বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্তজন শহীদ কর্নেল জামিলের কথা

2488

Published on আগস্ট 15, 2021
  • Details Image

ড. জেবউননেছাঃ

১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে বিখ্যাত মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ নৌকা করে ভারতের বনগাঁ পেরিয়ে যশোর সীমান্তে আসেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে লিখেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ কবিতাটি। পরবর্তীকালে এটিকে তিনি গান হিসেবে রূপায়িত করেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গিয়ে তার বন্ধু বব ডিলান ও অন্যান্য বিখ্যাত গায়কদের সম্মিলনে এই গান পরিবেশন করে কনসার্ট আয়োজন করে বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। যশোর জেলাটি অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূধনের কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁষে। বর্তমানে যশোরে আর্মি কোর অব সিগন্যালস ব্যাটালিয়নে ‘শহীদ কর্নেল জামিল অ্যাকাডেমি’ নামে একটি ভবন রয়েছে। সেই শহীদ কর্নেল জামিল ১৯৩৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন যশোর জেলার জেল রোডে। তার ডাক নাম ছিল ‘মিটু’। বাবার নাম বদর উদ্দিন আহমেদ, পেশায় একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং মাতার নাম লুৎফুন্নেসা বেগম। ছবি তোলার শখ থেকে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তাকে ক্যামেরা কিনে দেওয়া হয়েছিল। পিস্তল সংগ্রহ করা ছিল তাঁর শখ। ‘জামিল’ নামের অর্থ ‘সুদর্শন’। কে জানতো পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চির এই সুদর্শন মানুষটি একদিন হয়ে উঠবেন একজন চৌকস সেনা কর্মকর্তা। ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম যুক্ত হবে একজন বিদ্যোৎসাহী, সৎ এবং আস্থাভাজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। অথচ তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন আর ত্যাগের গল্প আমরা কতটুকুই বা জানি।

তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে কিছু দিন পর সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যোগদানের লক্ষ্যে কাকুল মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে পিএমএ লং কোর্স সম্পন্ন করতে চলে যান। লং কোর্স সমাপ্ত করেন ১৯৫৫ সালে। অতঃপর কমিশন প্রাপ্ত হয়ে কোর অব সিগন্যালসে কর্মজীবন শুরু করেন। আর্মি ইন্টিলিজেন্স (আইএসআই)-এ বেশিরভাগ সময় কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে সাইফার্স কোর্স সমাপ্ত করেন। রেডিও কোর্স করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির পোর্ট ম্যানমথে ১৯৬৩ সালে। তবে যাওয়ার কথা ছিল ১৯৬২ সালে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি জেনারেলের ভাগ্নে তার পরিবর্তে চলে যাওয়ায় পুনরায় পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হন। এরপর তিনি কোর্সটি করতে যান। মার্শাল ল অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে তিনি ১৯৫৯ সালে বগুড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে খুলনায় আইএসআইতে নিয়োজিত হন। ঢাকার মিন্টু রোডে ১৯৬৬ সালে পুনরায় আইএসআই-এ যোগদান করেন। ১৯৬৬ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র যখন ফাঁস হয়ে যায়, তখন তাঁর কর্মস্থল ঢাকার মিন্টো রোডে। সেই সময় তিনি মেজর ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নথিপত্র তিনি ক্যাপ্টেন মোহাব্বত জান চৌধুরীকে নিয়ে রমনা পার্কে পুড়িয়ে ফেলেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের আইসআই কর্মকর্তা হয়েও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তার বিশ্বাস ছিল একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।

১৯৬৭ সালে মুলতান ক্যান্টনমেন্টে ‘উত্তম কর্মকর্তা’ হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৬৮ সালে কর্নেল জামিলের স্টাফ কোসের্র শেষ বছর ছিল। কোর্স চলাকালীন তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। নথিপত্র নিশ্চিহ্ন করার ব্যাপারে তার কোর্ট মার্শাল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইএসআই’র দুর্নাম হবে ভেবে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১৯৭১-এ কর্নেল জামিলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি হবার কথা ছিল। কিন্তু সেটা স্থগিত হয়ে যায়। তাকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে থাকার কথা বললেও তিনি নিজ দেশে ফেরত যেতে চান। ১৯৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে তাকে পেশোয়ারে পোস্টিং দেওয়া হয়।

পরবর্তীকালে ১৯৭১ থেকে পাকিস্তানের মান্ডি বাহাউদ্দিন ক্যাম্পে তিনি এবং তাঁর পরিবারকে বন্দি করে রাখা হয়। যুদ্ধবন্দিদের ক্যাম্পে বাচ্চাদের গাছের নিচে স্কুল ছিল। সে স্কুলে তিনি ভূগোল, ইংরেজি ও বাংলা পাঠদান করতেন। স্বামী- স্ত্রী দুজনে মিলে ক্যাম্পে বাচ্চাদের নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই সিমলা চুক্তি সম্পাদনের পর ১৯৭৩ সালের ১৭ অক্টোবর কর্নেল জামিল ও তার পরিবার স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন এরিয়ানা আফগান এয়ারলাইন্সে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ আর্মির সিগন্যালস ব্যাটালিয়নে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি কমান্ড্যান্ট হিসেবে নিয়োজিত হন। তার কিছু দিন পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে তিনি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর ডিফেন্স ফোর্স অব ইন্টিলিজেন্সের প্রধান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দায়িত্ব না বুঝিয়ে দিয়ে ব্রিগেডিয়ার রউফ কনফারেন্স অংশগ্রহণের জন্য দেশের বাইরে চলে যান।

কর্নেল জামিলের স্বপ্ন ছিল বড় কন্যা তনুকে চিকিৎসক, মেজো মেয়েকে চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্তু ঘাতকের গুলি তাঁর স্বপ্ন ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। তিনি ভীষণ খোদাভীরু ছিলেন। তিনি স্কোয়াশ এবং ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করতেন। ১৯৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেড়াতে গেলে সেখানকার ভাতার অর্থ দিয়ে ইয়াশিকা ম্যাট ক্যামেরা কিনেন। তার হাতে তোলা নানা রকমের ছবিতে এখনও হাত বুলায় তাঁর কন্যারা। পরিচ্ছন্ন ইংরেজি চলচ্চিত্রের দিকে ঝোঁক ছিল। সুযোগ পেলেই গানের রেকর্ড কিনতেন। গাড়ি পছন্দ করতেন। প্রথম দিকে কিনেছিলেন কালো ভক্সওয়াগন, এরপর কিনেন মিনি অস্টিন। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তার প্রিয় লাল রঙের নিশান প্রিন্সের গাড়িতে। তিনি ছিলেন ভীষণ বন্ধুবৎসল। রবীন্দ্রসংহীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে শিখেছিলেন রবীন্দ্রসংগীত। তাঁর পছন্দের গান ছিল ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’।

তাঁর হাতের লেখা ছিল ভীষণ সুন্দর। মেয়েরা তাঁর হাতের লেখা অনুকরণ করতো। তিনি ছিলেন ভীষণ বন্ধুবৎসল। তাঁর লাশ বয়ে এসেছিল তারই বন্ধু খোকন সাহেবেরে গাড়িতে। সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, রবিবারের পুরো সময়টা সন্তানদের দিতেন।

গণভবনের ভেতরে কর্নেল জামিল থাকতেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সুবেহ সাদেকের সময় বঙ্গবন্ধু ফোনে কর্নেল জামিলকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। ফোনে জানালেন, ‘আমি এখনই আসছি স্যার’। গাড়িচালক আইনউদ্দিনকে নির্দেশ প্রদান করেন গাড়ি প্রস্তুত করার জন্য। সিভিল পোশাকে লোডেড সার্ভিস রিভলবারটি হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে মিসেস জামিল প্রশ্ন করেছিলেন, তোমাকে সত্যি যেতে হবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন বিপন্ন আর আমি যাবো না?’ যাবার আগে বলে গেলেন, আমার মেয়েদের দেখে রেখো। এই ছিল পরিবারের সাথে তাঁর শেষ কথা। তখন সোবাহানবাগের কাছে রাস্তার ওপর ট্যাংকসহ ব্যারিকেড বসানো। গাড়ি থেকে নেমে তিনি দেখেন দাঁড়িয়ে আছেন সুবেদার মেজর, তাকে সাথে যেতে বলেন। এবার কর্নেল জামিল আবার গাড়িতে এসে বসেন এবং চালক আইনউদ্দিনকে গাড়ি চালাতে বলেন। কিন্তু আইনউদ্দিন তাকে গাড়ির ভেতরে না যেতে অনুরোধ করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, তোমার ভয় লাগলে নেমে যাও, আমি ড্রাইভ করবো। এরপর ড্রাইভিং সিটে থাকা আইনউদ্দিন শুধু তিনবার কর্নেল জামিলের কণ্ঠে ‘লা ইলাহা শুনতে পান’। ঘটনাস্থল থেকে আইনউদ্দিন পালিয়ে গেলেও এরপর পুরো ঘটনার একমাত্র সিভিলিয়ান সাক্ষী ছিলেন সোবাহানবাগ মসজিদের তৎকালীন ইমাম সাহেব। দুপুর দুইটার দিকে সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ ফোনে জানান, জামিল সাহেব আর নেই।

তৎকালীন সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মধ্যস্থতায় কড়া পাহারায় লালমাটিয়ায় তাঁর ভাই জালালউদ্দিন আহমেদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। গাড়ির পেছনের সিটে জায়গা হচ্ছিল না বলে কর্নেল জামিলের পা দুটো ল্যান্ড রোভারের জানালা দিয়ে বের হয়েছিল। লাশের সামনে কান্না করা যাবে না তাই তাঁর মেয়েরা বাবাকে হারিয়ে কাঁদতেও পারেনি। কাঁদলেই গুলি করে দেবো বলে বারবার বিক্ষুব্ধ সেনা সদস্যরা তার মেয়েদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। সেদিন কারফিউ জারি থাকায় কাফনের কাপড়ও কেনার সুযোগ পায়নি তাদের পরিবার। কর্নেল জামিলের ভাইয়ের স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা বিছানার একটি সাদা চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দাফন করা হয়। ভালোমতো গোসলও করাতে পারেননি। দাফনের সময়ও রক্তে চাদর ভিজে গিয়েছিল। এরপর ঢাকা সেনানিবাসে তৎকালীন চিফ অব স্টাফ খালেদ মোশাররফের বাসায় লাশ নেওয়া হয়। অতঃপর আর্মি কবরস্থান, ঢাকায় কর্নেল জামিলকে দাফন করানো হয়। রাত ২টার দিকে তার পরিবারের সদস্যরা বাসায় ফিরে আসেন।

তাঁর মৃত্যুর আট মাস পর জন্ম নেয় কর্নেল জামিলের কনিষ্ঠ কন্যা কারিশমা জামিল। সুইডেনসহ কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়ে প্রস্তাব থাকলেও কর্নেল জামিলের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা জামিল সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। তার একটিই কথা ছিল, দেশ ছেড়ে গেলে কর্নেল জামিলকে সবাই ভুলে যাবে, সবচেয়ে বড় কথা যে মাটিতে কর্নেল জামিল শুয়ে আছেন সে মাটি ছেড়ে যেতে চাননি তার স্ত্রী। ১৬ বছরের কন্যা তেহমিনা, ১৩ বছরের কন্যা আফরোজা, ৬ বছরের কন্যা ফাহমিদা এবং গর্ভে এক মাসের সন্তান নিয়ে শুরু করেন নতুন এক যুদ্ধ। কর্নেল জামিলের শাশুড়ি তাকে পরামর্শ দেন সেনাপ্রধানের সাথে দেখা করে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা বলার জন্য। মায়ের অনুরোধে তিনি তার সন্তানদের নিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের বাসায় দেখা করতে যান। কিন্তু সেদিন তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। সে স্মৃতি এখনও ভাসে তার কন্যাদের চোখে।

কর্নেল জামিলের সন্তান হিসেবে অনেক সময় প্রাপ্য অধিকার পেতেও বেগ পোহাতে হয়েছে সন্তানদের। চারটি সন্তান নিয়ে কর্নেল জামিলের স্ত্রী জীবনকে যুদ্ধ করে এগিয়ে গিয়েছেন। কোনও দিন সরকার থেকে কোনও অনুদানও পাননি। তাঁর এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০০৯ সালে কর্নেল জামিলকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদায় সম্মানিত করেন। তাঁর স্ত্রী আঞ্জুমান আরা জামিল সংরক্ষিত আসনে ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে কুষ্টিয়ায় তাঁর স্ত্রীর উদ্যোগে গঠিত হয় ‘কর্নেল জামিল ফাউন্ডেশন’। ২৯ নভেম্বর ২০১২ সালে কর্নেল জামিলের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। কর্নেল জামিলের মৃত্যুর আট মাস পর জন্ম নেওয়া কারিশমা জামিলের ভেতরে একটিই প্রশ্ন, কেন তার বাবাকে তিনি দেখতে পারলেন না? কী দোষ ছিল তার? অপরদিকে তার মেজো মেয়ের কষ্ট, কর্নেল জামিলের নামে কোনও কিছুই বাংলাদেশে নেই। তবু তিনি গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট তারা দু’জন পিতা হারিয়েছেন, একজন জাতির পিতা আর একজন তাদের জন্মদাতা।

যে মানুষটি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত, যে মানুষটি বঙ্গবন্ধুর দুর্দিনে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, সে মানুষটির নাম আমরা ক’জনেই জানি। যুগে যুগে এ ধরনের ত্যাগী, বীর সেনারা আসেন, হারিয়ে যান ইতিহাসের পাতায়। কেউ মনে রাখে, কেউ রাখে না। তবু ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। এই উক্তিকে সামনে রেখেই কর্নেল জামিল বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে তিনি পরপারের যাত্রায় শামিল হয়েছেন। যে বিশ্বস্ততা এবং পেশাগত কর্তব্যপরায়ণতার উদাহরণ তিনি রেখে গিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের কাছে সেটি শিক্ষণীয়। মনীষীরা বলেন, ‘বিশ্বাস করতে হলে এমন কাউকে বিশ্বাস করো, যার মধ্যে নীতি আছে, যার মুখের কথা ও হাতের কাজ এক’। বঙ্গবন্ধু সঠিক মানুষকেই বিশ্বাস করেছিলেন। আর সেই উপহার কর্নেল জামিল দিয়ে গিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে।

যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এ লন্ডনের হারলি স্ট্রিটের লন্ডন ক্লিনিকে পিত্তথলির অস্ত্রোপচারের সময় অসুস্থ বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট দেখতে এলে বঙ্গবন্ধু বুকপকেট থেকে কলম বের করে বলেছিলেন, ‘এই সামান্য আমার উপহার; এটা দিয়ে আপনি লিখুন আমার দরিদ্র মানুষের কথা’। এমন একজন মানবদরদী মানুষটিকে ঘাতকেরা বাঁচতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর সরল বিশ্বাস তারা ভেঙেচুরে দিয়েছে। তার সাথে হারিয়ে গেছেন বিশ্বস্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল। আজ এই দিনে বঙ্গবন্ধুসহ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। কর্নেল জামিল তাঁর মেয়েদের ১৯৭১-এ যুদ্ধবন্দি থাকা অবস্থায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশ ভীষণ উন্নত দেশ হবে’। শহীদ কর্নেল জামিলের দুটি কথাই মিলে গিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা স্বাধীন হয়েছে এবং তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রের দিকে তাঁর দূরদর্শিতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমিও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত দেশের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। সেই প্রার্থনাই করছি দিনমান।

লেখক: অধ্যাপক, লোক-প্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত