আঁধার দিগন্তে নতুন সূর্যের প্রত্যাবর্তন

1924

Published on মে 18, 2021
  • Details Image

খন্দকার হাবীব আহসান:

শুরুটা অনেকের মতই শূণ্য থেকে নয় বরং ঋণাত্বক অবস্থান থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির একমাত্র ভরসায় পরিনত হয়ে ওঠা রাজনীতিক আমাদের শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টের পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বসন্তকালীন সময়ে এদেশে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি হয়ে রাজনীতি শুরু করবার ঘটনা একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের এই প্রজন্মে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংঠনের হয়ে রাজনীতি করা যেকোন কর্মীর পক্ষে অনুমান করাটাই কঠিন। তবে এতটুকু বোধগম্য যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময়কাল শেখ হাসিনার জন্য শূণ্য অবস্থানের সময় নয়, দেশ- বিদেশে শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে ঋণাত্বক অবস্থানের সময়কাল।

১৫ ই আগস্টে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে একদিকে শেখ হাসিনার প্রবাস জীবন ছিলো কঠিন এবং ভীষণ শূণ্যতার অন্যদিকে বাঙালির ভাগ্য যাত্রা করেছিলো আঁধারের অসীম যাত্রায়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি হঠাৎ নাম আর পতাকা সর্বস্ব নামমাত্র স্বাধীন দেশে পরিনত হয়েছিলো। অবিভাবক শূণ্য রূপসী বাংলার ভেতরে বাইরে বিকৃতির প্রতিযোগিতায় কখনও এগিয়ে ছিলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক এজেন্টরা কখনও এগিয়ে ছিলো বঙ্গবন্ধুর খুনি ও খুনের চক্রান্তে থাকা সেনাসদস্যরা। অবিকল আশির দশকে বাংলা সিনেমায় রুপসী নায়িকার চরিত্র হননে ভিলেনদের চক্রাকার বলয়ে ঘুরিয়ে মজা নেওয়ার দৃশ্যের ন্যায় সেনা অভূত্থানে স্বৈরশাসন আর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির বলয়ে ক্রমাগত লুটপাট হচ্ছিলো বাংলাদেশ। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক মুক্তির মুক্ত আকাশে রাজাকার-আলবদরদের রাজনৈতিক উত্থান, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চা বন্ধ করে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক ও সাংকৃতির ধোঁয়া তোলা এবং জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষমতার দাপটে ভোগ দখল আর লোপাটের ঝড় তুলে বাংলার মানুষের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ জমে ছিলো।

এমন জাতীয় সংকটকালীন সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অবিভাবকত্বের প্রয়োজনীয়তায় শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মী সকলের অনুরোধে এবং তার সম্মতিক্রমেই দলের সভাপতি করা হয়। নতুন উদ্যমে জেগে ওঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দেশের মানুষের মনে আশা সঞ্চারিত হয়, ক্ষমতা দখলের চেয়ার সিটিংয়ের নগ্ন খেলার কবল থেকে মুক্তি পাবার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা বাঙালির হয়ে কথা বলবেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে একদিকে মানুষের ঢল অন্যদিকে পরিবারের সকলকে হারিয়ে শেখ হাসিনার আবেগাপ্লুত হৃদয় আর দুর্দান্ত সাহস নব জাগরণের জন্ম দেয়। শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি।’ ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ জনগনের আত্মার আত্মীয় শেখ হাসিনা সেদিনের কথা রাখতে পেরেছেন, জনগণও আস্থা রেখেছে তার প্রতি।

হারাবার মত কিছুই না থাকা সেই মানুষটি আজ বিশ্বরাজনীতিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে কাউনটেবল কান্ট্রিতে পরিনত করেছেন জনগণকে সাথে নিয়ে। পিতা এবং কন্যার এমন ধারাবাহিক সংগ্রামী এবং জনবান্ধব রাজনীতির ইতিহাস বিশ্বরাজনীতিতে নতুনই। বারংবার হত্যাচেষ্টার কবল থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরে আরও কয়েকগুনে জনগণের ভাগ্যন্নোয়নে সরব হয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ এর পর বাংলার মুক্ত আকাশ আঁধারের কালো মেঘে ঢেকে যাওয়ার সময়কালে আলোকের বিচ্ছুরণ হয়ে বাঙালি জাতিকে অগ্রগতি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার সাহসী সূর্য শেখ হাসিনা। সেদিন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না হলে, বাঙালি জাতির ভাগ্য আঁধারের চক্রে ঘূর্ণায়মান থাকলে আজকের বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার ইতিহাস, নির্মম আর অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা না করতে পারার পরাজিত জাতির গল্পে পরিনত হতো। রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অখন্ডতা হতো আর এক অবাস্তব দৃশ্য। ইতিহাস বিকৃতির চুড়ান্ত ধাপে পৌঁছে আমরা জানতেই পারতাম না আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরত্বগাথা ইতিহাস।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংঠনের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং করে উজ্জীবিত করে তোলেন স্বৈরাচার এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার সংগ্রামে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ অনান্য অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনা ছড়িয়ে দিয়ে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন জেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও উপজেলা ইউনিট এবং যুবলীগের তৃণমূলের ইউনিটের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন সে সময়। এভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৬ বছরের ভাত ও ভোটের সংগ্রামের পর স্বৈরশাসনের বুটের তলা আর লুটপাটের তান্ডব থেকে মুক্তি পায় বাংলার জনগনের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার স্বপ্ন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠনের পর থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশকে বর্তমানের এই অগ্রগতির টানেলে আনতে নানা সংগ্রাম চলমান রেখেই চলতে হয়েছে প্রতিনিয়ত।

বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চতুর্থ বারের মত সরকার গঠন করে বাংলার জনগণের আর্থ সামাজিক ধারাবাহিক উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এনেছে। এমনকি বৈশ্বিক রাজনীতির পরিমন্ডলে শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যতম বিশ্বনেতা। ইতিহাসের দায় মুক্তির জন্য যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার বা জাতির পিতা হত্যার বিচারেই যে সফল তা নয় বাস্তবিক কর্মে প্রথম ধাপে করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সর্ব মহলে প্রশংসিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমাদের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের কাজ অতি দ্রুততম সময়ে শেষ হতে চলেছে। অন্যদিকে করোনা চলাকালীন সময়ে এবং লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠি, কর্মজীবী মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের সহায়তা ও প্রনোদনা দিয়ে রাষ্ট্রে মহামারিতে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও অর্থনৈতিক মন্দার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির অবিভাবকত্ব নিজ দায়িত্বে নেওয়ার ইতিহাস শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় বরং পরবর্তীতে দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব রেখে চলেছে। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলা গড়তে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির যে প্রয়োজনীয়তা ছিলো তা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আছেন বলেই সম্ভব হচ্ছে। কাজেই শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে পরিনত করে বাংলার মানুষের ভালবাসায় নিজের জীবনভয় উপেক্ষা করে যে প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছিলেন তার অধিকাংশই পূরণ হয়েছে, বাকিটা পূরণের পথে। শেখ হাসিনার দেশপ্রেম , দায়িত্ববোধ, সততা এবং উন্নত আধুনিক স্বপ্ন দেখতে পারার ফল হিসাবে আমরা নিকট ভবিষ্যতে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে সাহস পাই, আমরা ভীষণ গর্ব করি আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছে।

লেখক: উপ বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত