উত্তাল মার্চ, ১৯৭১- মিছিলকারীদের উদ্দেশে সারাদিন প্রায় বিরামহীন ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু

2340

Published on মার্চ 2, 2022
  • Details Image

২৪ মার্চ, ১৯৭১। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমাগত বিভিন্ন মিছিলকারীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় বিরামহীনভাবে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আর আলোচনা নয়, এবার ঘোষণা চাই। তিনি বলেন, আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোনো সমাধান না হলে বাঙালিরা নিজেদের পথ বেছে নেবে। আমরা সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সরকারের প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বাংলার জনগণের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।

২৩ মার্চ রাত হতে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলাগাড়ী, গোলাহাট ও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালিদের সাথে নিয়ে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে ১০০ জন নিহত হয় এবং ১ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। শহরে কারফিউ দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য এবং অবাঙালিরা সম্মিলিতভাবে বাঙালিদের বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়।

রংপুর হাসপাতালের সামনে ক্রুদ্ধ জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাকসেনারা রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় নিরস্ত্র লোকজনের ওপর বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং বহু লোক আহত হয়।

চট্টগ্রামে পাকসেনারা নৌ-বন্দরের ১৭ নম্বর জেটিতে নোঙর করা এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ তাদের ঘিরে ফেলে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাহাজ থেকে কিছু অস্ত্র নিজেরাই খালাস করে ১২টি ট্রাকে করে নিয়ে যাবার সময় জনতা পথ রোধ করে। সেনাবাহিনী ব্যারিকেড রচনাকারী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে ২০০ শ্রমিক শহীদ হন।

মিরপুরে অবাঙালিরা সাদা পোশাকধারী পাকসেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় বাঙালিদের বাড়িঘরের ছাদে ওড়ানো বাংলাদেশের পতাকা এবং কালো পতাকা নামিয়ে জোর করে তাতে আগুন দেয় এবং পাকিস্তানী পতাকা তোলে। রাতে বিহারীরা এখানে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মধ্যে উপদেষ্টা পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বক্তব্য প্রদান শেষ হয়েছে। এখন প্রেসিডেন্টের উচিত তার ঘোষণা দেয়া। তিনি বলেন, আজ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে প্রস্তুত নয়।

পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবনে জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ ও দুর্ভাগ্যজনক। এ অঞ্চলের শোষিত জনগণের প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রয়েছে। আমি তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছি; কিন্তু আমার একটি জাতীয় দায়িত্ব রয়েছে। আমি পাকিস্তান অখণ্ড রাখার জন্য জীবন দান করতে প্রস্তুত।

টিভি কেন্দ্রে প্রহরারত সৈন্যরা টেলিভিশন কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করলে সন্ধ্যা থেকে কর্মীরা টিভির সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার থেকে বিরত থাকেন।

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত