2155
Published on মে 17, 2020এম. নজরুল ইসলাম
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আজকের দিনটির গুরুত্ব একেবারেই আলাদা। করোনার অভিঘাত বাদ দিলে আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশের যোগসূত্র আছে এই দিনটির সঙ্গে। আমরা একটু আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকাই। অর্জনগুলো দেখি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন তো কম নয়। মধ্যম আয়ের দেশটি পোশাকশিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। শিক্ষা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও শিশু-মাতৃ মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ, নারীর ক্ষমতায়ন, চিকিৎসা, খেলা, তথ্য-প্রযুক্তি, পাটের জিনতত্ত্ব আবিষ্কার ও কৃষি-মৎস্য উৎপাদনে পেয়েছে অনন্য সাফল্য।
জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এখন নিতে পারে মেগা প্রকল্পের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। অর্জন করেছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য। এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস-ইত্যাদি বিষয়ে কাজ হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে আয়ু। রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন বেড়েছে। ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে কাজ হচ্ছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে দেশের চেহারা।
ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ এরই মধ্যে সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভুমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সব উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।
১৯৯০-৯১ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.৪ শতাংশ, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তা এসে দাঁড়িয়েছিল ৫.৭ শতাংশে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেটি দাঁড়িয়েছে ৮.১ শতাংশে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। ১৯৯০-৯১ সালে বেসরকারি বিনিয়োগ যেখানে ছিল মাত্র ৭৩.৩ বিলিয়ন টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় তা ছিল ৩০৪.৪ বিলিয়ন টাকা। মাত্র ১০ বছরে তা প্রায় সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৭১.২ বিলিয়ন টাকায়। রাষ্ট্রীয় খাতে মেগাপ্রকল্প গ্রহণসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিপুল বিনিয়োগ ঘটেছে গেল দশকজুড়েই। রুগ্ন একটি বেসরকারি খাতকে বর্তমান সরকার রূপ দিয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির এক যোগ্য অংশীদার হিসেবে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১১৩ বিলিয়ন টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তা হয়েছিল ১৫৪৩.৩ বিলিয়ন টাকা। মাত্র ১০ বছরে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯৩৪.১ বিলিয়ন টাকায়।
আজ আমাদের কৃষিচিত্র হয়ে উঠেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত, গ্রামীণ জীবন হয়ে উঠেছে নানা বর্ণ-রেখায় উজ্জ্বল। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের প্রচেষ্টায় আজ আমরা এই স্তরে উঠে এসেছি। এখন আমাদের মাথাপিছু চাষযোগ্য জমি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ৮ হেক্টরে। জনসংখ্যা হয়েছে ১৭ কোটির কাছাকাছি। এই অবস্থা সত্ত্বেও আমরা গত বছর প্রায় চার কোটি ৪৬ লাখ টন দানাজাতীয় খাদ্য উত্পাদন করেছি, যা পঞ্চাশ বছর আগের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন গুণ। আমাদের মোট জাতীয় আয় ১৯৭২ সালের তিন বিলিয়ন ডলার থেকে এ বছর ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যার শতকরা ১৫ ভাগ এসেছে কৃষি থেকে।
কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। জীবন-জীবিকার পাশাপাশি আমাদের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই কৃষির উন্নয়ন মানে দেশের সার্বিক উন্নয়ন। টেকসই কৃষি উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং দিকনির্দেশনায় খোরপোষের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্য শস্য উৎপাদন, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংসস্থান ও রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে।মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে।
আর এসবকিছুই সম্ভব হয়েছে যাঁর নেতৃত্বে, তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের এই দিনে তিনি ফিরে এসেছিলেন প্রিয় পিতৃভুমিতে। আর সেই থেকে তিনি অসহায় মানুষের ত্রাতা। তিনিই দিকনির্দেশক, অর্থনৈতিক মুক্তির অগ্রযাত্রায় বিপবের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ভয়কে জয় করে সেদিন তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ এই করোনা সংকটেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক তিনি। তাঁকে ঘিরেই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করুন প্রিয় নেত্রী।
লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়া প্রবাসী লেখক, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক