তারুণ্যের অনুপ্রেরণা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি

932

Published on মে 22, 2022
  • Details Image

এম নজরুল ইসলামঃ

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যিনি বর্তমানে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। অবশ্য এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২১ বছর। ১৯৮১ সালে সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি ফিরেছিলেন দেশে।

বৃহৎ ত্যাগ ছাড়া কোনো মহৎ অর্জন সম্ভব নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় প্রজন্মের হাত ধরে এখন দেশ পরিচালিত হচ্ছে। যে সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা, সেই স্বপ্নের পথে সারথি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেপথ্যে তাঁকে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন ছোট বোন শেখ রেহানা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই দুই কন্যা তাঁর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েননি। যখন তাঁদের ভেসে যাওয়ার কথা উচ্ছলতার স্রোতোধারায়, তখনই হোঁচট খেতে হয়েছে। থমকে দাঁড়াতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই অভিশপ্ত দিনে হারিয়েছেন মা-বাবা, ভাইদের। হারিয়েছেন স্বদেশের আশ্রয়। আশ্রয়হীন পরিবেশে দেশে দেশে ঘুরেছেন। ছিল না নিশ্চিত নিরাপত্তা, জীবন যাপনের নিশ্চয়তাও ছিল অনুপস্থিত। জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে তাঁদের। বেছে নিতে হয়েছে অন্য রকম এক সংগ্রামী জীবন। লড়াই করেছেন; কিন্তু জীবনের সত্য থেকে বিচ্যুত হননি কোনো দিন।

এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে উত্তরাধিকার বা পারিবারিক ঐতিহ্যের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যেমন ভারতে জওয়াহেরলাল নেহরুর পর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সরকার পরিচালনায় আসেন কন্যা ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধী সরকারপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকের পর তাঁর কন্যা সরকার পরিচালনা করেছেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পরিবারটির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি, সেই পরিবারের সব সদস্যই যে রাজনীতিসচেতন, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্পৃক্ত হওয়ার সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে আড়াল করে রাখার মধ্য দিয়ে যে নির্মোহ জীবনাচারের পরিচয় পাওয়া যায়, তা অতুলনীয়। পাদপ্রদীপের আলোয় আসার আকাক্সক্ষা সবারই থাকে। ইতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রে থাকার ইচ্ছা দমন করা সহজ কাজ নয়। তার জন্য সাধনার প্রয়োজন হয়। সেই সাধনায় উত্তীর্ণ এক নারী শেখ রেহানা; জাতির জনকের কন্যা তিনি। শেখ রেহানা খুব ভালো করেই জানেন ক্ষমতার চেয়ার অনেক সময় অনেক মানুষকে বদলে দেয়। সে বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন তিনি। আর তাই তাঁর তিন সন্তানকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় যোগ্য করেই গড়ে তুলেছেন। তাঁরই সুযোগ্য পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

বিশ্বখ্যাত লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতক রাদওয়ান মুজিব একই প্রতিষ্ঠান থেকে কমপ্যারেটিভ পলিটিকস বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। স্নাতক পর্যায়ে তাঁর অধ্যয়নের প্রধানতম বিষয়গুলো ছিল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড হিস্টরি, পলিটিক্যাল থিওরিজ, ইন্টারন্যাশনাল হিস্টরি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তাঁর অন্যতম পাঠ ছিল কমপ্যারেটিভ পলিটিকস, কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেগুলেশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি।

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এ দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করেন নিজেকে। এর আগে অবশ্য ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে দুই বছর মেয়াদে দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাইবার প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ববি ওই প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন। তখন জাতীয় নির্বাচনে অনলাইন প্রচারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর অনলাইনভিত্তিক প্রচার বা সাইবার প্রচারের মূল দায়িত্বে ছিলেন ববি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নকাজ নিয়ে ‘আপনি জানেন কি’ শিরোনামে ১৭টি প্রামাণ্যচিত্র এবং অন্যান্য সরকারের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক ১৯টি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি এবং নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে আসার অনুষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলা’র অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একইভাবে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একঝাঁক তরুণকে নিয়ে নামেন অনলাইন প্রচারে।

আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির সুযোগ্য পরিচালনায় ‘ইয়াংবাংলা’, ‘জয় বাংলা কনসার্ট’ এরই মধ্যে দেশের তরুণদের মন জয় করেছে। ‘মুজিব’ সিরিজের গ্রাফিক নভেল দেশের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ওপর ভিত্তি করেই প্রকাশিত হচ্ছে গ্রাফিক নভেল মুজিব।

২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। ২০০৭ সালে শেখ হাসিনা যখন গ্রেপ্তার হন তখন লন্ডনে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ‘ফ্রস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-খ্যাত স্যার ডেভিডকে যে সাক্ষাৎকার দেন, যা বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরিতেও বড় ভূমিকা রাখে।

জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ডকুড্রামা ‘শেখ হাসিনা : এ ডটারস টেল’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগের ও পরের জীবন এবং ১৯৭৫ সালের পরের জীবনের অসাধারণ গল্প এই ডকুড্রামায় উঠে এসেছে। এই ডকুড্রামা নির্মাণের নেপথ্যে কাজ করেছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তাঁর নির্দেশনায় জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছে সিআরআই। তুলে ধরেছে সাধারণ মানুষের কাছে। সেক্টরভিত্তিক গবেষণা তুলে ধরা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও।

বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর দেশের হাল ধরেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের যোগ্য উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয় ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।

আজ ২১ মে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির জন্মদিন। ১৯৮০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রাজনীতির অন্য রকম টান থাকে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতির পথটি তিনি বেছে নিতে দ্বিধা করবেন না, এটাই স্বতঃসিদ্ধ। কিন্তু এই সরল সমীকরণটি এখন পর্যন্ত রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়। তিনি বেছে নিয়েছেন জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব। সমাজের কাছে পৌঁছে দিতে চান আগামী দিনের আলোকিত এক বাংলাদেশের বার্তা। অর্থভাণ্ডারের মূল্যবান কোনো সামগ্রী নয়, স্মৃতিভাণ্ডারের সম্পদই মহামূল্যবান মনে করেছেন তিনি। যদিও অনেকে মনে করেন ভবিষ্যতের নেতৃত্বের যোগ্য করেই নিজেকে গড়ে তুলছেন বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মের এই সদস্য। তাঁর মতো শিক্ষিত তরুণদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বড় বেশি প্রয়োজন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সময়ের সেই দাবি কি রক্ষা করবেন তিনি?

লেখক: সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়াপ্রবাসী মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও লেখক।

সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত