860
Published on মে 16, 2023২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারির সচিত্র প্রতিবেদনে গণমাধ্যমগুলো জানায়, টানা কয়েক বছর পানি-সার-বিদ্যুতের অভাবে দেশের কৃষকসমাজ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। প্রতিবছর চাষাবাদের মৌসুমে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েও তাদের এই সমস্যার সমাধান হয়নি। সরকার কৃষকদের চোখের পানিকে বারবার অবজ্ঞা করায় বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন তারা। কিন্তু বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনে নামা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাটে কৃষকদের ওপর পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ফলে তাদের আকস্মিক গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৭ জন সাধারণ মানুষ।
৫ মার্চ ২০০৬ সালের জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে বলা হয়, নিয়মিত বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে জনতা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করলে সেখানে খালেদা জিয়া সরকারের নির্দেশে হামলা চালানো হয়। এসময় গুলিতে নিহত হন ২ জন এবং আহত হন শতাধিক সাধারণ মানুষ। এমনকি গ্রেফতার এড়াতে চিকিৎসা আহতারাও হাসপাতালে না গিয়ে গোপনে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছেন।
৬ মার্চের পত্রিকায় দেখা যায়- সার, বিদ্যুৎ, ডিজেল এবং পানির সঙ্কট শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও তীব্র আকার ধারণ করায় জনজীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। কয়েক বছর ধরে দাবি জানালেও খালেদা জিয়ার সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করায় প্রতিবাদে কৃষক-জনতা এক হয়ে সড়কে নেমে আসে। এসব নাগরিক প্রতিবাদ ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীদের মাঠে নামায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ৫ মার্চ খুলনার রূপসায় বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনের সময় জোট সন্ত্রাসীদের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এর প্রতিবাদে স্থানীয় এমপিকে ঘেরাও করে আমজনতা।
বিদ্যুৎ ও সার সঙ্কটের প্রতিবাদে যশোর-মাগুরা ও যশোর-খুলনা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে বোরো চাষীরা। তীব্র লোডশেডিংয়ে প্রতিবাদে নড়াইলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা বই-খাতা নিয়ে মিছিল করে। কুষ্টিয়া, বগুড়া ও সাতক্ষীরায় পানি ও বিদ্যুতের দাবিতে সড়কে নেমে আসে জনতা। নওগাঁয় পাঁচ হাজারেরও বেশি কৃষক বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করে। সংসদ সদস্য ছালেক চৌধুকেও অবরুদ্ধ করে তারা।
৭ মার্চের সংবাদ জানায়, এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে ঠিকমতো বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে আন্দোলনে নামে মুন্সীগঞ্জবাসী। ৫ মার্চ থেকে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী এবং খালেদা সরকারের নির্দেশে পুলিশের যৌথ হামলায় ৯ জন সাধারণ মানুষ নিহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। কৃষকরা জানান, সিন্ডিকেটের কারণে সারের দাম নাগালের বাইরে। এরপরেও অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে কেউ সার নিতে পারলেও, ডিজেল সমস্যার কারণে জমি ভেজাতে পারছেন না। আর বিদ্যুতের অবস্থা তো দীর্ঘদিন থেকেই অন্ধকারে। ফলে ধানের জমি ফেঁটে চৌচির হয়ে যাওয়ায় সব হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন কৃষকরা।