যেভাবে খুনি ও বোমাবাজ জঙ্গিদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপি-জামায়াত সরকার

904

Published on মে 31, 2023
  • Details Image

২০০৬ সালের ২ এপ্রিলের জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, দেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্ত্রাসীদের পরিবারের অধিকাংশই জামায়াত ও জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিএনপির এমপি-মন্ত্রীরা নাশকতামূলক কার্মকাণ্ড ও আওয়ামী লীগ দমনের জন্য সরাসরি এই জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুজ্জামানের উপস্থিতিতে বিএনপির সভায় জেএমবির ক্যাডার জাবেদ ইকবাল ওরফে মুহাম্মদের মুক্তির জন্য দোয়া করা হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা, বিচারপতি হত্যা এবং চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলার প্রধান আসামি এই জাবেদ ওরফে মুহাম্মদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় জেমবির কমান্ডার। তার পিতা জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নেতা মাওলানা আবদুল আউয়াল।

২০০৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির সংবাদে দেখা যায়, জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতারা ছাত্রজীবনে শিবিরের নেতা ছিল। এমনকি অনেক শীর্ষ জঙ্গির পিতা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও আল বদর বাহিনীর কমান্ডার। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সঙ্গে তাদের সথ্য গড়ে ওঠে। ১৭ আগস্ট গোপালগঞ্জে বোমা হামলার হোতা জিয়াউর রহমান ওরফে সাব্বির ওরফে সাগরের ঘটনাটিও তেমন। এই সাগরের বাড়ি নাটোর জেলার শাইলকোন গ্রামে। মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালে সে ছাত্রশিবিরের সাথী ছিল। পরবর্তীতে সে জেএমবিতে যোগ দেয় এবং গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার দায়িত্ব পায়।

২০০৬ সালের ১১ মার্চের সংবাদে দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত সরকারের নির্দেশে প্রশাসনের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতাতেই রাজশাহী-নওগাঁর বিস্তৃত অঞ্চলে নৃশংস সন্ত্রাস চালায় বাংলা ভাইয়ের জঙ্গিরা। জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমান প্রকাশ্যে বিএনপির এমপির বাসা, ইউপি চেয়ারম্যানের অফিস, সরকারি দফতর এবং অফিস-আদালতে গিয়ে বৈঠক করতো। ২০০৪ সালে রাজশাহীর বাগমারা ও নওগাঁর রানীনগর ইউপি ভবনে বসে প্রকাশ্যে নাশকতার পরিকল্পনা করে শীর্ষ জঙ্গিরা। এসব বৈঠকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত থাকতো। দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে ছবিসব এসব বৈঠকের সংবাদ ছাপা হয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার এসব দেখেও না দেখার ভান করে জঙ্গিবাদকে উস্কে দিয়েছিল।

এমনকি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী জেএমবির হামলার পর বিএনপি নেতার বাড়িতে গোপন আশ্রয় দেওয়া হয় বাংলা ভাইকে। এসময় জেএমবিকে জামায়াতের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাবও দিয়েছিল জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু জেএমবির সদস্যরা স্বাধীনভাবে কর্ম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। তবে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে আগের মতোই ভবিষ্যতেও তারা জঙ্গিবাদি কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন অপারেশনে জামায়াত-শিবির এবং জেএমবির ক্যাডাররা যৌথভাবে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সহমত হয়।

জামায়াতের সঙ্গে জেএমবির ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা প্রকাশের পর বিএনপির সঙ্গেও তাদের গোপন আঁতাত কোনোভাবেই গোপন রাখা সম্ভব ছিল না। নির্যাতন, হত্যা ও লুটের শিকার পরিবারগুলো সরাসরি বিএনপি-জামায়াত সরকারের ছত্রছায়ায় জেএমবি ও বাংলা ভাইয়ের সন্ত্রাস পরিচালনার তথ্য ফাঁস করে দিতে থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই খালেদা জিয়ার তিন মন্ত্রী, এক এমপি এবং রাজশাহীর মেয়রের নাম উঠে আসে। নওগাঁর রাণীনগর ও ভোপাড়ার ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা ও প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির তাদের নামে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নের জন্য জঙ্গিদের লেলিয়ে দিয়েছিল।

২০০৬ সালের ১৫ জুনের সংবাদে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে নওগাঁ অঞ্চলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালায় জেএমবির জঙ্গিরা। এমনকি আত্রাই-রানীনগরের সংখ্যালঘু যুবকদের ভয় দেখিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে তারা। এসব নির্যাতনের ঘটনা ও একজন সাবেক সেনাসদস্যকে হত্যার ঘটনায় জেএমবি সন্ত্রাসী রুস্তমের বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সথ্যের কারণে জঙ্গিনেতা শায়খ আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আউয়াল ১৭ আগস্টের বোমা হামলার পর দীর্ঘদিন আত্রাইয়ের ভরতেতুলিয়া গ্রামে রুস্তমের চাচা খলিলুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয়ে ছিল। রুস্তম ও তার চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম প্রতিমন্ত্রীর সরাসরি শেল্টারে জেএমবির কার্যক্রম চালিয়ে যায় পরে।

২০০৫ সালের ৮ এপ্রিলের খবরে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে বোমাবাজ জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের হরকত উল জিহাদের সদস্যদের অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বিএনপি নেতাদের সরাসরি নেতৃত্বে। বিএনপি নেতা মাওলানা আবদুল খালেকের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল বলে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন মোড়েলগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক খান আলতাফ হোসেন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম তালুকদার।

২০০৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বরের সংবাদ জানায়, সারাদেশে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত খুলনা অঞ্চলের জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী শোয়ের ওরফে রিপনের পিতা মাওলানা আব্দুল ওহাব হলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আধ্যাত্মিক গুরু, বুলবুলে বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে জামায়াতের মতাদর্শ প্রচার করতেন তিনি। সেই সূত্রে গুরু ওহাবের পুত্র শোয়েবের সঙ্গে নিজের পিরোজপুরের এক আত্মীয়ার বিয়ে দেন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। দিনে জনযুদ্ধের কমান্ডার হিসেবে থাকলেও রাতে ধর্মীয় জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করতো এই শোয়েব। জনযুদ্ধের খুলনা অঞ্চলের অন্য নেতারা জানান, শোয়েবের দুই ভাই সুমন ও কামরুলও এই জঙ্গিবাদী হামলার সঙ্গে জড়িত। কামরুলকে র্যাব গ্রেফতার করলেও সাঈদীর সরাসরি সুপারিশে স্বয়ং খালেদা জিয়ার নির্দেশে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।

২০০৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংবাদে দেখা যায়, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী নিধনের অংশ হিসেবে রাজশাহীর বাগমারায় ২২ জন ব্যক্তিকে হত্যা করে বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি বাহিনী, গুম করে ১০ জনকে, অমানুষিক নির্যাতনে আহত ও পঙ্গু হয় শতাধিক। এমনকি প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় সহস্রাধিক মানুষ। নওগাঁর রানীনগরের আবদুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যার পর বগুড়ার নন্দীগ্রামে নিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা এবং মায়ের সামনে আত্রাইয়ের ছাত্রলীগ নেতা খেজুর আলীকে চার টুকরো করে পুঁতে ফেলার ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের পরও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলা ভাইকে নির্দোষ এবং সরকার সমর্থিত টেলিভিশনে তাকে শান্তির দূত বলে দাবি করেছে।

বাংলা ভাইয়ের সহকারী ড. গালিব এবং তার ভাগ্নে বোমারু মহসীন তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাজশাহী অঞ্চলের মসজিদকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটালেও কখনো তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উল্টো বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতা এমপি-মন্ত্রী-মেয়রেরা তাদের ক্লিনচিট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালানো থেকে নিবৃত রেখেছে। এমনকি ২০০৪ সাল থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আলোকনগর গ্রামে রাজাকার রমজান আলীর বাড়িতে ঘাঁটি গড়ে টর্চার সেল পরিচালনা করে বাংলা ভাই। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে সর্বহারা বলে অপবাদ দিয়ে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। জামায়াত অধ্যূষিত সেই গ্রামে জেএমবির ৬০-৭০ ক্যাডার মিলে বাংলা ভাইয়ের সেই বাড়ির প্রহরীর কাজ করতো। সেখানে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল পলাশ গ্রামের বাবু নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে নিজের হাতে প্রকাশ্যে জবাই করে বাংলা ভাই। এরপর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এভাবেই প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় ২২ জনকে। কপিকলে উল্টো করে বেঁধে মানুষকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হতো, মাইকে সেই আর্তনাদ শোনানো হতো গ্রামবাসীকে। মারা যাওয়ার পর আলোগনগর গ্রামের মাঠে ফেলে রাখা হতো সেই লাশ। অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শেখ ফরিদকে পিটিয়ে হত্যা- এসব ঘটনা নিয়মিত পত্রিকায় এলেও খালেদা জিয়ার সরকার বাংলা ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর ও ৪ অক্টোবরের পত্রিকার খবরে জানা যায়- গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৫ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা, উদীচী, রমনা বটমূল, ১৭ আগস্টের দেশব্যাপী বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ হরকত-উল-জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নানকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করলে, তা নিয়ে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হাসিঠাট্টায় মেতে ওঠে বিএনপি-জামায়াতের এমপি-মন্ত্রীরা। কোটালিপাড়া থানা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মতিয়ার রহমান মতির ভাই ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকত উল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নানকে নিতান্তই সরজ-সরল মানুষ বলে দাবি করে। এমনকি বিএনপির সংসদ সদস্যরা দাবি করেন যে, আওয়ামী লীগ নিজেরাই বোমা পুঁতে রেখে নিস্পাপ হরকত উল জিহাদের ওপর চাপাচ্ছে! অথচ আটকের পর তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হান্নান জোট সরকারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা জানায়।

হান্নানকে আটকের পর তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব জানায়, জঙ্গি হান্নান ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পরেও দেশ ছেড়ে না পালানোর কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা বলেছে। জোট সরকারের অন্যতম শরিক ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। আলতাফ চৌধুরী তখন ক্ষমা প্রার্থনার জন্য দরখাস্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী কোটালিপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কার্যালয় এবং তারেক রহমানের হাওয়াভবনে মুফতি হান্নানের পক্ষে সুপারিশ করেন বিএনপির প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা, রাজশাহীর মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের সামনে মুফতি হান্নান এসব তথ্য প্রকাশ করায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে খালেদা জিয়া সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতার তথ্য জনগণের সামনে চলে আসে।

১ অক্টোবর আটকের পর মুফতি হান্নান আরো জানায়, হরকত উল জিহাদের জঙ্গি নেতারা জেএমবির সঙ্গে মিলে একসঙ্গে অপারেশন পরিচালনা করতো। তারা ধীরে ধীরে জেএমবিতে যোগ দেয়।

২০০৫ সালের ৪ অক্টোবরের পত্রিকায় জানা যায়- শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টাকারী, রমনা বটমূল, উদীচী ও সারাদেশে বোমা হামলার অন্যতম হোতা মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তার ভাই মতিয়ার রহমান মতি কোটালিপাড়া থানা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। বিএনপি নেতা এই ভাইয়ের মাধ্যমে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার নির্দেশনা গ্রহণ এবং কোনো অপারেশন শেষ করার পর তাদের কাছে রিপোর্ট পেশ করতো মুফতি হান্নান।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত