1632
Published on ফেব্রুয়ারি 16, 2023২০০৬ সালের ২২ নভেম্বর বিএনপির দলীয় কোন্দলে যুবদল কর্মী মোহনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখে সবাই বিএনপির দুই এবং ইসলামি ছাত্র শিবিরের একজনকে শনাক্ত করে। কিন্তু তারেক রহমানকে ম্যানেজ করে সেই বিচার স্তব্ধ করে দেয় বিএনপির তারেক-ঘনিষ্ঠ নেতারা। বিশেষ করে বিএনপির এমপি এবং সন্ত্রাসীদের গডফাদার হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর মাধ্যমে এসব খুনিদের নিয়েই নিজের বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলে তারেক রহমান। এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়েই প্রতিমাসে বগুড়ায় নিয়মিত মহড়া দিতো সে।
২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এই খুনি চক্রের আদ্যোপান্ত ছবিসহ প্রকাশিত হওয়ার পর শিউরে ওঠে দেশের মানুষ।
মোহন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পৌর কমিশনার হিমু এবং সদর উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ সাজুও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শো-ডাউন এবং ব্যানার-পোস্টারে প্রচারনা অব্যাহত রাখে এলাকায়। এমনকি এর আগেও একাধিক ধর্ষণ ও চাঁদাাবজির মামলা আছে সাজুর নামে। এই হিমু ও সাজু তারেক রহমানের পাশে থেকে নিয়মিত প্রটোকল দিতো বগুড়ায়।
মোহনের খুনিদের একজন ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ডলু। ১৯৯৭ সালে বিএনপি অফিসে সংঘটিত আনোয়ার হত্যারও অন্যতম আসামি সে। আরেক খুনি বিএনপির ভাগ্নে মিলন এর আগেও যুবদলের ঠাণ্ডু এবং শাহ সুলতান কলেজের ছাত্র সুমন হত্যা-মামলার অন্যতম আসামি। খুনি শিবির ক্যাডার মিজান এরপরেও প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করেছে।
যুবদল কর্মী তৌহিদ হত্যার আসামি মোশাররফকে সংসদ ক্যাফেটেরিয়ায় ঠিকাদারি পাইয়ে দেয় তারেক রহমান। তৌহিদের ভাই শহর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুলও মোশাররফদের শাস্তি দাবি করতে পারেননি খুনিরা তারেক রহমানের প্রভাবে নিরাপদে থাকার কারণে।
বগুড়া জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শোকরানাও জাসদ কর্মী কিবরিয়াকে হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় লাখ লাখ টাকার সরকারি ত্রাণসামগ্রী উদ্ধার করা হয় কোটিপতি শোকরানার ব্যক্তিগত গুদাম থেকে। খুনি মোশাররফ, শোকরানার পাশাপাশি মাদক ব্যবসার দায়ে সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদের সাথেও তারেকের অনেকগুলো ঘনিষ্ঠ ছবি পাওয়া গেছে। এই নূর মোহাম্মদও জাসদ ছাত্রলীগ নেতা লাকি হত্যামামলার অন্যতম আসামি।
তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল লতিফ জানান, প্রকাশ্যে ছাত্রদলের মিছিল থেকে সাতমাথায় জাসদ নেতাদের যারা হত্যা করেছে তাদের অধিকাংশই তারেকের সাথে ঘোরে। এই খুনিরা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে এবং এলাকায় চাঁদাবাজিসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক খুনের দায়ে গ্রেফতার হওয়া মিল্টন ও নতুনের হাতে গাবতলীর দায়িত্ব অর্পণ করে তারেক রহমান স্বয়ং। দরপত্র ও হাটের ইজারার জন্য খুনোখুনির দায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা নতুনকে তারেকের সুপারিশে তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সারের ডিলারশিপ নিয়ে কালোবাজারি করার জন্য চিহ্নিত সন্ত্রাসী চাকু লিটনকে চাঁদাবাজির দায়ে আটক করেছিল পুলিশ, কিন্তু তারেকের আস্থাভাজন নেতা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর সুপারিশে তাকেও ছাড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। এরপর থেকে তারেকের নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে বগুড়ায় তারেকের পাশে নিয়মিত দেখা যায় এই খুনীদের। মোটরশ্রমিক মানিক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পল্লী মামুন, বগুড়ার ১ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও অর্ধডজন খুনের মামলার আসামি হিমু, ১১ নং ওয়ার্ড কমিশনার জোড়া খুনের আসামি শিপার, শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরু-জাকির-আমীরুল তারেকের রহমানের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াতো পুরো বগুড়া।
প্রতিমাসে বগুড়ায় গেলে এসব সন্ত্রাসীদের নিয়েই প্রশাসন ও পুলিশের সামনে সরকারি কাজ তদারকি ও লুট-বণ্টন করতো তারেক। ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরে শুধু বগুড়াতেই ২০-এর অধিক খুন সংঘটিত হলেও, কোনোটারই বিচার করা সম্ভব হয়নি। খুনিরা সবাই 'ভাইয়ার লোক' বা তারেকের সাহেবের বাম হাত হিসেবে পরিচিত হওয়ায় এবং বগুড়ায় তারেক রহমানের চারপাশে দাঁড়িয়ে নিয়মিত মহড়া দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অসহায় হয়ে পড়েছিল এই সংঘবদ্ধ খুনি-ধর্ষক, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী চক্রের কাছে।