1418
Published on জানুয়ারি 29, 2023২০০১ সালের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের আগে দিনভর দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবর-দখল ও ভয়াবহ নাশকতা চালাতে থাকে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল। আর রাতের বেলা জনসমাবেশ করে জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়ান খালেদা জিয়া। ছাত্রদল-শিবিরের নির্মম নির্যাতনে যখন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষাক-শিক্ষার্থীরা অসহায় সময় কাটাচ্ছিলেন, খালেদা জিয়া তখন এসব নাশকতাকে উস্কে দিয়ে জামায়াতের বর্বরতাকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এরফলে দেশজুড়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে সাধারণ নাগরিকরা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে জানা যায়, নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নেওয়ার জন্য সেখানে অসাংবিধানিকভাবে পেশীশক্তির প্রভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে ছাত্রশিবির। শিবির সভাপতি আলাউদ্দিন ও সেক্রেটারি দিদারুল প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে বলে যে, উপাচার্য যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শিবিরের হাতে তুলে না দেয়, তাহলে তার বাসায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে তাকে বন্দি করা হবে। এমনকি বিশ্ববিদ্যারয়ের বাস পর্যন্ত চলতে দেয়নি শিবিরের সন্ত্রাসীরা। রগ কাটার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদেরও অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেয় এই বর্বর পিশাচরা।
এর আগে, ১৯৯০ সালে চাকসু নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জনপ্রিয় ভোটে সর্বদলীয় জোটের কাছে হারার পরও ব্যাপক নাশকতা চালিয়েছিল শিবির। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, সেখানে ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হত্যা ও কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয় তারা। এরপর পুরো ক্যাম্পাসে ভাঙচুর ও নাশকতা চালায়। এমনকি তৎকালীন উপাচার্য ড. আলমগীর সিরাজের বাড়ির বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ কেটে দিয়ে অবরুদ্ধ করে তাকে। এমনকি উপাচার্যকে বন্দি করে বাসভবনকে সাবজেল ঘোষণা করে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। একের পর এক রাশ ফেলতে থাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এসব দেখেও না দেখার ভান করেন। উল্টো স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণে চবির উপাচার্য ড. আলমগীরকে বরখাস্ত করা হয় খালেদা জিয়ার নির্দেশে। পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতায়, মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতাদের ফাইনাল পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে দেয়নি ছাত্রদল-শিবিরের গুণ্ডারা। রংপুর মেডিক্যালে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গেলে ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর নির্মম হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজেও শিবির-ছাত্রদল ও ড্যাব একযোগে হামলা চালায় অধ্যক্ষের ওপর।
শিবিরের আক্রমণের কারণে বরিশাল মেডিক্যালের শত শত শিক্ষার্থীও মেডিক্যালের বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দিতে পারেনি। এমনকি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পরীক্ষার হলে বসতে না দেওয়ার জন্য ক্যাম্পাস ঘিরে সশস্ত্র মহড়া চালায় এই বর্বর নরপিশাচরা। তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে শিবিরের সাথে হাত মিলিয়ে এসব নাশকতায় যোগ দেয় ছাত্রদল এ ড্যাব নেতারা।
এদিকে দেশজুড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করতে চূড়ান্ত নাশকতা চালাচ্ছিলো যখন শিবিরের ক্যাডাররা, ঠিক তখন রাতভর জামায়াতের জন্য ভোট চেয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খুলনায় নিজের জনসভা শেষে ক্লান্ত অবস্থাতেও দীর্ঘ জার্নি করে মোংলায় জামায়াত প্রার্থী আবু বকর সিদ্দিকের হয়ে প্রচারণা চালাতে যান খালেদা জিয়া। এসময় তার সঙ্গে ছিল ১৯৭১-এর ঘৃন্য ঘাতক ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল রাজাকার আলী আহসান মুজাহিদ। এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালে শেরপুরে নৃশসং বর্বরতা চালানো বদর কমান্ডার ও জামায়াত নেতা রাজাকার কামারুজ্জামানকেও মনোনয়ন দেন তিনি। এমনকি বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদকে অগ্রাহ্য করে সরাসরি জামায়াতের পাশে থাকার জন্য নির্দেশ দেন বিএনপিকে। এরপর ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিরতরণ এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে খুনি কামারুজ্জামান।