসের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল বৈপ্লবিক। প্রতি বছর মার্চ মাস এলেই ম...

উত্তাল মার্চ ১৯৭১- বাংলার জনগণ ইয়াহিয়ার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে: বঙ্গবন্ধু

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ হঠাৎ এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দলমত নির্বিশেষে ঢাকার সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শহরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ইয়াহিয়া খান তার সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের ...

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ঃ আত্মসমর্পণের আগের সেই মুহূর্তগুলো

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। সময় আনুমানিক সকাল ৯টা। ঢাকায় অবস্থানরত পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তাদের দপ্তরে বসে বৈঠক করছিলেন একসঙ্গে। একটি চিরকুট এলো সেই সময়, চমকে দিল সবাইকে। বৈঠকে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে নিয়াজি, মেজর জেনারেল জামশেদ, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, রিয়ার অ্যাডমিরাল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকী, সিদ্দিক সালিক ও আরও কয়েকজন। সেই চি...

সেদিনের অকুতোভয় তরুণরাই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিঃ বাহালুল মজনুন চুন্নু

পঁচিশে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে যে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর গণহত্যা শুরু করেছিল, মৃত্যু-ধ্বংস-আগুন-আর্তনাদের বীভত্স খেলায় মত্ত হয়ে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, নয় মাস পর তার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ষোলই ডিসেম্বর। লন্ডনের নিউ টাইমস পত্রিকায় সেই সময় বলা হয়েছিল, রক্তই যদি কোনো দেশের স্...

দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং আগামীর বাংলাদেশ

ড. আতিউর রহমানঃ ‘...আমাদের জীবনে সুস্পষ্টতা নাই। আমরা যে কী করিতে পারি, কত দূর আশা করিতে পারি, তাহা বেশ মোটা লাইনে বড় রেখায় দেশের কোথাও আঁকা নাই। আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্রবল করিয়া তোলে।...আশা করিবার ক্ষেত্র বড় হইলেই মানুষের শক্তিও বড় হইয়া বাড়িয়া ওঠে। ...কোনো সমাজ সকলের চেয়ে বড় জিনিস যাহা মানুষকে দিতে পারে তাহা সবার চেয়ে বড় আশা। সেই ...

বঙ্গবন্ধু, এক বহুমাত্রিক দার্শনিক

অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্তঃ পলাশী প্রান্তরের নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকা-ের চেয়েও জঘন্যতম ঘটনা হলো ১৫ আগস্টের বর্বরোচিত ঘটনা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনার আর কোন দৃষ্টান্ত নেই। যে পাকিস্তানীরা বঙ্গবন্ধুকে স্পর্শ করতে সাহস পাননি, সেই পাকিস্তানীরাই কিছু বাঙালী কুলাঙ্গারের সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেন। জাতির সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের বিচার এ দেশের মাট...

সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে গণহত্যাঃ লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির

১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়েছে নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে। গণহত্যা ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পরবর্তী নয় মাসে সমগ্র বাংলাদেশে অব্যাহত ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ কিংবা আরো বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত। আফ...

স্বাধীনতার ঘোষণা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রঃ প্রফেসর ড. এম শাহ্ নওয়াজ আলি

স্বাধীনতা মানুষের আজন্ম পিপাসা। আর এ পিপাসা থেকেই জন্ম নেয় সংগ্রামী চেতনার। এ সংগ্রামী চেতনাবোধই মানুষের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথকে সুগম করে স্বাধীনতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার পর বাঙালি জাতির ওপর নেমে আসে আরেকটি নব্য উপনিবেশবাদ। দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের শেষ প্রহর এই অগ্নিঝরা মার্চ। ৭...

জনতার সঙ্গে একীভূত হয়ে যাওয়াঃ ড. শেখ আবদুস সালাম

৭ মার্চ বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অম্লান এবং অনন্য দিন। এখন থেকে ৪৭ বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে এই দিন তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন। তাঁর এই ভাষণটি ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক। সেই ভাষণ সম্প্রতি ইউনেস্কো কর্তৃ...

পেরুয়া গ্রামে গণহত্যাঃ লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির

১৯৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা অঙ্কুরে বিনাশ করতে চেয়েছে নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে। গণহত্যা ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পরবর্তী নয় মাসে সমগ্র বাংলাদেশে অব্যাহত ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ কিংবা আরো বেশি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত। আফ...