বিএনপি-জামায়াত অপশাসন: জবর-দখল, টেন্ডারবাজি, এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে ঢাকাকে অস্থির করে তোলে নাসিরউদ্দিন পিন্টু

1089

Published on নভেম্বর 19, 2022
  • Details Image

পিন্টুর নাম শুনলে - ভয়ে সেই স্থান ছাড়ে চলে যেতো লোকজন, রাজধানীর বুকেও এমন দিন গেছে একসময়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার শাসনামলের সামাজিক পরিস্থিতি এটাই। বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুর সন্ত্রাসের কথা বলছি। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল তাকে তারেক রহমান। হাওয়া ভবনের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে রাজধানীর টেন্ডার ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতো সে। এছাড়াও নিরীহ মানুষের জমি ও বাড়ি দখল, সরকারি নদী দখল, অর্থ পাচার, এসব ছিল তার প্রাত্যহিক ঘটনা। ২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এসব তথ্য জানা যায়।

২০০৭ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিরপেক্ষ তদন্তে পিন্টুর সীমাহীন অপকর্ম ও দুর্নীতির কিছু অংশ তথ্যপ্রমাণসহ প্রকাশ হয়ে পড়ে। জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের তালিকায় তারেক ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে শীর্ষ তালিকায় যারা আছে; তাদের অন্যতম একজন হলো এমপি নাসিরুদ্দিন পিন্টু। ২০০৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে হাওয়া ভবনে সিন্ডেকেট গড়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিএনপি নেতারা।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও পেশীশক্তি ব্যবহার করে দেশের নদীগুলোর ওপর জবর-দখল চালায় বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। ফলে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, নাব্য হ্রাস পায় নদীগুলোর, দীর্ঘমেয়াদের জন্য বিপর্যয় ঘটে দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর। এই নদী খেকোদের প্রধানতম একজন হলো নাসিরুদ্দিন পিন্টু। ২৫ জানুয়ারি ২০০৭ সালের প্রথম আলো পত্রিকায় ছবিসহ এবিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে উঠে আসে- ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর পাড় ঘেঁষে ৪০ কিলোমিটার এলাকায় জবর-দখল চালানো চক্রটি হলো- বিএনপির প্রতিমন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু; সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, নাসিরউদ্দিন পিন্টু, ওয়ার্ড কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজল।

পুরান ঢাকার দিকে মিটফোর্ড হসপিটালের পেছনের অংশে নদীতে একক দখল ছিল পিন্টুর। নদী ভরাট এবং শত শত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করে সে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাদের বারবার নোটিশ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। সরকারের ক্ষমতা দেখিয়ে আরও দ্বিগুণ গতিতে দখল চালিয়েছে।

এমনকি এতিমের সম্পদ দখল করতেও পিছপা হয়নি এই পিন্টুরা। ২০০৭ সালের ১৮ অক্টোবরের দৈনিক ইত্তেফাক জানায়, সন্ত্রাসী বাহিনীর শক্তি খাটিয়ে ঢাকায় দেড়শ বছরের পুরনো ওয়াকফ করা এতিমখানা দখল করে বিক্রি করে দিয়েছে বিএনপির এমপি নাসিরউদ্দিন পিন্টু। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও এতিমখানা পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুন নাহারের সহযোগিতায় লালবাগের সলিমুল্লাহ এতিমখানার দুই বিঘা জমি বিক্রি করে দেয় সে। এরপর সেই জমিতে একটি ১৬ তলা এবং একটি ২১ তরা ভবন নির্মাণ করে হাউজিং কোম্পানি। এলাকাবাসী বাধা দিলে পিন্টুর নির্দেশে সেখানে আনসার-ক্যাম্প স্থাপন করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রভাবশালী পিন্টুসহ বিএনপি নেতাদের প্রভাবের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই অবৈধ দখল এবং ভবন নির্মাণের কাজ থামাতে পারেনি। এই জবর-দখলের বিষয় জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান এবং সেনাপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

এছাড়াও, সিএনজি স্টেশন বসানোর নামে রাজধানীর রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জমির দখল নিয়েছিল যেকজন বিএনপি নেতা; তাদের মধ্যে অন্যতম এই পিন্টু। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়, ৬ এপ্রিলের জনকণ্ঠ এবং ১১ এপ্রিলের প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়- ২০০৩ সালে এসব জমি বরাদ্দ হয়, নিয়মানুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে স্টেশন স্থাপনের কথা থাকলেও ৩ বছরের বেশি সময়েও কিছুই করেনি তারা। ফলে স্টেশনের অভাবে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ির লাইন হতে শুরু করে, চরম দুর্ভোগে নিমজ্জিত হয় ঢাকার পরিবহন সেক্টর ও কর্মজীবী মানুষ।

সওজ এবং রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়- অনেকে তো জমি নেওয়ার পরেও স্টেশন স্থাপন করেনি, এমনকি ইজারার টাকাও শোধ করেনি। বিএনপি নেতাদেরই আরেকটি সূত্রে জানা যায়- যে নেতারা স্টেশনের জন্য জমি বরাদ্দ নিয়েছেন; তারাই আবার তাদের তাদের ভাই, বেয়াই, বন্ধুদের নামেও একাধিক স্টেশনের মালিকানা ও জমি বরাদ্দ নেয়।

পিন্টুর ইচ্ছার বাইরে কেউ টেন্ডার নিতে গেলে তার পরিণত হতো ভয়াবহ। এমনকি বাণিজ্য মেলা বা কিংবা কোরবানির পশুর হাটের টেন্ডারেও কেউ অংশ নিতে পারতো না। মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের বাইরে নিজস্ব বাহিনীর সশস্ত্র পাহাড়া বসাতো পিন্টু। শুধু অফিসের কর্মচারী ছাড়া আর কেউ অফিসে প্রবেশ করতে পারতো না। ফলে এককভাবে টেন্ডার পেয়ে যেতো সে। এভাবে পুরান ঢাকায় সালিশ-বৈঠকের নামে নিয়মিত স্বেচ্ছাচারিতা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে গেছে সে। এমনকি ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় পিন্টুর অনুগত বাহিনী। আজও সেসব কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠেন অনেকে

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত