1565
Published on সেপ্টেম্বর 19, 2022লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে নিজের আন্তরিকতার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি রোববার বিবিসি বাংলা প্রচার করে।
লরা কুয়েন্সবার্গকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে রানিকে নিয়ে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং গুমের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে দীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতিহাস তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশ দীর্ঘ সময় সামরিক শাসকের অধীনে ছিল। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক কিংবা প্রকাশ্যে বা গোপনেই হোক।
“১৯৭৫ সালে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়, তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আপনি জানেন আমার পুরো পরিবার – আমার মা, ভাইয়েরা, তাদের স্ত্রীরা এবং অন্য সদস্যরা – ১৮ জনকে হত্যা করা হয়। তখন থেকে পরের ২১ বছর পর্যন্ত কোনো না কোনো সময় আমাদের দেশে সামরিক শাসন ছিল। বারবার।”
সেই অবস্থা থেকে গণতন্ত্র ফেরাতে নিজের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আনুমানিক ২০ বার সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল, প্রতিবারই রক্তক্ষয় হয়েছে। কোনো গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আমার সংগ্রাম করতে হয়েছে।
“সেনা শাসক দেশ শাসন করেছে। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তারা কখনও মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চায়নি। তারা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। শুধু আওয়ামী লীগের সময় আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পাবেন।”
এই পর্যায়ে কুয়েন্সবার্গ বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে শুনেছি যে আপনি হলফ করে বলেছেন, সেসব নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
তখন শেখ হাসিনা বলেন, “অবশ্যই, এটা আমার সংগ্রাম। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা আমার সংগ্রাম।”
গুমের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “অনেক মানুষই অভিযোগ তুলতে পারে। কিন্তু তার কতটুকু সত্য, তা আপনাকে বিচার করতে হবে। তার আগে কারও কোনো মন্তব্য করা উচিৎ না।”
ব্রিটিশ রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা শেখ হাসিনার
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি শুধু রানিই ছিলেন না, একজন মমতাময়ী, মাতৃসুলভ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যখনই আমার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে, আমি সেটা অনুভব করেছি।
“কমনওয়েলথের সদস্য দেশ হিসেবে তিনি আমাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি সত্তর বছর ধরে সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন।”
রানিকে ঘিরে ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন, আমার তাকে দেখার সুযোগ হয়েছিল।
“আমরা আমার বাবার অফিসে ছিলাম, কারণ আমরা জানতাম যে তিনি ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন।
আমাদের পুরো পরিবার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। হাতে বাইনোকুলার নিয়ে যেন আমরা তাকে ভালোভাবে দেখতে পারি।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রানির সঙ্গে অনেকবার সাক্ষাতের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সাতটি কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। কাজেই প্রতিবারই তার সাথে সাক্ষাতের ও কথা বলার সুযোগ হয়েছে। অলিম্পিক গেমসের সময়ও তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, আমি এসেছিলাম।
“তার স্মৃতিশক্তি ছিল চমৎকার। কমনওয়েথ সম্মেলনে তিনি যখন আমাকে দেখতে পেতেন না, তখন খোঁজ নিতেন। ‘হাসিনা কোথায়? আমি তো তাকে দেখতে পাচ্ছি না’।”
কমনওয়েলথ বাংলাদেশের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ- এই প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা একত্রিত থাকলে অনেক সুযোগই তৈরি হয়। সুতরাং এটা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের জন্য, নতুন আইডিয়া পাওয়ার জন্য বা দেশ ও মানুষের জন্য ভালো কিছু করার সুযোগ তৈরি হয় কমনওয়েলথে। সুতরাং আমি মনে করি এটা গুরুত্বপূর্ণ।
“বর্তমান বিশ্বে একটি দেশ একা এগিয়ে যেতে পারে না। পৃথিবীতে সবাই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং এরকম পরিস্থিতিতে সদস্য দেশগুলোর জন্য কমনওয়েলথের গুরুত্ব অনেক। আমরা যদি একসাথে কাজ করতে পারি, তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। কারণ এখানে উন্নত, উন্নয়নশীল, দরিদ্র বা ছোট দ্বীপ দেশ- সবই রয়েছে।”