স্বাধীনতার প্রথম তরুণ বলা যায় এই মার্চ মাসটিঃ ড. সাখাওয়াত আলী খান

4322

Published on মার্চ 13, 2018
  • Details Image

৭১-এর মার্চ যেমন আমাদের জাতির জীবনে বেদনার মাস, তেমনি তা অনন্ত গর্বেরও। সেই মাসটি যেমন ছিল রক্ত ঝরা, তেমনি তা ছিল অনন্য। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ, এমন ঘোষণা বোধ করি পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। সেই মাসে অকাতরে রক্ত ঝরিয়ে যেন বাঙালি পৃথিবীকে জানিয়ে দিল, নতুন এক রাষ্ট্রের জন্ম হতে চলেছে। এই জাতিকে আর কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না।

পাকিস্তানিরা ভেবেছিল রক্ত ঝরিয়ে, ভয় দেখিয়ে বাঙালিকে বশ করে ফেলবে। বাঙালি বাধ্য হয়ে তাদের ন্যায্য দাবি থেকে সরে যাবে, আর সেই সুযোগে পাকিস্তানি শাসন এদেশে পাকাপুক্ত হবে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি রক্ত ঝরিয়ে তারা এদেশের মানুষের মনেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সেই আগুন ছিল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, দুঃশাসন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষার আগুনে পাকিস্তানিদের দুরাশা যে পুরে ছাই হয়ে যাবে, তা হানাদাররা না বুঝলেও বাঙালি কিন্তু মার্চেই বুঝে গিয়েছিল। তবে এটাও বুঝা যাচ্ছিল যে, শত্রুকে নিঃশেষ করতে হলে আমাদের আরও কিছু রক্ত ঝরাতে হবে। তাইতো পরবর্তী ৯ মাসের রক্তস্নানে যেন পবিত্র হয়ে গিয়েছিল মানুষের হূদয়, অর্জিত হয়েছিল স্বাধীনতা। তাই এই স্বাধীনতার প্রথম তরুণ বলা যায় মার্চ মাসটিকে। এই একটি মাসে তত্কালীন পাকিস্তানি শাসকদের মিথ্যা আশ্বাস, প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের যে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল, তা সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসেই দ্বিতীয়টি খোঁজে পাওয়া যাবে না।

১৯৭১-এর মার্চ মাসে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর কাপুরুষের মতো একতরফাভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ২৫শে মার্চে তারা হামলা চালিয়েছে বাঙালি পুলিশ ও ইপিয়ার-এর উপরও। মার্চের প্রথম দিকে তারা গুলি চালিয়েছে সর্বস্তরের মানুষের উপর, অপরদিকে ভান করেছে রাজনৈতিক আলোচনার। সম্ভ্ভবত উপায়ান্তর না দেখে তারা বিপুল ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। একদিকে পাকিস্তানের পাঞ্চাবিদের নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনী যার প্রতিনিধিত্ব করে ঘোর মদ্দপ ও নিষ্ঠুর জেনারেল ইয়াহিয়া, অন্যদিকে কুচক্রি, ষড়যন্ত্রকারী এবং ক্ষমতা লোভী ভুট্টো—এই দুই পক্ষ তখন পাকিস্তানকে এক নরকে পরিণত করেছিল। বাঙালিদের বঞ্চিত করার জন্য এমন কোনো অন্যায় কাজ নেই, যা সম্ভবত এই দুই পক্ষ মিলে করেনি।

বাঙালি তখনি নিজেকে স্বাধীন মনে করতো হাতে গোনা অল্প কিছু বিশ্বাসঘাতক ছাড়া। পুরো বাঙালি জাতিই তখন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলেছে। অতি চালাক ভুট্টো জানতো যে, বাঙালিরা একদিন স্বাধীন হয়ে গেলে সে একক নেতা হবে পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের। সেটাই ছিল তার কাম্য। তাই ইয়াহিয়াকে নিষ্ঠুর হবার মন্ত্র দিয়েছিল। বাঙালিদের রক্ত ঝরানোর জন্য ইয়াহিয়া আর ভুট্টো কে কতখানি দায়ী, তা বের করার জন্য হয়তো একদিন বিশেষভাবে গবেষণা করতে হবে।

লেখক: অনারারি অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত