430
Published on এপ্রিল 30, 2024জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রতিটা ইউনিয়ন ও উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। পাকিস্তান আমলে মাত্র একটি ডিভিশনের একটি থানায় হেলথ কমপ্লেক্স ছিল। বঙ্গবন্ধু ৩৬৭টি হেলথ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন সারা দেশে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তৈরির পদক্ষেপ নেন। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোÑ কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতিটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলো প্রতিটি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ সেখানে চিকিৎসা নিতে আসছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফল উদ্ভাবনী উদ্যোগকে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এই উদ্যোগকে ‘শেখ হাসিনা উদ্যোগ’ নামে অভিহিত করে।
অপরিসীম প্রাণশক্তির অধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সবার জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকার গঠনের পর জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে সারা দেশে গড়ে ওঠা ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মানুষ চিকিৎসাসেবাসহ ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিশু হাসপাতালগুলোকে উন্নতকরণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে যুগোপযোগী করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুধাবন করেছিলেন- অন্ধজনে আলো দেওয়া আমাদের কর্তব্য। তিনি চেয়েছেন, এদেশের মানুষ অন্ধত্বসহ চোখের নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা লাভে যেন ব্যর্থ না হয়। তার এই চাওয়া থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নের পর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেন। একটি বেজ হাসপাতাল রেখে সেখান থেকে ভিশন সেন্টারগুলোতে টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এই সুযোগ সরকার তৈরি করতে পেরেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সারা দেশে স্থাপিত ১৩৫টি কমিউনিটি ভিশন সেন্টার বিনামূল্যে চোখের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করে দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেল হয়ে উঠেছে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষ চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ বিনামূল্যে চশমা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসেবা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নেওয়া কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে অন্ধকারের দিকে যাওয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে সাধারণ মানুষের চোখে এখন আলোর ঝলকানি।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চোখের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের মূল উদ্দেশ্য। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে সেবা নিতে যাওয়ার পর রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেন সেখানে কর্মরত দুজন সিনিয়র নার্স। তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেজ হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রোগীর যাবতীয় তথ্য পাঠান। রোগীর সঙ্গে বিশেষজ্ঞকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত করে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বেজ হাসপাতালের টেলিকনসালটেশন রুমে একাধিক চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থেকে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে কর্মরত চক্ষু বিষয়ে সুপ্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্সদের পাঠানো মেডিকেল রেকর্ড পর্যালোচনা করেন। এরপর, নার্স ও রোগীর সঙ্গে ভিডিও কনসালটেশনের মাধ্যমে চক্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন। বেজ হাসপাতাল থেকে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞগণ ই-সাইন যুক্ত ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে অনলাইনে পাঠান। বেজ হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থাপত্রের প্রিন্টকপি অনুযায়ী সিনিয়র স্টাফ নার্স রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পাওয়ারের চশমা দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি ভিশন সেন্টারের জন্য একটি রুম বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে চোখের রোগীরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবাসহ সমন্বিত উন্নত চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকে। ছানি পড়া, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, শিশু চক্ষুরোগ, চোখের আঘাতসহ ইত্যাদি জটিল চক্ষুরোগ শনাক্তকরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে রোগীদের চিকিৎসায় যেসব আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে তার মধ্যে স্লিট ল্যাম্প, অটো রিফ্রাক্টোমিটার (চোখের পাওয়ার মাপার যন্ত্র), ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, গ্লুকোমা রোগ নির্ধারণের জন্য ফান্ডাস ক্যামেরা, চোখের প্রেসার মাপার যন্ত্র, অপথালমোস্কোপ, রেটিনোস্কোপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে বিনামূল্যে ন্যাশনাল আই কেয়ারের মাধ্যমে ছানি অপারেশন করা হচ্ছে, যা বাইরে করতে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাগে। সরকার সেটা দিচ্ছে বিনামূল্যে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসেবায় এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে, ককলিয়ার ইমপ্লান্ট বিনামূল্যে দরিদ্র রোগীদের দিচ্ছেন। ইন্ট্রাওকুলার লেন্স, চশমাও বিনামূল্যে কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে রাতকানা রোগ কমে গেছে। একই সঙ্গে দেশে কর্নিয়া আলসারও কমে গেছে। আমাদের দেশে একসময় বহু লোক অন্ধ হয়েছে কর্নিয়া আলসারে। এখন আর সেটা নেই। কমিউনিটি ভিশন সেন্টারে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি আছে কিনা তাও স্ক্রিনিং করা হয়। ফলে অনেক মানুষকে অন্ধত্ব বরণের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা চক্ষুরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সুখী, সমৃদ্ধ, মানবিক, উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনা অবিকল্প। তার জয় মানেই বাংলাদেশের অব্যাহত জয়যাত্রা।
জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখকঃ ওয়াসিকা আয়শা খান প্রতিমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সৌজন্যেঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ