917
Published on সেপ্টেম্বর 29, 2022হীরেন পণ্ডিত:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রায় এক যুগের বেশি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছে এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যে ইতিহাসের পথে হেঁটেছেন, সমসাময়িক ইতিহাসে কাউকে খুব একটা এভাবে দেখা যায় না। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে পারে বঙ্গবন্ধুর রক্তের একজন উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য তখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছিলো। এটা প্রয়োজন ছিলো আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। সবাই জনতেন শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। ইডেন গার্লস কলেজের ভিপি ছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন। তাই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রবাস জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকেই বানানো হলো দলের সভাপতি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর এদেশের মানুষের জন্য এক মাহেন্দ্রক্ষণ। শুভ জন্মদিন, দীর্ঘজীবী হোন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বিশ^নেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস। আওয়ামী লীগকে তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সকল রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছে। এই দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। এ দলের জন্মকাল থেকে শুরু করে এই ৭৩ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের স্বাক্ষর বহন করে।
এই উদ্যোগ শেখ হাসিনাকে সুযোগ করে দিয়েছিল দলকে ঐক্যবদ্ধ করার। সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ২১ বছর দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তুলেছিলেন সেটি হচ্ছে, তাঁর পরিবারের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ হাতে এলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে কাজ শুরু করলেন। প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তাঁর কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ^বাসী অবাক বিস্ময়ে দেখে। বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২১ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশে^ আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশে^র শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন একটি উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবেলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। একটি দেশের উন্নয়নে বিদ্যুতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনবরত বিদ্যুৎ ঘাটতি দেশের ধাবমান উন্নতির চাকাকে মন্থর করে দিয়েছিলো। অর্থাৎ দেশটিতে দীর্ঘকালের স্থায়ী বিদ্যুৎ সমস্যা, যার কোনো সমাধান পূর্ববর্তী সরকারগুলো দিতে পারেনি- আওয়ামী লীগ সরকার অত্যধিক ব্যয়ে হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। এ উৎপাদন শুধু গৃহস্থালি কাজেই নয়, বিদ্যুৎনির্ভর অন্যান্য মাধ্যমকেও সচল রেখেছে, যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে।
অপরদিকে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতি অভিযোগ থাকলেও সরকারকে সবচেয়ে স্বস্তি দিয়েছে কৃষিখাত ও তার ব্যবস্থাপনা। আমাদের মতো জনবহুল দেশে সীমিত কৃষিযোগ্য ভূমির সতর্ক ও যৌক্তিক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে সেটা হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এ কৃষি বিপ্লবের কারণেই ১৬ কোটি মানুষের দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। আজকের এই কৃষি বিপ্লবের শতভাগই আওয়ামী লীগের উদ্ভাবন।
আমাদের রাজস্ব, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রফতানি। ব্যক্তি মালিকানায় শুরু হলেও সরকারের আগ্রহেই এ দুই খাত যথেষ্ট গতি অর্জন করেছে। যার ফলে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের বেকার সমস্যারও অনেকটা সমাধান হয়েছে। রফতানিযোগ্য এমন সব পণ্য রয়েছে, যা শতভাগ ব্যক্তি উদ্যোগে রফতানি করা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পোশাক তৈরির কর্মপরিবেশকে গ্রহণযোগ্য রাখতে সরকার ও মালিকপক্ষের এখনও অনেক কিছু করার রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে বরাদ্দ বাতিল করলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করে। নিজস্ব অর্থায়নে সরকার সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেতুটির অস্তিত্বই এখন আমাদের সকলের কাছে মুখ্য। এই সেতু পাল্টে দিচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ও মেট্রোরেল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরে চলবে কাক্সিক্ষত ও স্বপ্নের মেট্রারেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এর অনুসরণ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছে।
একটানা বেশি সময় দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্বীকৃতি জাতিসংঘের এই এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার ২০২১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন অনেক স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। এর আগে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে অন্যতম সফল এবং অনুকরণীয় তিনজন নারী সরকার প্রধানের একজন নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। বিশ্বনেত্রীর হাত ধরেই এই দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে অল্প সময়েই। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। সন্তানের থেকে বেশি মমতায় ভালোবেসেছেন দেশকে। পিতার অসমাপ্ত কাজ যে সমাপ্ত করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আর ভবিষ্যতের আধুনিক বাংলাদেশ। এটি বর্তমান প্রজন্মেরও প্রত্যাশা। বেঁচে থাকুন আপনি এ দেশের মানুষের হৃদয়ে প্রেরণার উৎস হয়ে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক