শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের পুনর্জন্ম

889

Published on মে 17, 2022
  • Details Image

একেএম এনামুল হক শামীম:

আজ থেকে ৪১ বছর আগে ৬ বছর নির্বাসিত থেকে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলায় আলোর মশাল হাতে কাণ্ডারি হয়ে স্বদেশের মাটিতে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই পুনর্জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চার দশক আগে যদি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা না ধরতেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে বাংলাদেশের আজকের এই অগ্রগতি ছিল সুদূরপরাহত। আওয়ামী লীগের গণমুখী রাজনীতি থাকত না। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হতো না, গণতন্ত্র আসত না। বিচার হতো না বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অসম্পন্ন থাকত যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান করেছেন। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না এলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পাওয়া যেত না। তিনি হাল না ধরলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতো। দেড় লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পাকা বাড়িসহ ঘর পেত না। আমাদের সৌভাগ্য আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য, সৎ,সাহসী, কর্মঠ নেতা পেয়েছি।

শেখ হাসিনা সেই নেত্রী যিনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠান, আবার সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত ও অসহায় মানুষের মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ করে দিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তিনি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবেন না, ভবিষ্যত তাঁর ভাবনায় থাকে। এখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যদের থেকে আলাদা। মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, হাওড়ের মানুষকে হাসিমুখে ফসল ঘরে তোলার জন্য তিনি স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করছেন। শেখ হাসিনার হাত ধরে অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি হয়েছে। সমাধান হয়েছে সিট মহল সমস্যার। আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে বিশাল সুনীল অর্থনীতির আধার অর্জিত হয়েছে। জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে ছাত্ররাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনও এসেছে। উন্নত ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য তিনি ডেল্টাপ্ল্যান।

১৯৮১ সালের ১৭ মে, দিনটি ছিল রবিবার। সেদিন ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়াতেও মানুষের গতি ঠেকানো যায়নি। জাতির পিতার কন্যাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল। বয়সের কারণে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে দেখেছিলাম লাখো জনতার মধ্যে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালী জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’

শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। শান্তির অগ্রদূত শেখ হাসিনা দেশের মানুষের জন্য নিজের প্রাণকে তুচ্ছ করতে পারেন নির্দ্বিধায়। ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি ও হুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক তিনি। তাঁকে কেন্দ্র করে এবং তাঁর নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই মনে করিয়ে দিচ্ছে শেখ হাসিনা প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন; সঙ্কট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে এই দীর্ঘ সময় দলের প্রধানের দায়িত্বে থেকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর সফল নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। তাঁর শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। তার হাত ধরেই ডিজিটাল হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন। এজন্য তাঁকে দুটি সামরিক জান্তার এবং একটি অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিক পথে, বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে সরাতে হয়েছে। শেখ হাসিনা নীতির সঙ্গে আপোস করলে অনেক আগে ক্ষমতায় আসতে পারতেন। তিনি ক্ষমতার জন্য নেতিবাচক রাজনীতির পথে কখনও এগোননি। তিনি তাঁর জীবনে কোন বাঁকা পথ, কোন প্রলোভনকে প্রশ্রয় দেননি। জনগণকে নিয়ে, জনগণের ভালবাসা নিয়ে, নিয়মতান্ত্রিক পথে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনায় এসেছেন। তিনিই এদেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অগ্রদূত। তিনি যে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’- এটি তাঁর প্রতিটি কাজে উদ্ভাসিত নিরন্তর।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে বারবার বিপদ এবং মৃত্যুর ঝুঁকি তাড়া করেছে। ২১ বার তাঁকে হত্যার অপচেষ্টা চলেছে। ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি একজন পরিণত মানুষ। তিনি কেবল দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নন, সরকারপ্রধান হিসেবেও বেশি সময়ের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। এবার তিনি টানা তিনবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই মেয়াদ শেষ হলে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ২০ বছর পূর্ণ হবে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শেখ হাসিনাই হতে চলেছেন বিশ্বে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি এখন একদিকে যেমন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, একই সঙ্গে তিনি একজন বিশ্বনেতা। তাঁর প্রশংসায় অকুণ্ঠ অনেক দেশের সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসন লাভ করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জনগণের ভালবাসা নিয়ে তিনি টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।

আমার সৌভাগ্য ১৯৮৪ সাল থেকে শেখ হাসিনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জাকসুর ভিপি, ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর কাছ থেকে কাজ করেছি। তাঁকে দেখা ও বোঝার সৌভাগ্য হয়েছে। খোলা বইয়ের মতো তাঁর রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের কোন ক্লান্তি নেই। অনীহা নেই। আছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতি। তাঁর সারল্য শিশুর মতো। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকেন। তিনি নিজে যেমন পড়াশোনা করেন, আমাদেরও পড়ার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। তিনি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। তিনি নিজের ছেলেমেয়ের মতোই ভালবাসেন দলীয় কর্মীদের। অসহায় বিপন্ন মানুষের কাছে ব্যাকুল চিত্তে তিনি ছুটে যান মানবিক হৃদয় নিয়ে। পাশে দাঁড়ান মায়ের ভূমিকায়। তিনি স্নেহশীল মা, কর্মীবান্ধব সভানেত্রী, প্রাজ্ঞ দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেত্রী। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিরন্তর পথ চলছেন। দেশের স্বার্থে আপোসহীন দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। এজন্য নিশ্চয়ই ইতিহাস তাঁকে অমরত্ব দেবে।

লেখক : সংসদ সদস্য, উপমন্ত্রী, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত