৭১ সালের কথা ভুলতে পারেনি বিনোদবাড়ির মানুষ

2718

Published on ডিসেম্বর 8, 2019
  • Details Image

স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালের সেই দিনের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা এখনও ভুলতে পারেনি বিনোদবাড়ি গ্রামের মানুষ। সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আঁতকে ওঠেন তারা। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৮ বছরেও সেই দিনের ক্ষত শুকায়নি তাদের। ওই সময় একই পরিবারের আটজনসহ তিন গ্রামের ২৬৫ জনকে হত্যা করা হয় একই দিনে। মায়ের কোলে থাকা দুধের শিশুও রক্ষা পায়নি তাদের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে। পুকুরে ঝাঁপ দিয়েও বাঁচতে পারেনি গ্রামবাসী। গুলিতে গুরুতর আহতরা এখনও ক্ষতের ব্যথায় চোখের পানি ঝরাচ্ছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে সেই দিনের ঘটনাই ছিল মুক্তাগাছায় সবচেয়ে ভয়াবহ।

১৯৭১ সালের ২ আগস্ট সকাল ৮টা। গ্রামের বধূরা তখন রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন। আর গৃহকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন ক্ষেত-খামারে। ঠিক এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে গুলি চালিয়ে হত্যা করতে থাকে। এক দিনেই তারা মুক্তাগাছা উপজেলার বিনোদবাড়ি মানকোন, কাতলশা, মির্জাকান্দা ও রুদ্রপুর গ্রামের ২৬৫ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের বাড়িঘর। বিনোদবাড়ি মানকোন গ্রামের নজর আলী মণ্ডলের বাড়িতেই এক পরিবারের আটজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রাণে বাঁচতে বিনোদবাড়ি মানকোনের আলী আকবর মুক্তার বাড়িতে আশ্রয় নেন ২৩ নারী-পুরুষ। তাদের ওই বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করা হয়। মির্জাকান্দা ও কাতলশার ১৪ জন ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বাইশা বিল এলাকায়। সেখানেই তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে গুরুতর আহত হন বিনোদবাড়ি মানকোন গ্রামের নজর আলীর ছেলে জবান আলী। ওইদিন তার চোখের সামনে মা নবীজন বেওয়া, তার কোলে থাকা দেড় বছর বয়সী বোন জুলেখা খাতুন, ভাবি মালেকা খাতুন, ভাতিজি ফেরদৌসী বেগম, চাচি রহিতনসহ পরিবারের আট সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকেও গুলি করা হয়। তিনি গুলির আঘাতে মাটিতে লুটে পড়েন। পাকিস্তানি বাহিনী তাকে মৃত ভেবে চলে যায়। পরে আত্মীয়দের সহযোগিতায় চিকিৎসায় তিনি বেঁচে যান।

যুদ্ধাপরাধী মামলার সাক্ষী আহত জবান আলী বলেন, সেই দিনের ভয়াবহতার কথা এখনও তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কোনো দিন তিনি ওই দিনের কথা ভুলতে পারবেন না। ওই দিনের কথা মনে হলে তার শরীর এখনও কেঁপে ওঠে। স্বজনের কথা মনে পড়লে তিনি নীরবে কাঁদেন।

মুক্তাগাছা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, মুক্তাগাছায় সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছিল বিনোদবাড়ি মানকোনসহ কয়েকটি গ্রামে। এক দিনেই ২৬৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে নজর আলী মণ্ডলের বাড়িতে। একসঙ্গে আটজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইউএনও সুবর্ণা সরকার বলেন, বিনোদাবাড়ি মানকোন গ্রামের বর্বরোচিত ঘটনার কথা ইতিহাস হয়ে থাকবে। তাদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যদের পর্যায়ক্রমে সরকারি সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ জন্য তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সৌজন্যেঃ দৈনিক সমকাল

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত