1597
Published on মে 7, 2022ড. মিল্টন বিশ্বাস:
পনের বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের কাছ থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য রটিয়েছিল দুর্নীতির বদনাম। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন তিনি। যাতে দেশে ফিরতে না পারেন সেজন্য করা হয়েছিল সকল আয়োজন। নানা ধরনের হুমকিও দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ৭ মে তিনি সবকিছুকে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করার জন্য সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরেছিলেন। তিনি ফিরে না এলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কে সরকার গঠন করত- আমাদের জানা নেই। তিনি না ফিরলে এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হতো না। মহিমান্বিত রূপ দেখা যেত না ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের মুজিববর্ষ পর্যন্ত তাঁর নেতৃত্বের । তিনি ফিরে এসে হাল ধরেছিলেন গণতন্ত্রের। গত ১৩ বছর দেশের উন্নয়ন আকাশ ছুঁয়েছে। তাঁর অসীম সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়েছে অনেক দূর। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তন দিবস তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এটি ছিল তাঁর প্রথম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন; তখন থেকেই বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ঘটে। তাঁর ফিরে আসার পর বাংলাদেশ পুনরায় বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। ৪১ বছর পূর্বে তাঁর প্রত্যাবর্তন ছিল অতি সাধারণ, কারণ সেভাবেই তিনি দেশের জনগণের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি এক বৃহৎ শূন্যতার মাঝে এসে দাঁড়ালেন। এখানে তাঁর ঘর নেই, ঘরের আপনজনও কেউ নেই। তাই সারাদেশের মানুষ তাঁর আপন হয়ে উঠল। তিনি ফিরে আসার আগে ছয় বছর স্বৈর শাসকরা বোঝাতে চেয়েছিল তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। সাধারণ মানুষ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছিল, বিচার দাবি করছিল জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের। সেনা শাসকের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের শাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতির মাঠে রাতদিনের এক অক্লান্ত কর্মী হয়ে উঠলেন শেখ হাসিনা। তিনি নেতা, কিন্তু তারও বেশি তিনি কর্মী। দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা তাঁর প্রাত্যহিক কর্মে পরিণত হলো। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় আবেগসিক্ত বর্ণনা আছে তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থগুলোতে। তুলে ধরছি একটি উদ্ধৃতি : ‘আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লক্ষ মানুষের স্নেœহ-আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। যাঁদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ ছাড়ার সময়, আমার সেই অতি পরিচিত মুখগুলি আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল।’ (ড. আবদুল মতিন চৌধুরী : আমার স্মৃতিতে ভাস্বর যে নাম, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, পৃঃ ৭৪)।
রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন রাজনীতিসচেতন। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১৯৮১ সালের ১৭ মে) আগে ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে তাঁর সাক্ষাতকার থেকে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চের সামরিক শাসন জারির দুদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি সামরিক শাসন মানি না, মানব না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবই করব।’ তাই তো কবি ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ’।
শেখ হাসিনার প্রথম প্রত্যাবর্তনের আগে নৈরাজ্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল মানুষ। তেমনি ২০০৭ সালের ৭ মে’র আগে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে, মামলা-মোকাদ্দমা করে রাজনীতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পর্যন্ত একাধিকবার বন্দী অবস্থায় নিঃসঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে তাঁকে। তিনি লিখেছেন- ‘দেশ ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষাদীক্ষা তো আমার রক্তে প্রবাহিত। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর পর প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার জীবনের অনিশ্চয়তা ভরা সময়গুলোয় আমি তো দেশের কথা ভুলে থাকতে পারিনি? ঘাতকদের ভাষণ, সহযোগীদের কুকীর্তি সবই তো জানা যেত।’ (নূর হোসেন, ওরা টোকাই কেন, পৃঃ ৫৩) ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে দেশে তখন শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চলছিল। দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল, রাজনীতিবিদদের বিশেষ আইনে কারান্তরীণ করে রাখা হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের পথ সুগম হয় শেখ হাসিনার আগমনে।
২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৩৩১ দিন কারাগারে বন্দী করে রাখে। সে সময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা, দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্য কথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ।
ধৈর্য ও সাহসের প্রতিমূর্তি শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, কৃষকরত্ন, জননেত্রী- বহুমাত্রিক জ্যোতিষ্ক। তাঁকে কেন্দ্র করে, তাঁর নেতৃত্বে আবর্তিত হচ্ছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই মনে করিয়ে দিচ্ছে শেখ হাসিনা প্রকৃতপক্ষে আলাদা, ভিন্ন, স্বতন্ত্র ও নেতৃত্বের গৌরবজনক আসনে সমাসীন। তিনি জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করেছেন, সঙ্কট উত্তরণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। তিনি জনতার আকাক্সক্ষাসমূহ এবং টিকে থাকার বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধনের সাহায্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যে বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ১৯৭৪ সালে মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাস্তবতায় ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এ ধরনের মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে পরামর্শ দেন বাংলাদেশকে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা না করার। তাদের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের পরও বাংলাদেশ আজ গৌরবজনক অবস্থানে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনার শাসনামলেই কিসিঞ্জারের পরবর্তী নেতৃবর্গ ভিন্ন সুরে কথা বলে গেছেন। ‘এশিয়ার টাইগার’ তথা বাংলাদেশ এশিয়ার একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে ‘নাম্বার ওয়ান উন্নয়নমুখী দেশ’ বলেছেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি।
গত ১৩ বছরের শাসনামলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে দেয়া ছিল শেখ হাসিনার একটি অনন্য কাজ। আধুনিক সিঙ্গাপুরের ‘উন্নয়নে’ প্রয়াত লি কুয়ান ইউ সরকারের নেতৃত্বের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের তুলনা করা হয়। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মহাম্মদ ১৯৮১ সাল থেকে পাঁচের অধিক সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। এশিয়ার এই দুই নেতাই দুটি দেশের প্রধান হিসেবে সকলের কাছে সম্মানীয়। লি সিঙ্গাপুরের প্রথম তিন দশকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একটি দরিদ্র বন্দরকে তৃতীয় বিশ্বের তলানি থেকে মাত্র এক প্রজন্মের চেষ্টাতেই প্রথম বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একনাগাড়ে ৩০ বছর (১৯৯০ সাল পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা ওই দুই শাসকের মতো আরও সময় পেলে এদেশের মানুষকে অধিকতর উত্তম জীবনব্যবস্থা দিতে পারবেন। বর্তমান মানুষ যে অধিকতর সম্মান ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ চায় শেখ হাসিনা তা ভালই জানেন।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম, যাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে গেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জেল হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সব বিরূপ পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদার বানিয়ে ফেলেছেন রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশকে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়েছে। পূর্বমুখী কূটনীতির অংশ হিসেবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর সরকারের উন্নয়নের মডেল অন্যান্য দেশের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্যই চীন-জাপান-ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের সকল নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
২০২০ সালে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’। অন্যদিকে ব্রিটেনের ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ মহামারীর মধ্যেও এদেশের অর্থনীতির নিরাপত্তা বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। আবার ২০২২ সালের প্রথম মাস থেকেই ভ্যাকসিন হিরোর দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কারণ সকল কুসংস্কার ও অপপ্রচারমুক্ত হয়ে দেশের মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহী করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে একাধিকবার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১৬ আগস্ট জননেত্রীর ওপর ঢাকায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর বাসভবন আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে একটি বিরাট মিছিল নগরীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৪০ জন নিহত হন। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির ক্যাডাররা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় ধানমন্ডিতে তাঁর ওপর বন্দুকধারীরা রাসেল স্কোয়ারে আক্রমণ চালায়। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনে ভ্রমণকালে ঈশ্বরদী ও নাটোরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা জননেত্রীর ওপর গুলিবর্ষণ করেছিল। ২০০০ সালের ২০ জুলাই পূর্ব নির্ধারিত জনসভাস্থল কোটালিপাড়া থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি বিস্ফোরকের বোমা উদ্ধার করা হয়। ২০০৪ সালের ৫ জুলাই তুরস্কে সফরের সময় জননেত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল ভয়াবহতম দিন। গ্রেনেড নিক্ষেপের পরও নেতাকর্মীদের মানবঢালের বেষ্টনীর কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকির মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। করোনাকবলিত হয়েও বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। সামনে বাধা এলে তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলায় সচেষ্ট থাকতে হবে। ’৭১-এর পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা ও স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা জীবিত রয়েছেন। তিনিই তাঁর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
২০০৭ সালের ৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তিনি ‘আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি। বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন; সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন। তাঁর সেই আদর্শিক ধারায় স্নাত হয়ে শেখ হাসিনা মেধা ও দূরদর্শিতাসম্পন্ন রাজনীতিক হিসেবে জনগণের ভাগ্য বদলে দিতে শুরু করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশা সকলের।
লেখক : কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ