1128
Published on জুলাই 27, 2022নদীমাতৃক বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য বর্ষাকাল যেনো এক আশীর্বাদ। বর্ষার বারিধারায় বহমান পলিতে উর্বর হয়ে ওঠা জমিনেই ফলে সারা বছরের ফসল। অর্ধশতাব্দী আগের কথা বলছি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সময়টা ১৯৭১ সাল, বাঙালি জাতির চূড়ান্ত প্রসববেদনার কাল। ১৯৭১-এর বসন্তকালে পাকিস্তানি জান্তাদের গুলির শব্দে ঢাকা পড়েছিল কোকিলের কুহু তান, বাঙালির বুকের তাজা রক্তে রক্তিম রাজপথে ম্লান হয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণচূড়ার রঙ। কিন্তু 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগানের বীজমন্ত্র জঁপে তাপদহ গ্রীষ্মের উত্তপ্ত আবেগ নিয়ে ঘাতক জান্তাদের সপাটে জবাব দিতে শুরু করে বাংলার দামাল সন্তানরা। এতে নতুন মাত্রা এনে দেয় বর্ষাকাল। আষাঢ়-শ্রাবণের অবিরত বৃষ্টিধারায় হতচকিত হয়ে পড়ে আক্রমণকারী পাকিস্তানি ঘাতকরা। সেই সুযোগে গাছে গাছে আসা নতুন কিশলয়ের মতোই নবউদ্যমে মাঠ-ঘাট-প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা। বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য বাংলাদেশের প্রসববেদনা যখন চরমে, ঠিক এরকম একটি সময়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয় কামনা করে তিনি সন্তানের নাম রাখেন 'জয়'।
১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই, ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে বন্দি অবস্থায় জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাবেক ডাকসু নেতা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার এই সন্তান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের প্রতীক। পরবর্তীতে তার হাত ধরেই ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ। তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যেমন হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছে বাঙালি জাতি, তেমনি তার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনের কারণে গড়ে উঠেছে ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলাদেশ, সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখানোর পথে ধাবমান ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। সোনার বাংলা থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিযাত্রা এবং মুজিব থেকে সজীব- একই সূত্রে গাঁথা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা:
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল যে শব্দটি, তা হলো 'জয়'। তেমনি স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী অতিক্রম করে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে- আধুনিক বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনার সঙ্গে যে নামটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে, সেই নামটিও 'জয়'। কারণ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রদর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণমানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা; সেইসব দূরদর্শী ও সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের মা ও দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বোতভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও বঙ্গবন্ধুকন্যার পুত্র হিসেবে দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার কারণেই বাস্তবায়িত হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। ফলে শুধু কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে, তথ্যপ্রযুক্তির নতুন খাত সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মানুষের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত হতে যাচ্ছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারণে সৃষ্ট এই নতুন সেক্টরটি।
শুধু অর্থনীতি নয়, যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছে তথ্যপ্রযুক্তি। করোনা মহামারির সময়েও ইন্টারনেটের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এই ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করেই দেশে তৈরি হয়েছে লাখ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান। মানুষকে স্বাবলম্বী করতে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুপরিকল্পিতভাবে পর্দার অন্তরালে কাজ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত সজীব ওয়াজেদ জয়।
মুজিব থেকে সজীব:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি শিক্ষিত, মার্জিত, স্বাবলম্বী বাঙালি জাতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার পর এজন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, একদল ঘাতকের হাতে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ায় সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন ভেঙে যায়। এরপর দীর্ঘ দুই দশক অপশাসনের কালো অন্ধকারে ঢেকে থাকে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাঙালি জাতি। এমনকি বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। হন্তারকদের হুংকারের মুখে ইউরোপ-ইন্ডিয়া-আমেরিকা ঘুরে ঘুরে বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর বড় নাতি। হ্যাঁ, সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথাই বলছি।
জীবনের এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার আদর্শে জনগণের সেবক হিসেবে বেড়ে উঠেছেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতার মাধ্যমেই আমেরিকার বুকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই দেশকে ডিজিটাল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার সুপরামর্শ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। সবার জানা উচিত যে, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলে থাকা অবস্থাতেই ২০০৭ সালে নিজ গুণের জন্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে নির্বাচিত হন সজীব ওয়াজেদ জয়।
১৯৭৫-পরবর্তী নির্বাসিত জীবনে ভারত থেকে লেখাপড়া করে স্নাতক অর্জন করেন তিনি। এরপর উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে আবারও স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন। ফলে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি রাজনীতিতেও তার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। ২০১০ সালে দাদার বাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। সেই থেকেই তথ্যপ্রযুক্তি ও রাজনীতি- দুটোকেই গণমুখী ও কল্যাণকামী করে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আধুনিক বাংলাদেশের তারুণ্যের জন্য উন্নয়নমুখী রাজনীতির নতুন ধারা চালু হয়েছে তার হাত ধরেই।
জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ শান্তি-সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা অর্জনের পথে হেঁটে চলবে- এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন যিনি; সেই স্বপ্নপথিকের নাম সজীব ওয়াজেদ জয়। মুক্তিযুদ্ধের বারুদমাখা বাতাসে গায়ে মেখে যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, ঠিক অর্ধ শতাব্দী পর বাংলাদেশের উন্নয়নের পালে তিনিই দিচ্ছেন নতুন হাওয়া। তাকে আইকন মেনেই নতুনপ্রজন্মের প্রতিটি সন্তান গড়ে উঠুক সক্ষম ব্যক্তি হিসেবে, তাতে নিজ পরিবার ও সর্বোপরি বাংলাদেশ উপকৃত হবে।