একাত্তরের এই দিনে- হরতাল অব্যাহত রাখাসহ বঙ্গবন্ধুর ৩৫ নির্দেশ

2107

Published on মার্চ 14, 2021
  • Details Image

১৪ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিনে রাজপথে নেমে আসে। সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিমাল্লাদের দখলে। সামরিক আইনের ১১৫ ধারা জারির প্রতিবাদে সেদিন বেসরকারী কর্মচারীরাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১১৫-এর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানালেও এদিন শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে বলেন, 'বাংলাদেশের মুক্তির স্পৃহাকে স্তব্ধ করা যাবে না। আমাদের কেউ পরাভূত করতে পারবে না, কারণ প্রয়োজনে আমরা প্রত্যেকে মরণ বরণ করতে প্রস্তুত। আমি জনগণকে যে কোনো ত্যাগের জন্য এবং সম্ভাব্য সবকিছু নিয়ে যে কোনো শক্তির মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে আবেদন জানাই।' একাত্তরের এদিনে ‘ওসান হন্ডুরাস’ নামের সমরাস্ত্রবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ১০ নম্বর জেটিতে নোঙর করে। বন্দর শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে সমরাস্ত্র খালাসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সামরিক জান্তারা।

দেশের জনগণকে গণতান্ত্রিক অবস্থা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে খ্যাতিম্যান শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর ‘হেলাল ইমতিয়াজ’ খেতাব বর্জন করার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হয়ে পড়েছে। এদিন জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৪ দফা পূর্বশর্ত মেনে নেয়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকায় সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় উত্তাল হয়ে রাজপথ।

এদিন সকালে আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ও ন্যাপ নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান বৈঠকে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বসার ব্যাপারে শর্তারোপ করেন।

তিনি অবশ্য প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, যদি প্রেসিডেন্টের দাবি পূরণের ইচ্ছা নিয়ে আলোচনায় বসতে চান, তা হলে আমি বসতে পারি। তবে বঙ্গবন্ধু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। কোনভাবেই বৈঠকে তৃতীয় কোন পক্ষ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু।

অন্যপক্ষে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৬ দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ন্যাপ (ওয়ালী) নেতা খান আবদুল ওয়ালী পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একান্তে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাঙালীর আন্দোলন এবং তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন। এ সময় দেশের পত্রিকাগুলোতেও আন্দোলনকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় লেখা চলতে থাকে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন পরিচালনায় ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন। হরতাল অব্যাহত রাখাসহ ওই ৩৫টি নির্দেশের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণের সব দিক সম্পন্ন হয়। নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল ডাকেন। কিন্তু তিনি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, আন্তঃ ও বহির্বাণিজ্য অব্যাহত রাখা, কৃষি ও উন্নয়ন এবং সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে, সড়ক ও নদীপথ; বন্দর, হাসপাতাল ও গণমাধ্যম দেশব্যাপী হরতালের আওতামুক্ত রাখেন এবং সংশ্নিষ্টদের নিজ নিজ কর্তব্য পালনের আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু কেবল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রয়োজনে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ এবং ডাক বিভাগকে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। দেশের জনগণকে যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ কাজে সংশ্নিষ্টদের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত