1343
Published on আগস্ট 7, 2023মনে আছে আপনাদের, দুর্নীতির দায়ে মালয়েশিয়ায় পলাতক খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সহমর্মিতার জায়গা থেকে শোক জানাতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া । ফলে বাসার সামনে অপেক্ষা করে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। এটাই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পার্থক্যের একটি নমুনা।
পৃথিবীর সব দেশেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যতা থাকলেও, বাংলাদেশে এর ধারের কাছেও যায় না বিএনপি। কারণ, এরা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে এটি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এরা সবসময় তাই সন্ত্রাসের মাধ্যমে সবকিছু করতে চায়। এরা জনগণ এবং জনমতকে কখনোই তোয়াক্কা করে না। এরা ভদ্রতা ও সামাজিকতার ধারও ধারে না।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় আবারো বিএনপির অরাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদী আচরণ প্রকাশ্যে এসেছে।
দিনটি ছিল ২৯ জুলাই। সমাবেশের নামে আবারো গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা। নাশকতা থামাতে একপর্যায়ে লাঠিচার্জ করে নাশকতাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। দ্বিপাক্ষিক উত্তজনার সময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পড়ে গিয়ে সামান্য আহত হন। পরে সৌজন্যতা দেখিয়ে পুলিশ তাকে ডিবি অফিসে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা এবং আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে। এমনকি সেদিন কোনো সংঘর্ষ ছাড়াই নিজের শারীরিক সমস্যার কারণে রাজপথ থেকে হাসপাতালে যান আরেক বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমান। তখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধির মাধ্যমে ফল পাঠিয়ে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের কথা জানান।
দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক শিষ্টাচারের এসব ঘটনায় প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতানেত্রীদের যেভাবে রাজপথে ফেলে পেটানো হয়েছে, তার প্রতিশোধ না নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সৌজন্যতা দেখানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু এই সুস্থ ধারার ইতিবাচক রাজনীতি চর্চার ধারাটি পছন্দ হলো না বিএনপির। তারা পরবর্তীতে এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে নাটক বলে আবারো নোংরা রাজনীতির আশ্রয় নেয়।
অথচ বাস্তবতা হলো, বিএনপি কখনোই সামান্য রাজনৈতিক সৌজন্যতা কিংবা শিষ্টাচার দেখায়নি। নিয়মিত আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতানেত্রীদের রাজপথে ফেলে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তারা। টেনে হিঁচড়ে কাপড় ছিড়ে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে নারী নেত্রীদের ওপর। এমনকি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে ও গুলি করে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ২৪ জনকে হত্যা এবং তিন শতাধিক ব্যক্তির অঙ্গহানির পরেও নোংরা রসিকতায় মেতেছিলেন স্বয়ং খালেদা জিয়া এবং তার এমপি-মন্ত্রীরা। এটাই বিএনপি!
সেদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড মেরে বঙ্গবন্ধকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রাণ দিয়ে গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলে, আবারো গুলি শুরু হয় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে। এমনকি আহত শেখ হাসিনাকে নিয়ে তার বুলেটপ্রুফ গাড়িটি যখন দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিল, তখনও প্রথমে গাড়ির কাচে এবং পরে গাড়ির দুই চাকায় গুলি করে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে হামলাকারীরা। এরমধ্যেই বিএনপি সরকারের হাইকমান্ডের নির্দেশে হামলাকারীদের না খুঁজে হতাহতের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপরেই লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছোড়া শুরু করে পুলিশ। এর মাধ্যমে হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় খালেদা জিয়ার সরকার।
এরপর 'ক্রাইম সিন' সংরক্ষণ না করে দ্রুত পানি ঢেলে দিয়ে আলামত নষ্ট করা হয়। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অবিস্ফোরিত একটি গ্রেনেড তদন্তের জন্য সংরক্ষণ করতে চাইলে সেই কর্মকর্তার ওপরেও নেমে আসে নির্যাতন।
জেনে অবাক হবেন যে, এরকম ভয়াবহ একটি হামলায় শতাধিক মানুষ যখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছিল, তখনও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ থেকে কোনো জরুরি চিকিৎসা না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে।
অমানবিক আচরণের শেষ নয় এখানেই। সেই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মামলা করতে গেলেও হয়রানি করা হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। বিএনপি সরকারের নির্দেশ না থাকায় রমনা ও মতিঝিল উভয় থানাই মামলা নিতে অস্বীকার করে।
এতো বর্বর একটি ঘটনায় জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত তুলতে দেয়নি বিএনপির এমপি-মন্ত্রীরা। উল্টো শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে বোমা নিয়ে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন নোংরা রসিকতায় মত্ত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমনকি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে জজ মিয়া নামের এক দরিদ্র অসহায় মানুষকে ফাসিয়ে দিয়ে ২১ আগস্টের নারকীয় ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয় বিএনপি সরকারের নির্দেশে। এটাই হলো রাজনীতির নামে বিএনপির খুন-ষড়যন্ত্রের সন্ত্রাসবাদ।
অথচ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তদন্তে জানা যায়, অন্যতম হামলাকারী জঙ্গি তাজউদ্দিন ছিল বিএনপির উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ভাই। হাওয়াভবনে গিয়েও একবার বৈঠক করেছিল তারা। পরবর্তীতে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ব্যর্থ হওয়ার পর, তারেক রহমানের নির্দেশে তাজউদ্দীনসহ অন্য খুনিদের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন খালেদা জিয়ার এপিএস ডিউক।
প্রকৃতপক্ষে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই তারা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনগণের ওপর আস্থা না রেখে সবসময় খুন ও হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমেই জবরদখল করতে চেয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদীরা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার এবং সৌজন্যতা জানেও না, মানেও না। শত শত মানুষকে কখনো রাতের আঁধারে বিনাবিচারে ফায়ারিং স্কোয়াডে খুন, আবার কখনো পেট্রোল বোমা ছুড়ে হত্যা করাইটাই বিএনপির রাজনৈতিক বর্বরতা! এরা শুধু বর্বরতা বোঝে, সৌজন্য কিংবা সহমর্মিতা নয়। তাই এই তারেক গংদের হাতে বাংলাদেশের জনগণ ও মানুষের ভবিষ্যত নিরাপদ নয়।