439
Published on ফেব্রুয়ারি 14, 2024প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি সেক্টরে নারীদের সফল অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নারী অগ্রযাত্রায় নবজাগরণ ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘নারীদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই কারণ নারীরা গ্রামীণ পর্যায়েও প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে এক সভায় দেওয়া ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে ৪৮টি সংরক্ষিত আসনে ১৫৫৩ জন নারী আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে একটি নবজাগরণ ঘটেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকশ’র মধ্যে ৪৮ জন নারীকে খুঁজে বের করা তাঁদের জন্য কঠিন কাজ।
তবে মনোনয়ন না পেলে হতাশ না হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য মাতৃস্নেহে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি নিজেও মাতৃস্নেহে দেশ গড়তে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে নারীদের মাঝে যে চেতনা এসেছে এবং নারী নেতৃত্ব যেন তৃণমূল থেকে শুরু হয় স্থানীয় সরকারে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রাইমারি স্কুলে ৬০ ভাগ নারীর চাকরির ব্যবস্থা করেছি। খেলাধুলাও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী একজন নারী বিবি খাদিজা (রাঃ) এবং মেয়েরা মায়ের জাতি সেটাও মনে রাখতে হবে। কাজেই মেয়েদের অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই, এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন। আজকে আমাদের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নারীরা পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে নারীদের ট্রেনিং সহ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সব রকমের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। কেননা আমরা আমাদের দেশটাকে আরো উন্নত করতে চাই, সে ক্ষেত্রে নারী পুরুষ একত্রে কাজ করতে পারলেই কেবল সেটা সম্ভব হবে।
তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা দরখাস্ত করেছেন তাদের অনেকেই জানেন হয়তো তারা পাবেন না। কিন্তু নিজের অস্তিত্বটাকে জানান দেওয়া, যে আমি আছি। আমরাও যোগ্য, আমরাও পারি। হ্যাঁ আমি এটা নিজেও বিশ্বাস করি সকলেই যোগ্য, কেউ অযোগ্য নয়। আমি এখনো বলবো যদি কেউ এখনো পেছনে পড়ে থাকেন তাদের টেনে আনার দায়িত্ব কিন্তু এই রাজনৈতিক নেতৃত্বের। আর সেখানে আমাদের এই বোনেরাই পারবে, কাউকে আমরা পেছনে ফেলে রেখে চলবো না। সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাব।
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশের ফেরার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে আমি পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দিবো না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিল না। নানা রকম ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছিল, এখনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিশাল জনসভায় আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। এই বাংলাদেশের জনগণই আমার আপন জন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেভাবে আমার বাবা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। যেভাবে আমার মা, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন আমিও আমার বুকের রক্ত ঢেলে দিবো এই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
তাঁর চলার পথে পথে প্রতি পদে বাধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার একমাত্র শক্তি হলো মানুষের সমর্থন ও মানুষের অনুপ্রেরণা। সেজন্য মানুষের জন্যই তার কাজ করা। ওরা ভেবেছিল রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছিল এজন্য যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। জানিনা আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বারবার মৃত্যুকে মুখোমুখি দেখেছি কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড হামলা এসব কিছুই আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমার দলের নেতাকর্মীরা মানব ঢাল রচনা করে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। অনেকে জীবন দিয়ে গেছেন। তাদের সব সময় আমি স্মরণ করি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত চড়াই উতরাই পার হয়ে আজকের বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় আসবে এটা কখনো কেউ ভাবতে পারেনি। ৯৬ থেকে ২০০১ এবং এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনের পর বারবার জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। ২০০৯ এ তিনি যখন সরকার গঠন করেন তখন একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত সমাজ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই আমাদের উন্নয়নের পথ চলা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সুনির্দিষ্ট আদর্শ লক্ষ্য নিয়ে চললে পরে যে কোন অভীষ্ট লক্ষ্য যে অর্জন করা যায় আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এক সময় বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল সেটি পাল্টে দিয়ে আজকে এতোটুকু দাবি করতে পারি বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁর সরকারের নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মনোয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আমাদের নারীদের কিন্তু অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি জানি এত জনের মধ্যে মনোনয়ন দিতে পারবো মাত্র ৪৮ জনকে। কিন্তু যে যেখানে আছেন তাদের নেতৃত্ব দেবার যে আকাক্সক্ষা সেটা মনোনয়ন না পেলেও যেন হারিয়ে না যায়।
তিনি বলেন, এটা ধরে রাখতে হবে। এটা ধরে রেখেই কিন্তু নিজের স্থানটা নিজের করে রাখতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে কেউ কিন্তু জায়গা করে দেয় না জায়গাটা করে নিতে হয়। জায়গাটা করে নিতে হবে এবং সেভাবে সংগঠন তৈরি করতে হবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। একদম জনগণের কাছে তৃণমূলে গিয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আমরা সরাসরি নির্বাচনে আরো বেশি মহিলা প্রার্থী করতে পারি।
সরকার প্রধান বলেন, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে। দীর্ঘ লাইন করে দাঁড়িয়ে তারা ভোট দিয়েছে। এক সময় কিন্তু এই অবস্থাটা ছিল না। আজকে আওয়ামী লীগকে মানুষ ভোট দিচ্ছে, এই যে পরিবর্তনটা এসেছে এর কারণ কাজ করার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার জন্য। কাজেই আপনাদেরকেও নেতৃত্ব দিতে হলে কে কি বানিয়ে দেবে সে আশায় বসে থাকলে হবে না। নিজের যোগ্যতায় নিজের কাজ করে নিজের রাস্তা দিয়েই সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা য্দ্ধুবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যার কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা ঘোষণা দিয়েছি ৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে, এটা নারী পুরুষ সকলে সমানভাবে, আমাদের যুব সমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেভাবে তৈরি করা, স্মার্ট সরকার হবে, ইকোনোমি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজটাকে স্মার্ট হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। অর্থাৎ বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণ কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকবে না। সব ক্ষেত্রে অগ্রগামী থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় সফলভাবে তাঁর সরকারের কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সহ টেস্টিং এর ব্যবস্থা করা এবং সে সময় সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে নগদ অর্থ ও প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করেন। যাতে অনেক উন্নত দেশও হিমসিম খেয়েছে। সেসব দেশে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু স্বল্পভূখন্ডের অধিক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশ তা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে, বলেন তিনি।
তিনি এ সময় জলবায়ুর অবিঘাত থেকে বাঁচার জন্য ’৮৫ সাল থেকে চালু করা আওয়ামী লীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা সহ নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন এবং বলেন, এসব সুযোগ নিয়ে অনেক পরিবারই এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আমাদের মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে, শিশু মৃত্যুহার কমেছে, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, আজকে পুষ্টির বিষয়ে মানুষের সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। এখন বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গা হয় না বরং মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা পায়।
তিনি এ সময় দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোয় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, একটি সমাজের উন্নয়নে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ফ্রি প্রাইমারি শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি এবং শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করেছি যাতে একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে উঠতে পারে। কেননা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে শিক্ষিত জাতিই দরকার।
তিনি এ সময় গণভবনে আগতদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজি বসন্ত আমার গণভবনের বাগান ফুলে ফুলে শোভিত।