ঢাকা মহানগরের ক্র্যাক প্লাটুনের সর্বশেষ সফল অপারেশন

2369

Published on ডিসেম্বর 3, 2020
  • Details Image

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রমঃ

ডিসেম্বর মাস হচ্ছে চূড়ান্ত লড়াইয়ের মাস। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ঘটনা তা হলো, সপ্তম নৌবহর যখন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানি জান্তাদের পক্ষে আসতে থাকে, তখন আমাদের কাছে খবর পাঠানো হলো। যেহেতু সপ্তম নৌবহর আমেরিকার। পুরো মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অত্যন্ত কঠিনভাবে বিরোধিতা করবে। তাই আমাদের কাজ হবে ঢাকা শহরে আমেরিকার স্থাপনা যেখানে আছে, সেখানে আঘাত করা।

আমরা ডিসেম্বরের ৯-১০ তারিখ ঢাকা শহর রেকি করে দেখলাম, ঢাকায় ইউএস অ্যাম্বাবি, আমেরিকার সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটা প্রেস ক্লাবের উল্টো দিকে অবস্থান করছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে এসে পড়াশোনা করত। যেহেতু সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে, সেহেতু আমেরিকাকে আমরা একটা বার্তা দিতে চেয়েছি, বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা এখনো জীবিত। সে কারণে ঢাকা একেবারে অবরুদ্ধ করব। তা জানান দিতেই ইউএস অ্যাম্বাসি ও লাইব্রেরি উড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। সে মোতাবেক ১১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় আমরা ক্র্যাক প্লাটুনের কয়েকজন (মসগুল, মানু, নিলু, বাবুল এবং আমি) নেতৃত্বে ইউএস, আইএস আমরা উড়িয়ে দেই। এটাই ছিল ঢাকা মহানগরের ক্র্যাক প্লাটুনের সর্বশেষ সফল অপারেশন।

আমাদের এই অপারেশনের পর পাক হানাদার বাহিনী যারা বিভিন্ন বাঙ্কারে, গর্তে পজিশন নিয়ে বসেছিল তারা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেয়। তখন সপ্তম নৌবহর খবর পায়, আমেরিকার যেসব স্থাপনা আছে, সেগুলোতে আক্রমণ করতে শুরু করেছি। এটা ছিল অত্যন্ত সফল অপারেশন। এরপর ক্যান্টনমেন্ট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে মুগদাপাড়া হয়ে ক্যান্টনমেন্টের শেষ মাথা পর্যন্ত আমরা অবস্থান নেই। ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেলা ১১টা পর্যন্ত পাক বাহিনীর সঙ্গে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। বসুন্ধরার পরেই যে জায়গা, বালু নদীর ভিতর দিয়ে পেছনে ধলেশ্বরী নদী এই মাঝখানে 'নো ম্যানস আইল্যান্ড' (মুক্ত অঞ্চল) এলাকায় আমাদের ক্র্যাক প্লাটুনের অবস্থান ছিল। আমরা প্রতি নিয়ত ক্যান্টনমেন্টে হামলা করতাম। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিতাম। আমরা টোয়েন্টিমর্টার, এইটটি ওয়ান এমএম, এলএমজি দিয়ে সম্মুখ যুদ্ধ করতাম। ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে যখন দেখলাম, আকাশ পথে মিত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার আসছে, তখন বুঝতে পারলাম, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পথে। পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে, আমাদের এখন ঢাকা যেতে হবে। উপরে হেলিকপ্টার, নিচে আমরা দৌড়াতে দৌড়াতে ডিআইডিতে টেলিভিশনের ভবন ছিল। এটা আমরা দখল করি। টেলিভিশনের ভবনের উপরে গিয়ে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সন্ধ্যার আগে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেই।

লেখক : আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। অনুলেখক: রফিকুল ইসলাম রনি

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত