অপ্রতিরোধ্য বিজয়ে ভেস্তে যেতে থাকে পাকবাহিনীর সব পরিকল্পনা

889

Published on ডিসেম্বর 2, 2020
  • Details Image

‘অনেক যুদ্ধ গেল/অনেক রক্ত গেল/ শিমুল তুলোর মতো সোনা-রুপো ছড়াল বাতাস।/ছোট ভাইটিকে আমি কোথাও দেখি না,/নরম নোলক পরা বোনটিকে/আজ আর কোথাও দেখি না।/কেবল পতাকা দেখি,/কেবল পতাকা দেখি,/স্বাধীনতা দেখি!/তবে কি আমার ভাই আজ ওই স্বাধীন পতাকা?/তবে কি আমার বোন,/ তিমিরের বেদিতে উৎসব?’
[উচ্চারণগুলি শোকের: আবুল হাসান]

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ পৃথিবীকে অবাক করে দেওয়া অমূল্য ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আসা মহান বিজয়ের মাসের দ্বিতীয় দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঘোড়াশালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর চারদিক থেকে আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী। ২৭ সঙ্গীকে প্রাণে হারিয়ে এ স্থান থেকে সরে পড়ে হানাদার বাহিনী। এখান থেকে বেশ কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। এদিকে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এলেও মরণকামড় দিতে ছাড়েনি পাকবাহিনী। বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে এদিন মুক্তিবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায় পাক সেনারা। আক্রমণ মোকাবিলায় মুক্তিবাহিনীও প্রথমে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। এর পর শত্রুসেনাদের ওপর চালায় ত্রিমুখী আক্রমণ। উপায়ান্তর না পেয়ে আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাকবাহিনী।

চট্টগ্রামে এদিন মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান তাদের দখলে আনতে সক্ষম হয়। এদিন পাক কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকার সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর সেকশন কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন এবং ৩নং সেকশন কমান্ডার আবদুল ওয়াহেদের নেতৃত্বে পরিচালিত অতর্কিত আক্রমণে ৩ জন পাক হানাদার এবং ৭ জন রাজাকার নিহত হয় এবং ৭ পাক সেনা আহত হয়। পরে পাক হানাদাররা মৃতদেহগুলো নিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে ভারতের পশ্চিম সীমান্তবর্তী বিমানবন্দরগুলোতে আক্রমণ চালানো এবং পূর্ব-পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীরে স্থল আক্রমণ চালানোর আগে ২ ডিসেম্বর পাক-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রথম ধারা অনুযায়ী ‘আক্রান্ত দেশ’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সামরিক হস্তক্ষেপ চায় পাকিস্তান। পাকিস্তান চেয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর নিয়ে এগিয়ে আসবে যুদ্ধে তাদের সহযোগিতা করতে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না।

পরাজয়ের আভাস পেয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এদিন মরিয়া হয়ে ওঠেন। অন্যতম মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে চিঠি পাঠান তিনি। চিঠিতে যুদ্ধকালীন সাহায্যের আশায় ১৯৫৯ সালের পাক-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির একটি অনুচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন ইয়াহিয়া।

অন্যদিকে সীমান্ত এলাকায় পাক জান্তারা সমরসজ্জা বৃদ্ধি করায় ভারতও তা মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এদিন পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতারা পাকিস্তানের অখ-তা রক্ষার লক্ষ্যে অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে ভারতে আক্রমণ চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে আবেদন জানান।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এদিন কংগ্রেস পার্টির কর্মিসভায় ভাষণ দানকালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেই লাখ লাখ বাঙালি তাদের নিজ দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে।

ডিসেম্বরের এক একটি দিন যায় আর বাঙালির অপ্রতিরোধ্য বিজয়রথে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর সব পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে থাকে...

সৌজন্যেঃ আমাদের সময়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত