1881
Published on সেপ্টেম্বর 29, 2022২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হত্যা, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ ও ধর্ষণ করতে শুরু করে। এমনকি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অর্থ ও তালিকা দিয়ে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে তারা। তারেক রহমানের নির্দেশনায় বিএনপির ৮ জন নেতার মাধ্যমে জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতো খালেদা জিয়ার সরকার। এমনকি মন্ত্রীদের চাপের কারণে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যও বাধ্য হয়েছিল জঙ্গিদের সহযোগিতা করতে। পুলিশের হাত দিয়ে জঙ্গিদের কাছে নিরাপদে অর্থ পাঠাতো বিএনপি সরকারের নেতারা। এমনকি কখনো পুলিশ এই জেএমবি জঙ্গিদের গ্রেফতার করলেও, সরকারের চাপে ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো, অথবা আদালত থেকে তাদের জামিন দেওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশ আসতো সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব তথ্য-প্রমাণ ফাঁস হয়ে পড়ে। ৩০ জানুয়ারি ২০০১ সালের প্রথম আলো পত্রিকায় তথ্য-প্রমাণ-নথিসহ এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ, প্রগতিশীল ব্যক্তি, শিক্ষক, বৃদ্ধিজীবী, নারী কর্মজীবী, আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র জঙ্গিরা। কিন্তু ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে বোমা হামলার পর আন্তর্জাতিকভাবে নজরে আসে তারা। এরপর বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেএমবির এই দুঃসাহস ও অর্থের উৎস সম্পর্কে গোপন তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জেএমবির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উঠে আসে বিএনপির মন্ত্রী-এমপিদের নাম।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে আসে, ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় নাটোরের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও তৎকালীন উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং রাজশাহীর আলোচিত বিএনপি নেতা ও সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সাথে। বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা বাংলা ভাইকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেয়। এমনকি ২০০৪ সালের এপ্রিলে শায়খ আবদুর রহমান এবং বাংলা ভাই ট্রাকে করে প্রায় ১৫০ জন কর্মী নিয়ে প্রকাশ্যে দুুলুর নাটোরের বাসভবনে গিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে। এসময় তাদের কাজে খুশি হয়ে দুলু তাৎক্ষণিকবাবে এক বান্ডিল টাকা উপহার দেয় বলেও জানায় বাংলা ভাই।
পরবর্তীতে র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাংলা ভাই জানায়, সংসদ সদস্য আবু হেনা তার ভাতিজার মাধ্যমে জেএমবির সাথে নিয়মিত যোগযোগ রক্ষা করে চলতো। জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য মিজানুর রহমান মিনুর সাহায্য চেয়েছিল বাংলা ভাই, এরপর এক কর্মীর মাধ্যমে এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিল মিনু। এমনকি সন্ত্রাসবাদ অব্যাহত রাখার জন্য পুঠিয়া থানার ওসি আনিসুর রহমানের হাত দিয়ে বাংলা ভাইয়ের কাছে ৩০ হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছিল বিএনপির সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা। গোয়ালকান্দি পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে ওসি নিজে এই টাকা বাংলা ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়। এসময় সার্কেল এএসপি আলমগির কবির সেখানে উপস্থিত ছিল।
আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শায়খ রহমান জানায়, বাগমারায় অভিযানের সময় তৎকালীন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল। তিনি বিএনপির নেতাদের নির্দেশ দিয়ে জেএমবিকে সাহায্য করতে বলেছিলেন। স্থানীয় বিএনপি নেতারা পরে এই ঘটনার কথা স্বীকার বলে বলেছেন, 'আমিনুল হকের কথার বাইরে যাওয়ার সামর্থ তখন কারো ছিল না। তাহলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতো।'
এমনকি তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী নওগাঁর আলমগীর কবিরের সাথেও নিয়মিত কথা হতো এবং তার বাসায় দাওয়াত খাওয়ার কথাও জানিয়েছে বাংলা ভাই। । এছাড়াও নওগাঁর এমপি শামসুল আমর প্রমাণিক এবং প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ড. ছালেক চৌধুরীর সাথে নিয়মিত মোবাইলে ফোনে যোগাযোগের কথাও স্বীকার করেছে বাংলা ভাই ও শায়খ রহমান। তারা জানায়, বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে বিভিন্ন হামলার জন্য বিএনপি নেতাদের সহযোগিতার এতো অর্থ উঠেছিল যে, দীর্ঘদিন ধরে অভিযান শেষ করার পরেও সাত লাখ টাকা বেশি হয়েছিল।
১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার পর ময়মনসিংহে আত্মেগাপনে চলে যায় বাংলা ভাই। সেসময়ও বিএনপির উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা, সামসুল আলম প্রমাণিক, ড, ছালেক চৌধুরী এবং রাজশাহী সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সাথেমোবাইল ফোনে যোগাযোগের কথাও স্বীকার করেছে। তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষার জন্য তাদের কাছে সুপারিশ করেছিল বাংলা ভাই। সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতারা ওপরের মহলে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দেয়। এরপর সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে চূড়ান্ত আত্মগোপনে চলে যায় বাংলা ভাই।
শায়খ আবদুর রহমান জানায়, বাগমারার নাশকতার পর চরমোনাই পীরের ছেলে মোসাদ্দেক বিল্লার সাথে দেখা করে সে। এরপর তাকে পীরের কাছে নিয়ে যায় মোসাদ্দেক। চরমোনাই পীর এসময় তাদের কার্যকলাপের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে।
শায়খ স্বীকার করে যে, ২০০৪ সালে হুমায়ন আজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছিল জেএমবি। এমনকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মদ ইউনুসকেও হত্যা করে তারা। তবে ফজলে হোসেন বাদশাকে হত্যার পরিকল্পনা করলেও তা ব্যর্থ হয়। এমনকি অনেক ব্যক্তিকে নিজ হাতে জবাই দিয়ে পুঁতে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনার কথাও জানায় শায়খ রহমান।
নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহীর এসপিরা তখন সরকারের নির্দেশে জেএমবির সব কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিয়েছে বলেও জানায় শায়খ। তবে এসপিরা এই দাবি অস্বীকার বলে বলেন, তারা এর সাথে জড়িত নন। তবে তাদের অধীনে কর্মরত কোনো কোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) এসবের সাথে জড়িত থাকতে পারে