950
Published on অক্টোবর 31, 2023ওয়াসিকা আয়শা খানঃ
উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও শিল্পায়নের জন্য সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জনগণ নৌকায় ভোট দিয়ে বারবার আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার কারণেই এই ধারাবাহিক উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। সরকার সারাদেশে সড়ক ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে একটি নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।
নদীগুলো ড্রেজিং ও পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি রেল সেবার যুগোপযোগী আধুনিকায়ন করেছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর। উদ্বোধনের পরদিনই টানেলের ভেতরে যান চলাচল সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন' মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির জন্য এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এই টানেল সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণের আনোয়ারা প্রান্তকে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ গড়ে উঠবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত। টানেলটি চালু হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। এ অঞ্চলের বাণিজ্য বেড়ে যাবে কয়েকগুণে। কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। এতে করে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের লাখো মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাওয়ার কারণে কাঁচামাল ও প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। উদ্যোক্তাগণ আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। গতি বাড়বে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায়, বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, ঘুচবে বেকারত্ব। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে রপ্তানিমুখী জাহাজ শিল্প, বিদ্যুৎচালিত যান, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, টেক্সটাইল, নির্মাণ শিল্পসহ আরো অনেক শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান, যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলটির কারণে। টানেল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহর এড়িয়ে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারা দেশের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও পণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরে আনা-নেওয়া করা যাবে দ্রুততম সময়ে। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হবার পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে। ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুযায়ী, ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক ইন্টারনাল রেট অফ রিটার্নের (আইআরআর) পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক বেনিফিট কস্ট রেসিওর (বিসিআর) পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৫ এবং ১ দশমিক ৫। ফলে দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে। এর ধনাত্মক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
সার্বিক বিবেচনায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল ধরে মেরিন ড্রাইভের আশেপাশের দীর্ঘ এলাকা দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডোরে রূপ নেওয়ার অমিত সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করে। এছাড়া, টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে বন্দরের কয়েকটি জেটি নির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যাতে বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে পর্যটন নগর কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সেতুবন্ধ তৈরি করবে এই টানেল। দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও বান্দরবান অন্যতম। বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হওয়ায় সমুদ্র, পাহাড় ও নদীর ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে। দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে এই টানেল। বর্তমানে টানেলের মাধ্যমে মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত যাওয়া যাবে। পরবর্তীতে তা মিয়ানমার হয়ে প্রসারিত হতে পারে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। টানেলটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে যুক্ত হতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত পরিকল্পিত উদ্যোগসমুহের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নিঃসন্দেহে এক উজ্জ্বল সংযোজন।
লেখকঃ সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং সভাপতি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
সৌজন্যেঃ bdnews24.com