1648
Published on মার্চ 10, 2021নীরু শামসুন্নাহারঃ
১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চ। একাত্তর সালের পহেলা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চ ঢাকায় আহ্বানকৃত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আকস্মিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কোনোরকম আলোচনা না করেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একতরফাভাবে এ-ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ঢাকার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। উপরন্তু কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সমরসজ্জার ব্যাপকতা পাকিস্তানি সামরিকজান্তার হন্তারক চেহারাকে বাঙালির কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলার মানুষ এই বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে আসে। নারী-পুরুষ, গৃহী-কর্মজীবী সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্বিশেষে রাজপথে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো রুদ্ররোষে ঢাকার রাজপথে আছড়ে পড়ে যেন! মুহূর্তে পল্টন ময়দান রূপ নেয় জনসমুদ্রে। হোটেল পূর্বাণীর দিকে ধাবিত হতে থাকে জনস্রোত।
সে-সময় হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় ৬-দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছিল। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করায় বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল হোটেল পূর্বাণীকে ঘিরে ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। গগণবিদারী স্লোগানে, স্লোগানে রুদ্ররোষে ফেটে পড়ছে জনতা। জনতা তাদের নেতার কাছ থেকে জানতে চায় পরবর্তী করণীয়। বঙ্গবন্ধু তখন হোটেলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যেতে আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ দৃঢ়তা এবং আবেগমথিত কণ্ঠে অপেক্ষারত উপস্থিত দেশি-বিদেশি অগণিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিনা চ্যালেঞ্জে আমি কোনো কিছুই ছাড়বো না। ৬-দফার প্রশ্নে আপোস করবো না। ২ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ২টা পর্যন্ত হরতাল চলবে। ৭ই মার্চ রেসকোর্সের ময়দান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ পরে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে হোটেল পূর্বাণীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং বলেন, ‘৬ মার্চ পর্যন্ত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল আর ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। বিকেল ৩টায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে প্রতিবাদ সভা হবে।’
প্রতিবাদ সভায় ছাত্র-জনতা সকলে লাখোকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও নির্দেশনামতে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে নেওয়ার শপথ নেয়। এখানে এ-কথাটি প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে পড়ে যে, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনের ক্ষেত্রভ‚মি তৈরি হয়েই ছিল। সে-সময় এবং পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনে-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করেন তরুণ নারীনেত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৬৯-১৯৭১ এই দুটি বিশেষ নিয়ন্ত্রক বছর বাঙালিদের জন্য এক অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কালপর্বকে চিহ্নিত করে- ঐতিহাসিক এক নির্বাচনী-অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সার্বিক সংগ্রামকে একটি সমন্বিত পদ্ধতির মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয় এবং নিজস্ব ভূখণ্ড অর্জনের মূলকেন্দ্রবিন্দুতে ধাবিত করার ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামকের ভ‚মিকা পালন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে অসাধারণ ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে তিনি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে অসংখ্য অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও শোষক চক্রকে রুখে দিয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছেন, তার তুলনা বিশ্বে বিরল। তার অদম্য সাহস, ইস্পাত-কঠোর সংকল্প, প্রগাঢ় বিশ্বাস, আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং তার প্রতি জনগণের অমিত আস্থা, ঐক্য ও সংহতি তাকে প্রতিটি সংগ্রামেই শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে-জন্যই বাংলাদেশের আরেক নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মাতৃভূমিকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার অবিশ্রাম সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জন ও পরবর্তী পর্যায়ে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রতিনিয়ত যুক্ত ছিলেন বলেই তিনি স্বাধীনতার স্থপতি। বাঙালির জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই এক চিরন্তন ইতিহাস। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। মৃত্যুর তুচ্ছতা অতিক্রম করে তিনি চিরকালের মহানায়ক।
অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ: ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত নারীনেত্রী, কর্মী ও কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সাথে সাধারণ নারীরাও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রাজপথে নেমে আসে। মার্চের শুরু থেকেই অগণিত সাধারণ নারীরা ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে এবং বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা ও মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়। মার্চের ২ তারিখ থেকেই নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়। ২ মার্চ থেকেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাশাপাশি প্রচুর সাধারণ নারীরা অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের সভায় অংশগ্রহণ করতে থাকে। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ও নির্দেশনায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পরিচালনায় ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। ইশতেহারে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং সমাবেশে গীত হয়। ৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত ন্যাপনেত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রামকে সার্থক করার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করতে হবে।’ তার এই অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় কার্যক্রম অসংখ্য সাধারণ নারীর অংশগ্রহণকেও প্রতিবিম্বিত করে বটে। কবি সুফিয়া কামালকে সভাপতি করে ‘পূর্ব পাকিস্তান মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। আরও বেশ কয়েকজন সক্রিয় নারীনেত্রীও পরিষদে যুক্ত হয়ে অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন, তারা হলেন- জোহরা তাজউদ্দীন, নূরজাহান মুরশীদ, বদরুন্নেছা আহমেদ, সেলিনা বানু, আমেনা আহমেদ, সারা আলী ও রাজিয়া বানু। আরও যুক্ত ছিলেন- আয়েশা আখতার, কাজী মমতা হেনা, মতিয়া চৌধুরী, শওকত আরা, শাহান আরা, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, ফওজিয়া মোসলেম, মুনিরা আখতার, ফেরদৌসি রহমান, লায়লা হাসান, আফসারী খানম, রাহিজা খানম ঝুনু ও বিলকিস নাসির উদ্দিন। ৫ মার্চ তারিখে পূর্ব বাংলার ৩৩ জন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পীরা এক যুক্ত বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে নারী অভিনেত্রী রোজী চৌধুরী, রোজী সামাদ, কবরী, শবনম, সুলতানা জামান প্রমুখরা যুক্ত হন। ৬ মার্চ, বেতার, টেলিভিশন, চলচ্চিত্রশিল্পীদের এক সভায় স্বাধিকার আন্দোলনের মূল বিষয়কে গান ও সুরের মধ্য দিয়ে জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলা একাডেমি চত্বরে এই সভায় সভাপতি ছিলেন শিল্পী লায়লা আর্জুমান্দ বানু। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের সহযাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের বিপ্লবী মানস-চেতনার গভীরতা সম্পর্কে জানতে পারা যায় সে-সময়ের অন্যতম সংগ্রামী তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদের বয়ানে- ‘৬ মার্চ সারারাত বঙ্গবন্ধু বিচলিত ছিলেন কি বলবেন তিনি তার প্রাণপ্রিয় জনগণকে, সে-সময় বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে এই বলে প্রবোধ দিয়েছিলেন, সাহস জুগিয়েছিলেন- “তুমি যা বিশ্বাস করো তা-ই বলবে”।’ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার অমর কবিতাখানি রচনা করে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে অসীম শ্রদ্ধা এবং গভীর ভালোবাসায় আসীন। এ-কথা বলার অপেক্ষা রাখে না বঙ্গবন্ধুর আজীবনের দেশমাতৃকার মুক্তিসাধনার সহ-সাধিকা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর মর্মের সঙ্গী হিসেবে, একজন সহযোদ্ধা হিসেবে এবং নারী হিসেবে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিটি আন্দোলনে। বঙ্গবন্ধুর সাথে তিনিও সতত স্মরণযোগ্য এক মহান নারীযোদ্ধা।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে ১০ লাখেরও বেশি জনতার মধ্যে সেদিন উপস্থিত অসংখ্য প্রতিবাদী নারীর প্রতিনিধি হয়ে উঠে বিজয়-সূচক দেখানো এক সাধারণ নারীর একটি অসাধারণ হাত! নারী-পুরুষ, বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থান, পোশাক সবকিছুই মিশে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের একটি ঐকতানে- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই অসাধারণ ঐকতানে বলিয়ান বাতাসে আন্দোলিত হয়ে ওঠা ঐ ধূলি-মলিন বিজয়-সূচিত হাতের সাধারণ নারীই যেন দেশমাতৃকারূপে ধরা দেয় লাখো জনতার হৃদয়ে! নারীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন- ‘মা-বোনেরা অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘আমাদের সন্তানের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।’
রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে যোগ দিতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ফেরদৌসআরা, মুসলিমা, হাবিবা খাতুন প্রমুখ একই দিনে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে মহিলা পরিষদের সভায় আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই সভায় সারা আলী, মালেকা বেগম, সেলিনা বাহার জামান, কণিকা ভট্টাচার্য, মনোয়ারা বেগম প্রমুখ আন্দোলনকে বেগবান করতে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। স্বাধিকার সচেতন নারীরা অসহযোগ আন্দোলনে ধীরে ধীরে নিজেদের সক্রিয় করে তুলতে থাকেন।
১৫ মার্চ টেলিভিশন নাট্যশিল্পীদের সভায় উপস্থিত থেকে আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন রওশন জামিল, আলেয়া ফেরদৌস প্রমুখ নারী শিল্পীবৃন্দ। নিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতি আপওয়া (পূর্বাঞ্চল ইউনিট) বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং নারীদের যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানানো হয়। ১৬ মার্চ মহিলা পরিষদ আয়োজিত বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে নারীদের অংশগ্রহণে এক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য প্রদান করেন আয়েশা খানম ও মখদুমা নার্গিস প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র ইউনিয়নের ছেলে-মেয়েরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে ডামি রাইফেল নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের ট্রেনিং শুরু করে। ১৯ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের এই ট্রেনিংপ্রাপ্ত বাহিনী ঢাকা শহরে মার্চপাস্টে অংশগ্রহণ করে। মার্চপাস্টে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ছাত্রনেত্রী কাজী রোকেয়া সুলতানা, রোকেয়া খানম ও ডা. নেলী প্রমুখ। এদের সাথে ছেলেরাও যুক্ত ছিল।
ছাত্রলীগও জহুরুল হক হল মাঠে ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করে। তারাও এক বিশাল বাহিনী গড়ে তোলে। ট্রেনিং শেষে ছাত্রলীগের ছেলে-মেয়েরাও ডামি রাইফেল নিয়ে রাজধানীর পথে মার্চপাস্ট করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিং শেষে ছাত্রীনেত্রীরা বিভিন্ন কলেজে ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়ভাবে মেয়েদের সংগঠিত করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে। বক্শীবাজার কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, লালমাটিয়া কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের ছাত্রীরাও অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন বলে জানা যায়। ২৩ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ, চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে স্থানীয় জেএম সেন হলে অনুষ্ঠিত নারীদের এক সমাবেশে সভাপতি কবি সুফিয়া কামাল বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করছি, এই সংগ্রাম আমরা চালাবো এবং স্বাধীন বাংলাদেশ অবশ্যই প্রতিষ্ঠা হবে।’ তিনি নারী জাতিকে অবগুণ্ঠন ছিন্ন করে বৃহত্তর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে উদাত্ত আহ্বান জানান। এই সভায় মালেকা বেগমসহ হান্নান বেগম, কুন্তপ্রভা সেন, সীমা চক্রবর্তী, মুস্তারী শফি, শিরীন শরাফুতুল্লাহ প্রমুখ নারী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। জানা যায়, ১৮ মার্চ কাপ্তাইয়ের ললনা সংঘ ইনস্টিটিউটে নারীদের সভায় বঙ্গবন্ধুর দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে সংহতি জানানো হয়। ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নারীদের মিছিল ছাড়াও সাধারণ নারীদের ও কিশোরীদের ৩টি শোভাযাত্রায় প্রবীণ, তরুণী নারীদের ছাড়াও বেশ কিছু কিশোরী এই সমাবেশে হাজির হয়েছিল বলে জানা যায়। এই কিশোরীদের বয়স ছিল ১২ বছরের নিচে।
স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে একাত্তরের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে সাড়া দিয়ে যে অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, সেই বিপুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে।