যে ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক

999

Published on মার্চ 7, 2022
  • Details Image

বিভুরঞ্জন সরকারঃ

১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিনেই স্পষ্ট হয়েছিল যে বাঙালি আর পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে রাজি নয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা বেতারে প্রচার হয়েছিল দুপুর ১টা ৫ মিনিটের খবরে। খবর শেষ হওয়ার পরই বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। স্লোগান ওঠে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।

সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরই পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার প্রধান হওয়ার কথা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছাড়তে অনিচ্ছুক ছিল। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াসহ সামরিক চক্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে হাত মেলান পাকিস্তানের পশ্চিম অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকতে বিলম্ব করায় বঙ্গবন্ধু এবং তার সহকর্মীদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না’। তারাও ভেতরে ভেতরে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন।

সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল না, তা নয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পর শাসকগোষ্ঠীর গণবিরোধী ভূমিকা স্পষ্ট হতে বেশি সময় লাগেনি। তারা বাঙালির স্বার্থবিরোধী ছিল। বাঙালি শুরু থেকেই বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। সেটা ভাষার প্রশ্ন থেকে শিক্ষা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই বিস্তার লাভ করেছিল। সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপর ভরসা রেখে বৈষম্য-বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছে অকৃপণভাবে। এটা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর প্রতি বাঙালির ‘রেড সিগনাল’ বা সতর্ক সংকেত। কিন্তু তারা সতর্ক না হয়ে উল্টো পথে হেঁটে পাকিস্তানের মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তাই বাঙালির রণহুংকার ধ্বনিত হয়েছে ‘ইয়াহিয়ার মাথায় লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। মার্চের ১ তারিখ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত মিছিল বিক্ষোভ ধর্মঘট হত্যা নির্যাতনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পাকিস্তানের পূর্বাংশে কেন্দ্রীয় শাসন অকার্যকর হওয়ার সব লক্ষণ পরিষ্কার হয়ে ওঠে। শেখ মুজিবের নির্দেশ হতে থাকে মানুষের কাছে অবশ্য পালনীয় বিষয়। এই অবস্থায় আসে ৭ই মার্চ। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আওয়ামী লীগের জনসভায় উপস্থিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বিকেলের দিকে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু দিলেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। ভাষণের প্রতিটি কথা তার হৃদয় থেকে উৎসারিত। প্রতিটি শব্দ তার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস থেকে উচ্চারিত। এই প্রেরণাদায়ক ও ঐতিহাসিক ভাষণটিকে ইউনেসকো ২০১৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে গ্রহণ করে।

বক্তৃতা শোনার জন্য সকাল থেকেই রেসকোর্স ময়দানে জমায়েত হতে থাকে হাজার হাজার মানুষ, শুধু ঢাকা শহর নয়, আশেপাশের এলাকা থেকেও আসতে থাকে জনতার স্রোত। বঙ্গবন্ধু যখন সভামঞ্চে এসে উপস্থিত হন তখন রেসকোর্স পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধু উপস্থিত জনতার মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যেই মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে জলদগম্ভীর কণ্ঠে ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে সম্বোধন করে সবাইকে আপন করে নেন এবং জনসভায় তার উপস্থিতির কারণ যে কারো অজানা নয়, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে।”

মানুষ কী চায়- তারও উল্লেখ করেন শুরুতেই। বলেন, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈয়ার করব এবং এই দেশকে আমরা গড়ে তুলব, এ দেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তেইশ বৎসরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। তেইশ বৎসরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস; বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করে দশ বৎসর পর্যন্ত আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে ৭ই জুনে আমার ছেলেদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর যখন ইয়াহিয়া খান সাহেব সরকার নিলেন, তিনি বললেন, দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন, গণতন্ত্র দেবেন। আমরা মেনে নিলাম।”

নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তারপরে অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি, শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসবো’।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। যুক্তিসঙ্গত কথায় তার আস্থার কথা ব্যক্ত করে বলেন, ‘অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো; এমনকি আমি এ পর্যন্ত বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও, একজনও যদি সে হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব’।

পরিষদ অধিবেশন আকস্মিক স্থগিত হওয়া ও পরের অবস্থা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু বলেন,

“ইয়াহিয়া খান সাহেব প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম যে আমি যাবো। ভুট্টো সাহেব বললেন, তিনি যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে আসলেন। তারপরে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো। দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষকে, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। বন্দুকের মুখে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠল।”

পাঠক লক্ষ করুন, চরম উত্তেজনাকর অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রেখে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোকে ‘সাহেব’ বলেই সম্বোধন করেছেন।

বঞ্চিত বাঙালির প্রতি শাসকদের নিষ্ঠুরতার কথা তিনি অল্প কথায় তুলে ধরে বলেন, “কী পেলাম আমরা? যে আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী আর্ত মানুষের বিরুদ্ধে, তাঁর বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু। আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। টেলিফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের ওপরে, আমার বাংলার মানুষের ওপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।

আমি বলেছি, কিসের বৈঠক বসবে, কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব? হঠাৎ আমার সঙ্গে পরামর্শ না করে পাঁচ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে বক্তৃতা তিনি করেছেন, সমস্ত দোষ তিনি আমার ওপরে দিয়েছেন, বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন।”

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পরিষদ অধিবেশন নতুন করে আহ্বান করার প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, “২৫ তারিখে অ্যাসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি যে ওই শহীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে কিছুতেই মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছে। আমার দাবি মানতে হবে: প্রথম, সামরিক আইন মার্শাল ল উইথ্ড্র করতে হবে, সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে, যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে, আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব, আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর পূর্বে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না।”

বঙ্গবন্ধু জানতেন, শাসকরা যুক্তির ভাষা বোঝে না, শক্তির ভাষা বোঝে। তার শর্ত ইয়াহিয়া মানবেন না। তাহলে কী হবে? জনগণের করণীয় কী? বঙ্গবন্ধু দিলেন নির্দেশনা। বললেন, “আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু, আমি যদি হুকুম দিবার না-ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব।”

এই কয়েকটি বাক্যের মধ্যে অনেক কিছু তিনি বলেছেন। তিনি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। রাজনৈতিক নির্দেশনা দেওয়ার সময় তিনি না-ও পেতে পারেন। তাই তিনি ‘হুকুম দিবার’ না পারলেও জনতাকে করণীয় বলে দিলেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে যার যা আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেন। পরের লড়াইটা যে সহজ ও দ্রুত শেষ হবে না, আবার একটি সংগঠিত সামরিক শক্তিধারী সরকারকে নিরস্ত্র মানুষের পক্ষে জব্দ করা যে কঠিন তা বুঝেই তিনি ‘রাস্তাঘাট বন্ধ’ ও ‘ভাতে মারা পানিতে মারা’র কথা বলে মূলত একটি গেরিলা যুদ্ধের কৌশলই বাতলে দিয়েছিলেন। রসদ সরবরাহের ব্যবস্থা বন্ধ করা যেকোনো শক্তিকে দুর্বল করার বড় উপায়।

শাসকদের সতর্ক করে বললেন, “আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা কোরো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।“ আর বাঙালির বিজয় যে অনিবার্য সেটাও বললেন এই বলে, “আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।“

বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা। তিনি মানুষের দুঃখকষ্ট বুঝতেন বলেই তাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন। কয়দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেসব সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কথা মনে ছিল বলে বক্তৃতায় তিনি বলেন, “যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দূর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আমার রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকাপয়সা পৌঁছিয়ে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইরা যোগদান করেছেন, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছায়ে দেবেন।”

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি যে নির্দেশ দেওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছেন, হয়তো সেটা আবারও মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো, কেউ দেবে না।“

বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মনে রাখবেন, শত্রুবাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটপাট করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।”

রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখ লাখ মানুষ তখন কিছুটা যেন চঞ্চল। কারণ সবার আগ্রহ তো বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার। দলের মধ্যেও তরুণদের চাপ ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা যেন বঙ্গবন্ধু ওই সমাবেশ থেকেই দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন, তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে কী পরিণতি হতে পারে। সেনাবাহিনী তৈরি ছিল তোপ দাগার জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এটাও জানতেন যে তিনি যদি মানুষের মনের ভাষা প্রকাশ না করেন তাহলে তারা হতাশ হবেন। তিনি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। শাসকগোষ্ঠীর চোখে ধুলো দিয়ে জনতার উদ্দীপনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ভাষণের একেবারে শেষে এসে শোনালেন সেই মহাকাব্যিক বাণী- “যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালিরা বুঝে-শুনে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”

ব্যস, উচ্ছ্বসিত জনতা পেয়ে গেল স্বাধীনতার ঘোষণা। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। আরও বহু রক্ত দিয়ে মুক্ত স্বদেশে ওড়ানো হলো স্বাধীনতার পতাকা।

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সৌজন্যেঃ bdnews24.com

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত