840
Published on সেপ্টেম্বর 28, 2022অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব:
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা রকম লাইস্টাইল ডিজিজের প্রাদুর্ভাবে জর্জরিত আজকের বিশ্বে সুস্থভাবে ছিয়াত্তরতম জন্মদিন উদযাপন যে স্রষ্টার অশেষ কৃপা, একজন চিকিৎসক হিসেবে সেটা আমার ভালোই জানা। তার উপর আছে মরার উপর খাড়ার ঘা, চলমান কোভিড-১৯ অতিমারীর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। কাজেই আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতায় ছিয়াত্তরতম জন্মদিন উদযাপন নিঃসন্দেহে উদযাপনেরই বিষয়। আর তা যদি হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো টানা পরপর তিনবারের নির্বাচিত সফলতম একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন, তাহলে তো কথাই নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যা কিছু অর্জন আর এদেশ আর এ জাতির জন্য তার যতো বিসর্জন তার বর্ণনা তো দূরে থাক, সেই তালিকাটিও কোনো একটি প্রবন্ধের পরিসরের বিষয় নয়। আজকের এই দিনটিতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যখন ছিয়াত্তর, দেশজুড়ে আর দেশের সীমানা ছাড়িয়ে অসংখ্য-অজস্র লেখায় আর আলোচনায় যে বিস্তারিত আলোকপাত হবে সেই সমস্ত বিষয়ে, সে বিষয়ে আমার সন্দেহের অবকাশ শূন্যের কোঠায়। কাজেই সে নিয়ে লেখালেখিও আমার এই লেখার বিষয়বস্তু নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে আলোচনা আর লেখালেখির শুরুটা হয়েছে মাসের শুরু থেকেই। শোকের মাসটা কাটিয়ে উঠেই, করোনার বিরুদ্ধে আপাত বিজয়ী জাতি আবেগ আর শ্রদ্ধায়, আলোচনায় আর লেখায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বারবার তুলে আনছে, কারণ করোনার মৃত্যুময় বীভিষিকা থেকে আমাদের এই যে আজকের স্বস্তি, তার সবটুকুই তারই অবদান আর নিঃসন্দেহে এটি তার সাফল্যের লম্বা তালিকায় আরো একটি সংযোজন মাত্র। সময় পেলেই আমি এ ধরনের লেখাগুলো পড়ি আর আলোচনাগুলো শোনার চেষ্টা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছিয়াত্তরতম জন্মদিনের প্রেক্ষাপটে, এসব কিছু মিলিয়ে আজকের এই দিনে স্রষ্টার কাছে আমার যে প্রত্যাশা সেটুকু তুলে ধরাই এই কলম ধরার উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধু তার স্বল্প পরিসরের জীবনকালে তার প্রথম বিপ্লবটির বাস্তবায়ন করে যেতে পেরেছিলেন, বাঙালিকে এনে দিয়েছিলেন তাদের আরোধ্য স্বাধীন স্বদেশ। আর বঙ্গবন্ধুর সেই বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়ে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত করার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার উপর ন্যাস্ত মানুষের আস্থার প্রতিদান এরই মধ্যে দিয়েছেন। বাকি আছে এই অর্জনগুলোকে একটা স্থায়ী ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে কখনোই, কোনো কিছুতেই তাতে সামান্যতম আচড়টুকুও না লাগে। আর এর জন্য প্রয়োজন আদর্শিক জায়গাটাকে শক্ত করা। কারণ ওই জায়গাটা নড়বড়ে রয়ে গেলে দু’শ বছরের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য আর ট্রিলিয়ান ট্রিলিয়ান ডলার ব্যয়ও যে যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপ্লবের বাস্তবায়ন, যেখানে নিশ্চিত করা হয়েছিল শুধু স্বাধীনতার স্বপক্ষীয়দের শাসন আর বিপক্ষীয়দের নির্বাসন।
বাকশাল কোনো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিলো না। বাকশালের মূল মন্ত্রই ছিলো বাংলাদেশটাকে বাঙালির জন্য বাঙালির মতো করে বিনির্মাণ। আজকের পরিবর্তী বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাকশাল হয়তোবা বেমানান, কিন্তু বাকশালের স্পিরিট, তথা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত দ্বিতীয় বিপ্লবের বাস্তবায়ন ছাড়া বাঙালির বাংলাদেশ যে অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে তা হলফ করেই বলে দেওয়া যায়। এই উপলব্ধির প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছিয়াত্তরতম জন্মদিনের স্রষ্টার কাছে আমার প্রথম প্রত্যাশা, তিনি বাঙালির জন্য, বাংলাদেশকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে যাওয়ার মতো দীর্ঘায়ু প্রদান করুন। আর পাশাপাশি স্রষ্টার কাছে এইদিনে আমার দ্বিতীয় প্রত্যাশা, তিনি যেন এদেশের বাদবাকি সবাইকে সেই সুমতিটুকু প্রদান করেন যাতে আমরা শুধু নিজেদেরটা না বুঝে, অন্যেরটাও একটু দেখতে-বুঝতে শিখি। কারণ আমরা যদি সবাই এই কাজটুকু একটু একটু করেও করতে শিখি, তাতেই কিন্তু তার কাজটুকু অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।
লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌজন্যেঃ আমাদের সময়