7595
Published on মার্চ 11, 2018তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বের অন্যতম, যদিও তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ নেই। দূর থেকেই তাঁকে ভালোবাসি। ভালোবাসি এ জন্যে যে, তাঁর মনোজগতে লাল-সবুজ পতাকা এবং মুখে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় উচ্চারণ। তিনি আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বাধীনতা ও প্রগতিবিরোধী জঙ্গী অপশক্তি তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আঘাত করেছে। আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। তাঁর সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখাটি শুরু করলাম।
শুরুতে আমি সশ্রদ্ধ সালাম জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি সর্বোচ্চ টেককেয়ার করেছেন জাফর ইকবালের। তাঁকে দেখতে গেছেন হাসপাতালে। এই-ই শেখ হাসিনা, এই-ই জাতির পিতার কন্যা।
আরেকটি কারণে শেখ হাসিনাকে সশ্রদ্ধ সালাম ও অভিনন্দন জানাই এ জন্যে যে, এবারের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস উপলক্ষে সোহারওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত বিশাল জনসভায় অসাধারণ একটি ভাষণ দিয়েছেন। এবারের ৭ মার্চের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি এ জন্যে যে, ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে (ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) স্বীকৃতি দিয়ে রেজিস্ট্রি করেছে। যে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মানুষের ঢল নেমেছিল। মানুষের ঢল মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা যখন বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের যে স্থানটিতে মঞ্চ করে বঙ্গবন্ধু ভাষণটি দিয়েছিলেন মিলিটারি ডিক্টেটার জিয়া সে স্থানটি ভুলিয়ে দেওয়ার জন্যে সেখানে শিশুপার্ক বানিয়েছেন, যাতে কেউ হাত দিতে না পারে। ডিক্টেটার জিয়া এই ভাষণ যাতে না বাজানো যায় বা না বাজে সে জন্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তারপরও বাংলার মানুষ এই ভাষণ বাজিয়েছে- ৭ মার্চ ভাষণ; ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মদিন; ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস; ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শাহাদাৎ দিবস; ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ও জাতীয় দিবস। যার জন্যে ডিক্টেটার জিয়ার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে আমাদের নেতা-কর্মীদের, বাংলার জনগণকে। গ্রামীণ জীবনের সাধারণ মানুষও ঝুঁকি নিয়ে বাজিয়েছে। নির্যাতনের পরোয়া করেনি। যারা এই ভাষণ মুছে দিতে চেয়েছিল, যে মিলিটারি ডিক্টেটর ভাষণ বাজানোর দায়ে নির্যাতন চালিয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি তথা প্রামাণ্য ঐতিহ্যের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তি তাদের জন্যে উপযুক্ত চপেটঘাত। আরও কিছু থাকলে তাও। শেখ হাসিনা যখন ৭ মার্চের ভাষণের দার্শনিক বিশ্লেষণ করছিলেন তখনও লাখো জনতা ছিল উত্তাল। মুখে সেøাগান ছিল ‘শেখ হাসিনাকেই চাই, শেখ হাসিনার সমকক্ষ কেউ নাই’, ‘যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা- শেখ হাসিনা।’
তখন দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করি। মেইনলি পলিটিক্স এ্যান্ড পার্লামেন্ট কাভার করতাম। ৭ মার্চের মতো দিবসগুলো রাইট-আপ আমাকেই লিখতে হতো। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ছিল তখনকার এক্সিকিউটিভ ও নিউজ এডিটর আসফ-উদ-দৌলা রেজা (মরহুম) বা চীফ সাব (বর্তমান সমকাল সম্পাদক) গোলাম সারওয়ার কপি এডিট করলে এক রকম এবং তাদের অনুপস্থিতিতে তখনকার শিফট ইনচার্জ আবদুল বাতেন দেখলে অন্যরকম হতো। বাতেন ভাই চেষ্টা করতেন যেভাবেই হোক বিএনপির প্যারালাল করে দাঁড় করাতে। এমনকি বিএনপির কিছু না থাকলে তিনি টেলিফোন করে একটা নিউজ বানিয়ে পাশাপাশি ছেপে দিতেন। ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘জাতির পিতা’ শব্দাবলীর ওপরও ডিক্টেটারের আপত্তি ছিল। তবে স্বীকার করতেই হবে এসব ক্ষেত্রে সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (বর্তমান মন্ত্রী) আমাদের প্রটেকশন দিতেন। এই ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েও অনেক কথা আছে। যেমন- বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ কে খন্দকার তাদের কেতাবে উল্লেখ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু নাকি ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় বাংলা’ ‘জয় পাকিস্তান’ (?) বলে। এটি একেবারেই ডাহা মিথ্যা তথ্য। এর প্রতিবাদে আমি আর্টিক্যাল লিখে প্রশ্ন করেছিলাম, ৭ মার্চের সেই জনসমুদ্রে আপনারা উপস্থিত ছিলেন কি-না জানি না, যৌক্তিক কারণেই আপনাদের থাকার কথা নয়। কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম এবং ভালভাবে শুনেছি বঙ্গবন্ধু শুধু ‘জয় বাংলা’ বলেই ভাষণ শেষ করেছেন, ‘জয় পাকিস্তান’ বলেননি। ক্যানোইবা বলবেন? তখন তো সেøাগান ছিল ‘জিন্নাহ মিয়ার পাকিস্তান- আজিমপুরের গোরস্তান’, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ আর নিরস্ত্র বাঙালীও তখন মানসিকভাবে সশস্ত্ররূপে তৈরি হচ্ছিল। তাছাড়া (প্রথমত) যে মানুষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হয়ে (১৯৪৭) সেখানে স্নাতকোত্তর ক্লাসে ভর্তি না হয়ে বাঙালীর আপন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন, যার মনোজগতে স্বাধীন বাংলা, তিনি বলবেন জয় পাকিস্তান? এই কথাটি যারা বলেন তারা বুদ্ধিজীবী হলেও বঙ্গবন্ধু কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন তা তারা বুঝতে পারেননি কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা খালেদা জিয়ার মতো মতলববাজরাও। অবশ্য আমার লেখার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান পরে এডিশনে ‘জয় পাকিস্তান’ বাদ দেন; কিন্তু মিলিটারি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বাদ দিয়েছেন বলে খবর পাইনি।
দ্বিতীয়ত. দুর্মুখদের আরেকটি অভিযোগ হলো বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ও চূড়ান্ত ঘোষণা দেন “This may be my last message, from today Bangladesh is independent”-এ ঘোষণা কেন ৭ মার্চ দিলেন না। মূর্খ এবং জ্ঞানপাপীদের কি করে বোঝাব যে, ৭ মার্চও তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এমন ভাষায় যে, তাতে সাপও মরেছে লাঠিও ভাঙ্গেনি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী, তাই তিনি এডভেঞ্চারিজম করে বিচ্ছিন্নতাবাদীর অপবাদ লাগতে দেননি। বঙ্গবন্ধু হলেন বাঙালীর শুধু নয়, বিশ্বের তাবৎ নিপীড়িত মানুষের বিপ্লবী মহানায়ক। বস্তুত বিএনপির গর্ব করার কিছু নেই, মিলিটারি ডিক্টেটার নামে যেটুকু পেয়েছিল তাও অশিক্ষিত ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্ব এবং রাজাকার-আলবদরদের আঁচলে বেঁধে খুইয়েছে। এখন শূন্যের কোঠায়, এটি পূরণ হবে না।
এটি স্বীকৃত যে, ৭ মার্চের ভাষণটি এক অসাধারণ মহাকাব্য। এর রাজনৈতিক দর্শন থেকে গেরিলা ওয়ার ফেয়ার বা যুদ্ধকালীন প্রশাসন, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, অসাম্প্রদায়িকতা সবই এর মধ্যে ছিল। এমনকি যুদ্ধ শুরুতেই স্বাধীনতার ইশতেহার বা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানও রচিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভিত্তিতেই। এসব বিএনপির কানে ঢুকবে না। এমনকি বিএনপি বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিনেরও না। ক’দিন আগে কাগজে দেখলাম তিনি আফসোস করেছেন তিনি তার ছাত্র ওবায়দুল কাদেরকে মানুষ করতে পারেননি। পারবেন কি করে? যার আদর্শ খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান তিনি তো ভাল কিছু দেখবেন না। দেখবেন কেবল হাওয়া ভবন আর শিপন শাড়ি।
আধুনিক কবিতার ভাষা বিশ্লেষণে বলা হয়- একটি শব্দও অতিরিক্ত স্থান পায় না বা একটি কম হয় না। বঙ্গবন্ধু ভাষণটি শুরু করেন তাঁর জাতির প্রতি স্বভাবজাত আহ্বান:
ভায়েরা আমার
আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে
হাজির হয়েছি
আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন।
আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।
আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়
বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়
বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়
কী অন্যায় করেছিলাম?
(এই কয়েকটি লাইনের মাধ্যমে তিনি বাঙালী জাতির ওপর চলে আসা হাজার বছরের নির্যাতন বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন। এখানে কবিতার মতই প্রতিটি শব্দ চয়ন অনেক অর্থ বহন করে)
লক্ষ্য করুন কত বড় আত্মবিশ্বাসী হলে বলতে পারেন :
সেক্রেটারিয়েট চলবে না
সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্ট চলবে না
গরিবের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্যে রিকশা গরুর গাড়ি চলবে
রেল চলবে
লঞ্চ চলবে
২৮ তাং কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন
পূর্ব বাংলা থেকে কোন টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে যাবে না
আমার কথা না শুনলে কেউ খাজনা-ট্যাক্স দেবেন না, বন্ধ করে দেয়া হলো
রেডিও-টেলিভিশনে আমার কথা প্রচার না করলে কেউ সেখানে যাবেন না
(বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশ রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত পালিত হয়েছে। কেউ কোন প্রশ্ন করেনি। এমনকি মার্চের অসহযোগের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসভবন বা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে যা বলা হতো, যে সব বিজ্ঞপ্তি-বিবৃতি দেয়া হয়েছে তাও অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে।)
বঙ্গবন্ধু যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন মাথার ওপর ২টি হেলিকপ্টার গানশিপ ঘুরছিল এবং রেসকোর্সের চারপাশের রাস্তায় টহল দিচ্ছিল কামানবাহী গান ক্যারেজ। এর মধ্যে তিনি বলছেন :
১.সামরিক আইন মার্শাল ল’ উইথ ড্র করতে হবে
২. সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে
৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে
৪. জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে
এই ৪টি শর্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, তারপর বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে এসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। জনগণ সে অধিকার আমাকে দেয় নাই।...
আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না
আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই। তারপরই বলছেন,
আর যদি একটা গুলি চলে
আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়
তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল
প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে
এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে
আমরা ভাতে মারব
আমরা পানিতে মারব
তোমরা আমার ভাই
তোমরা ব্যারাকে থাক কেউ তোমাদের কিছু বলবে না
কিন্তু আর আমার বুকে গুলি চালাবার চেষ্টা করো না
ভাল হবে না
সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, সংসদে বসার জন্যে ৪টি শর্ত দিয়ে পরক্ষণেই গেরিলা যুদ্ধের কলাকৌশলগুলো বলে দিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সচিবালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন। একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাঁকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তাঁর সতর্ক দৃষ্টি ছিল। তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গার দায়িত্ব নেননি। তাঁর এই সতর্ক কৌশলের কারণে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা করতে পারেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও শেখ মুজিবকে ‘চতুর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেল, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না।
পরিশেষে একটা কথা বলা দরকার, বিগত ২৫০০ বছরের ইতিহাসের রাজনৈতিক ভাষণের ওপর যে গবেষণা হয়েছে তার মধ্যে ৪১টি ভাষণকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছাড়াও রয়েছে কালো পৃথিবীর নেতা মার্টিন লুথার কিং, আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, মহামতি লেনিন, চেয়ারম্যান মাও সেতুং, এ্যাডওয়ার্ড হিথ, মহাত্মা গান্ধী প্রমুখের ভাষণ। কিন্তু তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পার্থক্য হলো তাদের সবার ভাষণ ছিল লিখিত এবং ঝুঁকিবিহীন। কেবল মার্টিন লুথার কিং-এর ভাষণের প্রথম কয়েকটি বাক্য ছিল অলিখিত, বাকি সব লিখিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছেন বন্দুকের নলের মুখে এবং পুরো ভাষণই ছিল অলিখিত (extempore)। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যতবার বাজানো হয়েছে বা মানুষ শুনেছে অন্য কারও ভাষণ তার ধারে কাছেও নেই। এটি লক্ষবারও হতে পারে কোটিবারও হতে পারে। গবেষণা করাও অসাধ্য। এখানেই বঙ্গবন্ধু অনন্য, বিশ্বের সেরা বিপ্লবী নেতা, দার্শনিক।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
প্রকাশকালঃ ৮ মার্চ ২০১৮
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ