4480
Published on মার্চ 22, 2018একাত্তরের মার্চ মাসটি ছিল আনন্দ-বেদনার মাস। একদিকে যেমন দখলদার পাক বাহিনীর হাজারো অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা, তেমনি আমরা পেয়েছি গৌরবময় স্বাধীনতার ঘোষণা। আজ স্বাধীনতার এই মাসে প্রথমেই স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন অনেক কঠিন সময়ের মাঝখানে। আমরা তার অটল সিদ্ধান্তের জন্যই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। ১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে চলছিল অসহযোগ আন্দোলন এবং ৭ই মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর বক্তৃতায় তিনি যা বলেছেন তা প্রকারান্তরে স্বাধীনতার কথাই বলা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন—‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
২৫শে মার্চের মধ্যরাতে হঠাত্ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে ঢাকার রাজপথে ট্যাঙ্ক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। ওদের মেশিনগানের গুলির আঘাত থেকে রাস্তার পাগল বা দিনমজুর কিংবা রিকশাচালকও রক্ষা পেল না। সারারাত ধরে ওরা পুরো শহরের আনাচে-কানাচে হত্যা করলো কয়েক হাজার নিরস্ত্র ও নিরপরাধ ঘুমন্ত মানুষকে। ওদের আক্রমণ থেকে ইপিআর বাহিনীর সদর দফতর পিলখানা এবং পুলিশের রাজারবাগ হেডকোয়ার্টারও রক্ষা পেল না। ওদের কামানের গোলার আঘাতে বাঙালির প্রাণপ্রিয় শহীদ মিনারটিও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলো। রক্ষা পেল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাও।
২৫শে মার্চের কালরাতে মানব ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরোধ আন্দোলনটি সশস্ত্র সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়। এই মাসটিতেই বাড়িঘর ছেড়ে, সহায়-সম্পদ ত্যাগ করে নানা স্থানে পালিয়ে বেড়িয়েছি। আমি বিক্রমপুরের দিকে প্রায় তিনমাস পর্যন্ত ছিলাম, এরপর আবার ঢাকায় এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে যাই। সেই নয় মাসের কষ্ট যে কী ভীষণ ছিল তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। অবশেষে আমরা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
এখন কথা হলো শুধু স্বাধীনতা অর্জন করলেই হবে না, জাতির জনক নিজের পরিবারসহ জীবন দিয়ে যে পথ দেখিয়ে গিয়েছেন, আমাদেরকে তা অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করতে হবে। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের ওপর হায়েনাদের ছোবল দেখতে পাই; আমাদের পিছু হটলে চলবে না। যেভাবেই হোক বঙ্গবন্ধুর এই সোনার বাংলাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা, তিনি দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। স্বাধীনতার আনন্দের সঙ্গে এই আনন্দটাও অনেকটা গর্বের। আমরা চিত্রশিল্পীরা নানারকম ক্রান্তিকালে দুঃখ-কষ্টে, আনন্দ-বেদনা সবকিছু ভাগ করে নেই। এটা আমাদের দারিত্বের মধ্যে পড়ে।
সৌজন্যেঃ দৈনিক ইত্তেফাক