848
Published on জুন 24, 2022মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীঃ
আজ ২৩ জুন। ১৯৪৯ সালে এদিনে পুরান ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে দুদিনব্যাপী একটি সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ তারিখ সম্মেলন শেষে জন্ম নেয় একটি নতুন রাজনৈতিক দলের। নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ । কেউ তখন ভাবতে পারেনি এই সংগঠনটি পাকিস্তান নামক সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের পতন ঘটিয়ে পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইতিহাসের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে এবং দলটির নেতৃত্বে একটি মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হবে। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়েও দলটি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিরন্তর সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করছে। আজ সেই দলের ৭৩ বছরপূর্তি।
ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে যে দলটির জন্ম সেই দলটি ইতিহাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক দলটির নাম এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আওয়ামী লীগ শুধু অন্যতম পুরাতন রাজনৈতিক দলই নয়, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সংগ্রামে লড়াইরত প্রতিষ্ঠানও। সেকারণে এই দলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকেও বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি শুধু করেনি, বাস্তবায়ন ঘটাতে রাজনৈতিক সব ঝুঁকি, বিপদ, কষ্ট, নির্যাতন, সহ্য করে ক্রমাগত বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেছে। অবশেষে ১৯৭১ সালে সফল হয়েছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের আদর্শে পুনর্গঠন করার জন্য দলটি একইভাবে নিরন্তর লড়াই ও কাজ করে চলছে। এখানেই এই রাজনৈতিক দলের বিশেষত্ব। দলটির প্রয়োজনীয়তা তাই আদৌ ফুরিয়ে যায়নি। বরং অধিকতর গুরুত্ব বেড়েই চলছে।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটি জন্ম নেয় তার পূর্বাঞ্চলে পূর্ব বাংলাকে যুক্ত করা হয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতার জটিল রাজনৈতিক কূটচালের শিকার হলো পূর্ব বাংলার জনগণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগণ ধরে নিয়েছিল যে পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাদের সুখ শান্তি অবারিত হবে। ধর্মের পরিচয়ে অন্য একটি বড় জনগোষ্ঠী পাকিস্তানে সংখ্যালঘুতে পরিণত হলো। ভারত প্রজাতন্ত্রেও অনুরূপ সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুতে নাগরিকরা পরিচিত হওয়ার বাস্তবতায় পড়ে গেল। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের জনগণ ভাষার প্রশ্নে রাষ্ট্রের বৈরী আচরণের মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পড়ে । উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার কথা আগে থেকেই উচ্চারিত হতে থাকে। তখনই ধীরে নতুন এই রাষ্ট্রের চরিত্র উন্মোচিত হতে থাকে। পাকিস্তান পূর্ব বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকারকে রক্ষার পরিবর্তে বিলুপ্তির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি শুরু থেকেই প্রকাশ করতে থাকে। এর ফলে পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার রক্ষার তাগিদ থেকে সচেতন তরুণ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে সংগঠন গড়ে তোলার পথে অগ্রসর হতে থাক। অথচ এই তরুণ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই কয়েকমাস আগেও পাকিস্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন অচিরেই ভেঙে যায় । সেখান থেকেই ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে পাকিস্তান আন্দোলনে পুরোভাগের যুবকর্মীরা ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব বাংলা কর্মী সম্মেলনে মিলিত হয়ে গণতান্ত্রিক যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। শামসুল হক এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সংগঠনের সঙ্গে তরুণ কমরুদ্দিন আহাম্মদ, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, শামসুদ্দিন আহাম্মদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নুরুদ্দিন আহম্মদ, আবদুল ওদুদ প্রমুখ জড়িত ছিলেন। এরপর আরও কয়েকটি সংগঠন ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হল মিলনায়তনে এক সভায় ‘নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’ সংগঠনটি ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’ নামে পুনর্গঠিত হয়। পূর্ব বাংলায় তখন থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় তরুণ ও যুবসমাজ, ভাষা আন্দোলন এবং অন্যান্য আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে রাজনীতির একটি মেরুকরণ সংগঠিত হতে থাকে। সরকার এই শক্তি দমনে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একটি আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ১৯ মার্চ শেখ মুজিবসহ কজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর ২৬ এপ্রিলে টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক যুবলীগের প্রার্থী সভাপতি শামসুল হক বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। মুসলিম লীগের প্রথম পরাজয় দৃশ্যমান হয়। জয় পরাজয়ের এই অবস্থান থেকেই বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতৃবৃন্দ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে অগ্রসর হন। কলকাতায় অবস্থানরত সোহরাওয়ার্দী নতুন এই রাজনৈতিক সম্ভাবনার পক্ষে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে ১৫০ মোগলটুলির শওকত আলীর বাসভবনকে কেন্দ্র করে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবির গড়ে ওঠে। জেলে অবস্থানকারী শেখ মুজিবুর রহমানও এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর একটি সাংগঠনিক কমিটিও গঠিত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি এবং ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক করে এই কমিটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়। এই কর্মী শিবিরই ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন। ২৪ তারিখ মওলানা ভাসানীকে সভাপতি, আতাউর রহমানসহ কয়েকজন সহসভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইয়ার মোহম্মদ খানকে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত করা হয়। আওয়ামী লীগ গঠনের সঙ্গে তখন তাজউদ্দীন আহমেদ, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ (কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ যুক্ত ছিলেন। নবগঠিত দলের কর্মসূচি হিসেবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা, গণতন্ত্র ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৪২টি দাবি গ্রহণ করা হয়। ২৬ জুন তারিখ শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করলে দলটির ওপর সরকারি নির্যাতন শুরু হয়। মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকেই বিভিন্ন মামলায় কারাভোগ করেন। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সরকারি নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং আতাউর রহমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ সালে দলের দ্বিতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ভাসানী সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের ৮-১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ এককভাবে ১৪৩টি আসন পায়। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা তখন অন্য সব দলকে ছাড়িয়ে যায় কয়েকগুণ। ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত দলের ৩য় সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে অসাম্প্রদায়িক আদর্শের রাজনৈতিক দলে পরিণত করা হয়। এরপরে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কাগমারী সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে ত্যাগ করে মওলানা ভাসানীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনের উদ্যোগ নেন। জুলাইয়ে ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ তখন কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্ব পালন করছিল। কিন্তু এই বিভাজনটি পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের রাজনৈতিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
১৯৫৮ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে এবং আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ৬০-এর দশকে আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্র ও প্রসিডেন্ট নির্বাচনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট গঠন করে। তবে ১৯৬৫-এর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব ৬ দফা পেশ এবং মার্চে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৬ দফা গ্রহণ, শেখ মুজিবকে সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের পর ৬ দফা আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জেলে আটক রাখার পরও আন্দোলন দুর্বল করা যায়নি।
সরকার আওয়ামী লীগ ভাঙার চেষ্টা করলে সেটিও ব্যর্থ হয়। এরপর ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবকে ১ নম্বর আসামি করে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে এই মামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও ছাত্র ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয় সেকারণে সরকার বাধ্য হয় মামলা প্রত্যাহার করে রাজবন্দিদের মুক্তি প্রদান করতে। এর মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এবং পূর্ব বাংলা তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের নিয়ামক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। আওয়ামী লীগ সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে এবং পাকিস্তানিদের পরাজিত করে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান করছিলেন। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, ক্ষমতা দখল, জেলের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা এবং পুরোপুরি সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগ ভেঙে দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার পথে হাঁটছিলেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৬ বছর পর দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অভ্যুত্থানে নিহত হলে দেশের রাজনীতিতে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর সামরিক বাহিনীর প্রধান এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং দেশে পুনরায় সামরিক শাসন জারি হয়।
১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের পথে দেশকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আওয়ামী লীগকে নানা ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে হয়।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। শেখ হাসিনা সরকার গঠন এবং বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের রূপরেখা বাস্তবায়ন শুরু করেন। এই সময়ে দেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে, ডিজিটাল হওয়ার সুযোগ পায়, ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষার নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে থাকে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা মহাসেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ সবই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিশনারি ভিশনারি নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ অর্জন করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল এবং আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ৭৩ বছরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা, উন্নয়ন, আত্মমর্যাদা, গৌরবময় অহংকারের অনেক কিছু দিতে পেরেছে।
লেখক: গবেষক, অধ্যাপক।