562
Published on মে 3, 2024গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। অতি সম্প্রতি মার্কিন থিঙ্কট্যাংক- দ্য আটলান্টিক কাউন্সিল কর্তৃক উল্লেখ করা হয়েছে যে শেখ হাসিনা সরকারের স্বীকৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের একটি সন্ধিক্ষণকে নির্দেশ করছে, যার মাধ্যমে মসৃণ শাসন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন সময়-কালের সূচনা হবে।
আটলান্টিক কাউন্সিলে প্রকাশিত প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি এবং বাংলাদেশের ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের একজন স্বাধীন বিদেশি পর্যবেক্ষক গৌতম লাহিড়ী একটি নিবন্ধে লিখেছেন যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার শেখ হাসিনা সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের ন্যায্যতা নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আপত্তি সত্ত্বেও, মার্কিন সরকারের বাংলাদেশের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি এবং সহযোগিতামূলক সম্পৃক্ততার প্রতিশ্রুতি কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন কেবল কূটনৈতিক বৈধতার ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত বিনিময়ের সম্ভাব্য পথ উন্মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ উপকৃত হবে। তাছাড়া, এই ধরনের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী এবং অংশীদারদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং অগ্রগতির জন্য একটি স্থিতিশীল এবং কার্যকর অংশীদার হিসেবে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রশংসা অর্জন করেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া স্বীকৃতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং শাসন সংস্কারের প্রতি তাঁর প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে কারও কারও মধ্যে অস্বস্তি থাকেলও বাংলাদেশ যে বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে কাজ করে চলেছে তা স্বীকৃতি দেওয়া অপরিহার্য। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই গতির ওপর ভিত্তি করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার দিকে যাত্রা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নতুন অনুপ্রেরণা প্রদান করবে।
তাছাড়া, মার্কিন কর্মকর্তাদের দ্বারা সমর্থিত সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সম্পৃক্ততার জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও সংস্থার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বৈশ্বিক বিষয়ে গঠনমূলক অবদান রাখতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একজন দায়িত্বশীল অভিনেতা হিসাবে বাংলাদেশের ভূমিকাকে শক্তিশালী করবে, যা সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করবে।
কূটনীতি ক্ষেত্রের বাইরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াগুলোর জন্য প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানগুলো বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় স্তম্ভ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক সংহতির দিকে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতিকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রার প্রতি সমর্থনের বার্তা পাঠিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের নতুন সরকারের স্বীকৃতি বিরোধী জোটগুলোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে, যারা মার্কিন প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক অভিনেতাদের অব্যাহত সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিল। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক জোট ভেবেছিল যে নির্বাচনের পরেও এই বিদেশি শক্তিগুলো বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অসহযোগিতা প্রদর্শন করবে। ফলে, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিরোধীদের একটি অনিশ্চিত অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে। অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত তাদের পূর্ববর্তী কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও দুর্বল করবে। এই পদক্ষেপ স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবকে শক্তিশালী করবে, যা রাজনৈতিক শক্তি পুনরুদ্ধারে বিরোধীদের সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
যাহোক, এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু কূটনৈতিক স্বীকৃতি বাংলাদেশের সামনে থাকা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে সরকারকে আর্থসামাজিক বৈষম্য, প্রশাসনিক সমস্যা এবং ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাসহ বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।
পরিশেষে, মার্কিন কর্মকর্তাদের স্বীকৃতি ও সহযোগিতার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বের যাত্রা আগামী দিনে অনেকটাই মসৃণ হবে। এই উন্নয়ন কেবল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়নি, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার দ্বারও উন্মুক্ত করেছে। বাংলাদেশ যখন তার সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষার দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আশা ও উৎসাহের আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করবে, যা বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যাত্রায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আমাদের বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে সব বাধাকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক: ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক
সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন