জননেত্রী’র শিক্ষা ইকোসিস্টেম ও ডিজিটাল গ্রাম উন্নয়ন

1219

Published on ডিসেম্বর 28, 2021
  • Details Image

সজল চৌধুরী:

বিগত বছরটিতে আমরা আসলে কি পেলাম যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে হয়তোবা সফলতা এবং ব্যর্থতার মাঝেও অনেক বড় একটি তালিকা তৈরী হবে প্রাপ্তির। তবে এ লেখায় আমি সেই বড় বড় অর্জন কিংবা প্রাপ্তির দিকে যাব না। আমি যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে চাই সেটি হল ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এই স্লোগানটিকে। যদি আরো ছোট করতে চাই সেটি হচ্ছে ‘আমার গ্রাম’ এই প্রত্যয়টিকে। করোনা মহামারীতে আমাদের গ্রাম গুলোর অবস্থান নিয়ে কথা বলতে গেলে যে দুটি বিষয় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকবে সেটি হচ্ছে গ্রামের শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা।

করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরকেন্দ্রিক প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন করা হয় এবং এই অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার মূল শর্ত ছিল সব শিক্ষার্থীর জন্য ইন্টারনেট এবং অনলাইনে কোর্সের সকল ধরনের তথ্য উপাত্ত নিশ্চিত করা। তাছাড়া অনলাইন শিক্ষার মাধ্যম যেন আরো প্রাণবন্ত হয় সেই সব বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। তাছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যেন অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে সেক্ষেত্রে তাদের মাঝে মোবাইল, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট এর ব্যবস্থাকরন ছিল চোখে পড়ার মতো। যদিও এই অনলাইন শিক্ষার প্লাটফরমটি বাংলাদেশে প্রায় নতুন! সে ক্ষেত্রে শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাইকেই এই বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের সকল প্রান্তে বিদ্যুৎ এর কথা চিন্তা করা ছিল অসম্ভব। কিন্তু আজ বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের সাধারণ জনগণের দ্বারপ্রান্তে বিদ্যুৎ সহজলভ্য। আর এই কারনেই এই মহামারীর সময় গ্রামের শিশুরা, কিশোর- কিশোরীরা শিক্ষাগ্রহণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে পারেনি। এ প্রাপ্তি আকাশ সমান। তবে একথা ঠিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে হয়তোবা সাময়িক কিছু অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে সকল ধরনের সমস্যাকে আমরা মোকাবেলা করতে পেরেছি।

শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশেই করোনাকালীন সময়ে যখন হিমসিম খাচ্ছিল ঠিক তখন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সবাইকে এই বার্তাই শুনিয়েছে - সব সম্ভাবনার দেশ এই বাংলাদেশ যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পায়! বাঙালি হিসেবে আমরা গর্বিত। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনকল্পে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশমাতৃকার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে- আমরা আশাবাদী খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশের গ্রামগুলো তে পৌঁছে যাবে সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। হয়তো এমন একদিন আসবে যেদিন এই গ্রাম গুলো হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সবথেকে বড় অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। তখন হয়তোবা গ্রামের মানুষগুলো তাদের শিক্ষা এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য শহরে যেতে চাইবে না। শহরে এসে ভীড় করবে না। প্রত্যেকটি গ্রামের দিকে তাকিয়ে থাকবে আমাদের শহর গুলো শিক্ষার দিক থেকে, কৃষির দিক থেকে কিংবা ঐতিহ্যের দিক থেকে! আর এটিই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংকল্প।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সামনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। তার এই মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমরা আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। আজ আমাদের মোট হাইটেক পার্কের সংখ্যা ৩৯ টি। এর আগে ২০১০ সালের ১১ই নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে ৪৫০১ টি ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার’ স্থাপন করে গ্রামের মানুষকে শিক্ষা, পরিবেশ, জীবন ও জীবিকা ভিত্তিক তথ্যের সান্নিধ্যে নিয়ে গিয়েছেন। বর্তমান বাংলাদেশের প্রায় সকল পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন সহ অন্যান্য জায়গায় আট হাজারেরও অধিক ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র বিদ্যমান। এই ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনসাধারণ আজ খুব সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে। যার ফলে তাদের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে দ্রুতগতিতে।

তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে আমরা যেমন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ডিজিটালাইজেশনের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে পর্যালোচনা করছি ঠিক তেমনি গ্রামের স্কুল কলেজগুলোতে যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে নান্দনিক শিক্ষার প্রচলন করা হয়, যেখানে গ্রাম উন্নয়ন ভিত্তিক পরিবেশবান্ধব শিক্ষার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সামনে আনা যায়। এমনকি ছোট বয়স থেকেই গ্রাম ভিত্তিক গবেষণা এবং পর্যালোচনা দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইকোসিস্টেম দাঁড় করানো যায় তবে সেটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য পাথেয়।

সরকারের বর্তমান লক্ষ আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি সেবার প্রায় শতভাগ অনলাইনে পাওয়া নিশ্চিত করা। তাছাড়া গ্রাম এবং মফস্বল এলাকাগুলোতে ওয়াইফাই কানেক্টিভিটির নিশ্চয়তা প্রদান। যেসব স্থানে এখনো ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র হয়নি সেগুলো প্রতিষ্ঠা করা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া আমাদের দেশের মফস্বল এলাকা গুলোর সর্বাধুনিক শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত কাজ করে চলছেন যেন গ্রাম এবং শহরের শিক্ষার পার্থক্য দৃশ্যমান না হয়। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গ্রাম উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন “আমরা প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কারিগরি কলেজ স্থাপন করছি। বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি উদ্ভাবনী শিক্ষা ইকোসিস্টেম তৈরি করছি। ন্যাশনাল ব্লেন্ডেড লার্নিং পলিসি-২০২১ প্রণয়ন করছি। এই নীতির মাধ্যমে আমরা প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু করতে পারব।“

সবশেষে আসা যাক ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা কি বুঝি? ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়, যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। এর মূল লক্ষ্য, একুশ শতকে বাংলাদেশকে একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। তাছাড়া বিজ্ঞান ভিত্তিক একটি দেশ, একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার প্রথম পদক্ষেপে হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে একটি উন্নত বিজ্ঞানমনস্ক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষা থেকে শুরু করে কৃষি, অর্থনীতি, প্রযুক্তির মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। প্রযুক্তির মাধ্যমে জনসাধারণের প্রত্যাশা, স্বপ্ন পূরণ হবে। এটিই হচ্ছে ২১ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। আর এই প্রত্যাশার সঠিক বাস্তবায়নের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে আজকের সমগ্র বাংলাদেশ।

লেখকঃ শিক্ষক ও স্থপতি (বর্তমানে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপত্য-পরিবেশ বিষয়ক পিএইচডি গবেষক)

(মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত