1085
Published on জুলাই 27, 2022এম নজরুল ইসলামঃ
অন্তরে যাঁর দেশমাতৃকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রত, তিনি যেকোনো বাধাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যেতে পারেন। ইসক্রা থেকে যেমন জ্বলে ওঠে মশাল, তেমনি আজকের দিনের তারুণ্যই আগামী দিনের নেতৃত্বের পথটি দেখিয়ে দিতে পারেন। যেমন দেখিয়ে দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। উত্তরাধিকার সূত্রেই এখন রাজনীতির মঞ্চে তিনি।
ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার টেনে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের রাজনীতির পারিবারিক ধারায় লক্ষ করলে দেখা যায়, জওয়াহেরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য, তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিষেক। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাঁর প্রাণময় উপস্থিতি যে কর্মীদের উজ্জীবিত করে, নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি করে—তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। যেকোনো অনুষ্ঠানেই তিনি সপ্রতিভ।
নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হৃদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সহজেই। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে আসবেন, এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন সময় কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগদান এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। একটু অতীতের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কিছু কিছু প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। ২০০৯ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদও গ্রহণ করেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে উঠবেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। স্বাভাবিকভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয়। সংগত কারণেই তৃতীয় প্রজন্মের এই নেতৃত্বের প্রতি কেন্দ্রীভূত দেশের বেশির ভাগ মানুষের দৃষ্টি ও আকর্ষণ। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায়। তিনি যে ভবিষ্যতে যেকোনো দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ তরুণ বিশ্বনেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতিসচেতন। ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধুর মতো পরিশ্রমী তিনি। তারুণ্যের প্রাণময়তায় আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলতে চান নতুন দিনের একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে। যদিও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ এখনো রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় দল। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশকে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি।
মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মানুষ আছে তার দুই ভাবকে নিয়ে, একটা তার জীবভাব, আর একটা বিশ্বভাব। ’ জীব আছে আপন উপস্থিতকে আঁকড়ে, জীব চলছে আশু প্রয়োজনের কেন্দ্র প্রদক্ষিণ করে। মানুষের মধ্যে সেই জীবকে পেরিয়ে গেছে যে সত্তা সে আছে আদর্শকে নিয়ে। এই আদর্শ অন্নের মতো নয়, বস্ত্রের মতো নয়। এই আদর্শ একটা আন্তরিক আহ্বান, এই আদর্শ একটা নিগূঢ় নির্দেশ। কোন দিকে নির্দেশ। যেদিকে সে বিচ্ছিন্ন নয়, যেদিকে তার পূর্ণতা, যেদিকে ব্যক্তিগত সীমাকে সে ছাড়িয়ে চলেছে, যেদিকে বিশ্বমানব।
রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘মানুষও আপন অন্তরের গভীরতর চেষ্টার প্রতি লক্ষ্য করে অনুভব করেছে যে সে শুধু ব্যক্তিগত মানুষ নয়, সে বিশ্বগত মানুষের একাত্ম। ’
সজীব ওয়াজেদ জয় রবীন্দ্রনাথের সেই মানুষ, যিনি ব্যক্তিগত নন। ব্যক্তিগত সীমাকে ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন মানুষের কাছে। আজ ২৭ জুলাই তাঁর জন্মদিনে তাঁকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
লেখক : সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি
সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ