1279
Published on সেপ্টেম্বর 12, 2023শ ম রেজাউল করিমঃ
বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা। তিনি বাঙালির স্বপ্ন ও সংগ্রামের আজন্ম সারথি। বাঙালি ও বাংলাদেশের যা কিছু গৌরবময় অর্জন, তার নেতৃত্বে ছিলেন একজনই, তিনি শেখ হাসিনা।
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভুল মন্ত্রে শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত ভারতবর্ষে যখন বাঙালিরা প্রতিনিয়ত তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিপন্ন-বিপর্যস্ত, মুক্তিপাগল মানুষগুলো যখন দ্রোহের সূচনায় সবেমাত্র মনোযোগী, ঠিক সে সময়েই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আর বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ঘর আলো করে এসেছে এক কন্যাশিশু। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদরের হাসু; বাংলাদেশের আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সমগ্র জীবন আর বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস মূলত একসূত্রে গাঁথা। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আত্মবিশ্বাসী দেশপ্রেমের অনন্য উদাহরণ একজন শেখ হাসিনাই কালক্রমে হয়ে উঠেন বাংলার মুখ। গ্রাম বাংলার ধুলোমাটি ও সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে বেড়ে উঠা একজন নির্ভেজাল বাঙালি নারী শেখ হাসিনা হয়ে উঠেন বাঙালির মুক্তির অগ্রদূত, অন্ধকারে আলোকবর্তিকা, আশা-আকাঙ্খার বাতিঘর; অসামান্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সংগ্রামী চেতনা, আপোষহীন নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ কালক্রমে তাঁকে নেতৃত্বের অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে।
চিন্তায়, চেতনায়, আত্মবিশ্বাসে, মানবিকতায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সত্যিকারের প্রতিচ্ছবি। তিনি শুধু জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকারই নন, আদর্শেরও উত্তরসূরি। তিনি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের নির্ভিক কান্ডারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাবা-মা, ভাই, আত্মীয়পরিজন হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে যাওয়া একজন মানুষ প্রবাসে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে স্বদেশে ফিরেই ব্রত নিলেন স্বাধীন দেশের মানুষগুলোকে সত্যিকার স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিবেন, শপথ নিলেন বাংলার খেটে খাওয়া ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির আনন্দে ভাসাবেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার দিনে লাখো মানুষের ভালোাবাসায় আপ্লুত বঙ্গবন্ধুকন্যা জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমার আর হারানোর কিছুই নেই। পিতামাতা, ভাই রাসেল সবাইকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং টানা তিন মেয়াদসহ মোট চার মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় আর অদম্য সাহসিকতায় সবকিছু সামলেছেন। বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন ‘শোষিতের কন্ঠস্বর’, তেমনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন ‘Voice of the Vulnerable’ তথা ‘দুর্গতদের কন্ঠস্বর’। অথচ দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ভয়ানক প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। ’৭৫ এর পর সামরিক শাসক আর স্বাধীনতাবিরোধীরা দোর্দণ্ড প্রতাপে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিরা সদর্পে জানান দিচ্ছিলো তাদের দাম্ভিক আস্ফালন। এ সময়টাতে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার সব ধরণের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কোন্দলে বিভাজিত হয়ে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। জনগণকে মিথ্যের বেসাতি দিয়ে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল তৎকালীন শাসকরা। অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সামরিক শাসকরা গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরেছিল। সে সময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কঠিন সংগ্রামে সফল নেতৃত্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সুসংবদ্ধ করার কাজটিও সমানতালে করে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
১৯৯০-এ এরশাদের পতনের পরের বছর নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার বিরোধী দলহীন প্রহসনের নির্বাচন করে। এ সময় আবারও বাঙালির ত্রাণকর্তারূপে আর্বিভূত হন দৃঢ়প্রত্যয়ী নেতা শেখ হাসিনা। প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনে গড়ে তুলে জয়ী হন এবং ১৯৯৬ সালে ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। দীর্ঘ ২১ বছর রাজপথে থাকা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করে আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাঁর নেতৃত্বে জন্মের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় উল্টো রথে যাত্রা করা বাংলাদেশ আবার সঠিক পথে চলতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আবার প্রতিষ্ঠা হয়। ঘুরতে থাকে দেশের উন্নয়নের চাকা।
২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্লাটফর্ম চারদলীয় জোট রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের অপশাসনে দিশেহারা হয়ে উঠে বাংলার মানুষ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার জনসভায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করে তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়। তবে এটিই একমাত্র নয়, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অন্তত ২০ বার হত্যা চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, রাষ্ট্র পরিচালনায় যার সুনিপুণ দক্ষতা, দেশপ্রেম যার সাফল্যের মূলমন্ত্র, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে যার নিত্য সাধনা, পারিবারিক বিপন্ন অবস্থায় থেকেও বৈরি রাজনৈতিক পরিবেশে যিনি নিজ দলের ও দলেই বাইরের রাজনীতি সামলেছেন আসাধারণ প্রজ্ঞায়, স্বৈরতন্ত্রের রক্তচক্ষু যিনি উপেক্ষা করেছেন অবলীলায়; তাঁর কাছে কোনকিছুই অসাধ্য নয়, অজেয় নয়। তাই যতবারই তাকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, ততবারই তিনি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছেন। যাঁর পিতা ছিলেন বাংলার জনগণের মুক্তির দিশারী, তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে কখনও পিছপা হবেন না, এটাইতো স্বাভাবিক।
স্থিতধি রাজনীতিক শেখ হাসিনা, ক্যারিশমাটিক লিডার শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভূমিধস জয় এনে দিয়েছিলেন। সেবার আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩০টি আসনে জয় পেয়েছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুন্সিয়ানার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দূরদর্শী রাজনীতিক শেখ হাসিনা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ে আসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক শেখ হাসিনার হাত ধরেই এ ধারাবাহিক বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে।
গত দেড় দশক সরকারের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ সময়ে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিশ্বাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এ উন্নয়ন অগ্রাযাত্রা দেশের আর্থসামজিক অগ্রগতির অনবদ্য মাইফলক। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং পরবর্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশে হতে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করেছে। এটি বাংলাদেশের বড় অর্জন। গত ১৪ বছরে দেশে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশের বেশি। স্বাধীনতার পর মাত্র ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে যাত্রা শুরু হওয়া বাংলাদেশের জিডিপি আটত্রিশ বছর পর ২০০৯ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার হয়। গত ১৪ বছরে জিডিপির আকার ২০০৯ সালের তুলনায় চার গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৬০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। জিডিপির আকার অনুযায়ী ২০০৮-০৯ সালে বাংলাদেশ ছিল ৬০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ১৪ বছরের ব্যবধানে দেশ আজ বিশ্বের ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
এ ধারাবাহিকতায় ২০৩৭ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের ডিসেম্বর ২০২২ এর প্রতিবেদন উল্লেখ করেছে। ২০০৭ সালে দেশের মোট কর্মসংস্থান ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নতুন ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে মোট কর্মসংস্থান দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ জনে। বেকারত্বের হার ২০১০ সালের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হতে ২০২২ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। পণ্য ও সেবা রফতানি আয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে চার গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৭-০৮ অর্থবছরের ৬৮৬ মার্কিন ডলার হতে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, অথচ গত ১৪ বছরে নানা বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে অর্ধেকের বেশি কমে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। এ সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে তিন-চতুর্থাংশ কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৭৩ বছর হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না- এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। অচিরেই অন্য জেলাগুলো গৃহহীনমুক্ত হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, সমুদ্রসীমা জয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভূমিহীন ও গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, নতুন নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু আর ঢাকায় বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নিমার্ণের সাফল্যসহ স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে যাত্রা আমাদের জন্য বিস্ময়করতো বটেই, বিশ্বের কাছেও বিস্ময়।
বাংলাদেশ তাই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির একটি বড় অংশে পরিণত হয়েছে। এতো সব বড় বড় অর্জনের নেপথ্যের কারিগর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এসব অর্জনের স্বীকৃতিও মিলেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিশ্ব নেতারা এবং বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের প্রশংসা করেছেন অকুন্ঠভাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘Bangladesh is an example of economic progress and a country of great hope and opportunity।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্ট্রিন ট্রুডো বলেছেন, ‘Bangladesh has made incredible progress. It spurred economic growth, reduced poverty, increased access to education and health resources and built new opportunities for the people।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘Bangladesh is showing its dynamism to the world under Prime Minister Hasina’s leadership, proving wrong those who had objected to the creation of Bangladesh, looked down upon the people of Bangladesh, and those who had apprehended the existence of Bangladesh।’
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী প্রত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘এই নারী একটি শক্তির নাম’ শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বাংলাদেশের বিগত এক দশকের অসামান্য অর্জনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ তিনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’ বিশ্বব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক সভাপতি ডেভিড ম্যালপাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশই দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে পারে।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে সম্প্রতি বলেছেন, ‘সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন।’
অনেক বৈরি সময়, অনেক চড়াই-উৎরাই, অনেক ত্যাগ আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অনেক সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ এমন একজন নেতা পেয়েছে, যার সমকক্ষ দ্বিতীয় কেউ নেই। কী রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায়, কী সংকট মোকাবিলায়, কী প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে, কী রাষ্ট্র পরিচালনার মুন্সিয়ানায়, কী কূটনৈতিক দূরদর্শিতায়, কী মানবিকতায়- সব জায়গায় তিনি অনন্য। বার বার মৃত্যর মুখোমুখি হয়েও তিনি অবিচল থেকেছেন, ফিরে এসেছেন আরও বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে, অরও বেশি দৃঢ় মনোবল আর শক্তি সঞ্চয় করে। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন অসম্ভব। তিনিই পরিবর্তনের অগ্রদূত, তিনিই আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার।
এ বিষয়টিও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সোনার বাংলা নিয়ে এখনও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। কী দেশে, কী বিদেশে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সুযোগ পেলেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে। বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনায় না থাকলে এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মমর্যাদা আবারও ভূলুন্ঠিত হবে, আবারও জঙ্গিবাদের উত্থান হবে, এদেশ আবার অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে, আবার দুর্নীতির মহোৎসব হবে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ভয়ংকর উত্থান হবে, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ হবে-আজ সব সচেতন মানুষের মনেই এই আশঙ্কা জাগে। যারা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, যারা কোন স্বার্থের নাগপাশে নিজের বিবেক বিসর্জন দেননি, দেশপ্রেম এখনও যাদের রক্তে-মগজে নিত্য দোলা দেয় এমন মুক্ত মানুষরাও আজ ভাবেন, বাংলাদেশে এখন শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই এবং খুব নিকট ভবিষ্যতে তাঁর বিকল্প তৈরি হবে এমন সম্ভাবনাও নেই। শেখ হাসিনার একমাত্র বিকল্প শেখ হাসিনা নিজেই। তাই একথা আজ সর্বজনবিদিত যে, ‘বাঙালির স্বপ্নসারথী শেখ হাসিনা আজও অবিকল্প-অপ্রতিদ্বন্দ্বী’।
লেখক: মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
সৌজন্যেঃ সময় নিউজ