সাহসের নাম শেখ হাসিনা

1071

Published on জুন 25, 2022
  • Details Image

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার:

বাংলাদেশের জন্য এ এক ঐতিহাসিক ক্ষণ। এমন দিন প্ৰতিদিন আসে না। একটি দেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা নদীর উপর নির্মিত ও বহু আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু গাড়ি পারাপারের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে বাংলাদেশের মানুষের এই স্বপ্নের সেতুর। দেশবাসী এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। পদ্মার দুই পারের অনেক মানুষ যারা যৌবন থেকে শুনে আসছিল এই প্রমত্তা পদ্মার উপর একদিন সেতু নির্মিত হবে। আশা নিরাশার দোলাচালে বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছেন। যাদের বাড়িঘর এই সর্বনাশা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে সাথে প্রিয়জনের কবরখানিও। সেইসব মানুষেরা তাদের জীবদ্দশায় দেখে যাবে এক সময়ের অভিশপ্ত পদ্মা আজ তাদের এলাকার জন্য, দেশের জন্য কতটাই না আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। যা নিজের চোখেই দেখে যেতে পারলো। এই ক্ষুদ্র জীবনের অল্পতে তুষ্ট এসব সোনার মানুষেরা চোখ মন উজার করে দেখে গেলো তাদের ‘শেখের বেটির’ দৃঢ়তা, সততা ও সাহসের এক অচিন্তনীয় উদাহরণ।

একটি দেশের সবচেয়ে বড় একটি স্থাপনার উদ্বোধন আনন্দের ব্যাপার তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সেই স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে যদি সেই দেশের কুলাঙ্গার কিছু সুশীল নামধারী মানুষের, কিছু রাজনীতির নামধারী অমানুষের ক্রোধের, ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় এবং যার দরুন অনিশ্চিত হয়ে পরে সেই স্বপ্নের, তখন তার সফল সমাপ্তিতে আনন্দের মাত্রাটা স্বাভাবিকভাবে একটু বেশিই হয় সাথে থাকে বাড়তি উত্তেজনা। তাই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই মাহেন্দ্রক্ষনে দেশের আপামর মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেলিত-উচ্ছসিত। যা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু শত বাধাবিপত্তি, ষড়যন্ত্র চক্রান্ত উপেক্ষা করে সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে যাওয়া এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের প্রাক্কালে যার সাহস, দেশপ্রেম, সততা ও দৃঢ়তার কথা না বললে এই সেতু নির্মাণের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে শুধু নদী পারের একটি সেতু হিসেবেই থাকবে, তার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে। যার অমিত সাহস, ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা আর সুকঠিন দেশপ্রেম আর দেশের মানুষের প্রতি অবিচল বিশ্বাস আর ভালোবাসা নিয়ে বলতে গেলে এককভাবে কঠিন ও সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করেছিলেন সড়ক যোগাযোগে বাংলাদেশকে এক সুতায় গাঁথতে বহু আকাঙ্খিত ও প্রতীক্ষিত স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। তার নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কেননা যখন অত্যন্ত নির্লজ্জ ও অপমানজনকভাবে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই এই সেতু নির্মাণে কাল্পনিক ও বিদ্বেষপ্রসূত দুর্নীতির কল্পিত ষড়যন্ত্রের কথা প্রচার করে এদেশের কিছু দালালচক্র ও তাদেরই অস্কারায় প্রলুব্ধ কিছু বিদেশি সংস্থা পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করতে অস্বীকার করে ও অভিযুক্ত করে, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারের দেশপ্রেম ও সততায় সরাসরি আঘাত হানে। আর সবচেয়ে বেশি আঘাত করে এদেশের দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে। তারপরের ঘটনা সবার জানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও সাহসিকতার কাছে পরাজিত হয়ে কল্পনাপ্রসূত, আজগুবি দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের তথাকথিত বানোয়াট কাহিনী যখন কানাডার আদালতে, দুদকে পুরোপুরি অসত্য প্রমাণিত হলো ততদিনে ওইসব দেশি বিদেশি কুচক্রীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই এই বিশাল ও আবেগের স্থাপনা নির্মান শুরুর ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার এই ঘোষণায় স্তম্ভিত হয়ে নির্লজ্জের মত অনেকটা হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়ে আবার যখন এই সেতুতেই অর্থায়ন করার কথা ওইসব বিদেশি সংস্থা অতি আগ্রহ দেখালো ততদিনে এই সেতু এদেশের মানুষের স্বপ্নপূরণে ওইসব কুচক্রীদের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দিতে শুরু করেছে। সেদিন কি অপমানটাই না হতে হয়েছিল লাখো শহীদের রক্তে কেনা এই দেশটিকে। কিন্তু শহীদের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এইদেশ সেদিন সেই মিথ্যাচার ও অপমানের জবাব দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে ঘেরা এই বাংলাদেশ ও তার সন্তান শেখ হাসিনাকে নিয়ে কোন মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র করে থামিয়ে দেয়া যাবে না। সেদিন মিথ্যাচার ও দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র অবধারিতভাবে পরাজিত হয়েছিল।

কিন্তু ষড়যন্ত্র চক্রান্ত সেখানেই থেমে থাকেনি। দিন যত এগিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা আরো বেশি করে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে। এবার দেশেরই কিছু দল ও গোষ্ঠী যারা বার বার নির্বাচনে পরাজিত হয়ে অন্য অনেক অপশক্তিগুলোর সাথে হাত মিলিয়ে ধীরে ধীরে বুকটান করে মাথা উঁচু করে জেগে উঠা পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার দুরভিসন্ধি করেছে বা এখনো করছে। নানা অপপ্রচার ও অসত্য কাহিনী প্রচার করে দেশের মানুষের মধ্যে একধরনের অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরি করে স্বপ্নের এই স্থাপনা নির্মাণে বার বার বাধাগ্রস্থ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যদিও তাদের এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র বরাবরের মতোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কিন্তু জয় হয়েছে বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের। সেই ঐতিহাসিক দিন আজ দুয়ারে। যার কারণ শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ভালোবাসা ও স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। যার নামকরণ যার একক দৃঢ়তা ও সাহসিকতায় নির্মিত, দেশের আপামর জনগণের দাবি ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ করার। কিন্তু বিনয়ের সাথে সেই দাবি নাকচ করে দিয়ে পদ্মা নদীর নামেই যে সেতুর নাম করণের কথা বলেছেন এই পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এর শুভ উদ্বোধন করবেন। এমন দিন সবার ভাগ্যে জোটে না। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় টানা একযুগের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এবং তার হাত দিয়েই হয়তো মহান সৃষ্টিকর্তা এই পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও উদ্বোধন করাবেন সেজন্যই হয়তো এখনো তাকে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। এ যেন এক সাহস, দৃঢ়তা, দেশপ্রেম ও সততার জয়। আর কুচক্রী, ষড়যন্ত্রকারি, দেশদ্রোহী, পরাজিত কোন অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীর সম্মিলিত এক মধুর প্রতিশোধ।

এই যে উদ্বোধন হতে যাওয়া পদ্মা সেতু, এটি শুধু একটি সেতু নয়, এটি একটি সাহসের নাম। এই সেতু একটি সততার নাম, এই সেতু একটি ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তার নাম। যে সাহস, সততা ও দৃঢ়তা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ওই যে দেখ আজকের যে এই পদ্মা সেতু এটি শুধু তারই অবদান। আর তার সাথে এই অবদানের সঙ্গী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের চব্বিশ বছরের নিরলস সংগ্রাম, যে সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। সেই সোনার বাংলার স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্ত ও আড়াই লাখ মা বোনের চরম আত্মত্যাগ। এদেশের খেটে খাওয়া গরীব মানুষের শ্রম, ঘাম। বিদেশে খেটে খাওয়া রেমিটেন্স যোদ্ধা ও এদেশের দেশপ্রেমিক সকল মানুষের অকুন্ঠ সর্মথন। অপরদিকে এই সেতু তার ঔজ্জ্বল্য দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কোনো প্রকার চক্রান্ত ষড়যন্ত্র, কোনো পাপ, কোনো দেশদ্রোহীই আমার এই দৃঢ়ভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কোনদিন বাধাগ্রস্থ করতে পারে নাই, আগামীতেও যেন কেউ কোনোদিন এমন পথে পা না বাড়ায় তাই-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

এই পদ্মা সেতু শুধু দেশের সড়ক যোগাযোগের এক ঐতিহাসিক স্থাপনাই না। এই সেতু বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক। এই সেতু বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এক তেজস্বী স্থাপনা। পদ্মা সেতু হলো দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার এক প্রত্যয়ের নাম। এই সেতু নির্মাণ এদেশের মানুষের শুধু স্বপ্ন পূরণই না। এই স্বপ্নের সেতু শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের সিঁড়ি পথই না। এই সেতু নিজেদের অর্থনীতির সক্ষমতার শুধু বহিঃপ্রকাশই না। এই সেতু এদেশের দেশপ্রেমিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসার এক সুনিপুণ নিদর্শন। এই সেতু কুচক্রী, দেশি -বিদেশি অপশক্তিদের নির্লজ্জ অপমানের এক মধুর প্রতিশোধের নাম। আর এই পদ্মা সেতুর অপর নাম দেশপ্রেম ও সাহস। আর এই সাহসের নাম শেখ হাসিনা।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সৌজন্যেঃ sarabangla.net

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত