836
Published on ডিসেম্বর 16, 2021জাহাঙ্গীর আলম সরকারঃ
বাঙালি জাতির জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শ্রেষ্ঠ অর্জন। দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা, অবসান ঘটে পাকিস্তানি দুঃশাসনের। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অত্মপ্রকাশ করে। ঢাকার আত্মসমর্পণের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর জমজম (নীলফামারী) এয়ারপোর্টে পাকবাহিনী মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছিল। বর্তমান নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট ১৯৭১ সালের জমজম এয়ারপোর্ট নামে পরিচিত ছিল। সেই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানটি হয়েছিলো ভারতীয় মিত্রবাহিনী এবং পাকিস্তানের মধ্যে। মিত্রবাহিনীর পক্ষে আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব প্রদান করেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার পিএন কাথাপালিয়া এবং পাকিস্তানের 23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী। এ অঞ্চলে পাকিস্তান বাহিনী পূর্ণ শক্তি নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ফলে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই আত্মসমর্পণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আলোচ্য প্রবন্ধে জমজম এয়ারপোর্টে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। মিত্রবাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার প্রয়াত পিএন কাথাপালিয়া ও ২১, রাজপুত ব্যাটেলিয়নের অফিসার এসজি ডালভি এবং তৎকালীন পাকিস্তানের 16th Infantry Division -এর জিওসি প্রয়াত মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহের সাথে আলাপচারিতা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব পাক সেনারা সৈয়দপুরের নাম বদলে দিয়ে গাজীপুর নামকরণ করেছিল। পাকিস্তানিদের ইচ্ছে অনুসারে সে সময় নীলফামারীর সৈয়দপুরে নির্মাণাধীন এয়ারপোর্টটির নামকরণ করা হয় জমজম এয়ারপোর্ট। তৎকালে আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী স্বয়ং সৈয়দপুরে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে এয়ারপোর্টটির উদ্বোধন করেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি পশ্চিম পাকিস্তানের হিং¯্র পাঞ্জাবি সেনারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নীলফামারীর সৈয়দপুর ক্যান্টমেন্টে জমায়েত হতে শুরু করে। একাধারে ৩৪ পাঞ্জাব, ২৫ পাঞ্জাব, ৪৮ পাঞ্জাব, ২৬ ফ্রন্টিয়ারস ফোর্স, ৮ পাঞ্জাব এবং ৮৬ মুজাহিদের সেনারা তখন গাজীপুর তথা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে জমায়েত হয়। প্রসঙ্গত: সে সময় সৈয়দপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকার পাকবাহিনীর জিওসি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন 16th Infantry Division-এর জিওসি মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত 23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চ লাইট সম্পন্ন করে পাকসেনারা রাজধানী ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে সমগ্র দেশ দখল করা শুরু করে। সেই দখলের অংশ হিসেবে পরবর্তীতে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত ৩৪, পাঞ্জাব ব্যাটেলিয়ন নীলফামারী; ২৫, পাঞ্জাব ব্যাটেলিয়ন লালমনিরহাট; ৮৬, মুজাহিদ ব্যাটেলিয়ন গাইবান্ধা; ৪৮, পাঞ্জাব ব্যাটেলিয়ন ঠাকুরগাঁও; ২৬, ফ্রন্টিয়ারস ফোর্স দিনাজপুর এবং ৮, পাঞ্জাব ব্যাটেলিয়ন রংপুরের একাংশ দখল করে নেয় এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা অনুসারে নীলফামারী-রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী সমগ্র দেশের মতো নীলফামারীর বিভিন্ন অঞ্চল দখল করার পর মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। ১৯৭১ সালে রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও এবং লালমনিরহাট অঞ্চল ৬নং সেক্টারের অন্তর্গত ছিল। ৬নং সেক্টরের প্রধান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট খাদেমুল বাশার। সে সময় সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাশারের অধীনে ছিলেন ৫জন সাব-সেক্টর কমান্ডার। তন্মধ্যে চিলাহাটি (নীলফামারী) সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল রশিদ। ডিসেম্বর মাসের ৩ তারিখে মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একিভূত হয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে দ্রুত গতিতে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। উত্তরাঞ্চলে মিত্রবাহিনীর প্রধান ছিলেন জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এম এল তপন, যার অধীনে ছিলেন ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার পিএন কাথাপালিয়া। একইসাথে মেজর জেনারেল পিসি রেড্ডি ছিলেন মিত্রবাহিনীর উত্তর-পশ্চিম সেক্টরে। তিনি ৬, মাউন্টেন ডিভশনের প্রধান ছিলেন। এই ডিভিশনের হেড কোয়ার্টর ছিল ভারতের কোচবিহারে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নীলফামারী তথা সৈয়দপুরের আত্মসমর্পণের ঘটনা আঞ্চলিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্বে আজকের দিনে জমজম (সৈয়দপুর) এয়ারপোর্টে ভারতের মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকসেনারা। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরুতেই নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা প্রভৃতি অঞ্চল দিয়ে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী আগ্রাসি হয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে ধেয়ে আসছিল। বিশেষত, খানসামা যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে ইছামতি নদীর তীরে অবস্থান নেয়; কিন্তু মিত্রবাহিনীর কৌশলে ইছামতির যুদ্ধেও পাকবাহিনীর চরম পরাজয় ঘটে। সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারীর খড়খড়িয়া নদীর তীরে পাকবাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। মিত্রবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে শুরু করে। চারিদিক থেকে একের পর এক পাকিস্তানি ঘাঁটির পতন হতে থাকে। পাকিস্তানিরা বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান নিতে শুরু করে, মিত্রবাহিনী অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতিতে সৈয়দপুরের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করে। নীলফামারীর আপামর জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। কার্যত, তখন তারা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে আটকা পড়ে যায়।
ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই মিত্রবাহিনীর প্রধানরা যেমন ঢাকায় পৌঁছে যায়, তেমন একই সাথে ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার পিএন কাথাপালিয়া সৈয়দপুরের সন্নিকটে নীলফামারীর দারওয়ানিতে পৌঁছে যান। ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে 23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী বুঝতে পারেন- মুক্তিযোদ্ধাদের হাত থেকে অন্তত প্রাণেবাঁচতে হলে আত্মসমর্পণের বিকল্প নেই। পাকিস্তান সৈন্যরা বুঝতে পারে- প্রাণেবেঁচে থাকতে হলে আত্মসমর্পণ করতে হবে মিত্রবাহিনীর কাছেই। মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে ইতোমধ্যে পর্যদুস্ত ও হতোদ্যম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অবশেষে চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে মিত্রবাহিনীর উত্তর পশ্চিমাংশের জেওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল এমএল তপন এর সাথে পরামর্শ গ্রহণ করে আত্মসমর্পণ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য দারওয়ানীতে প্রেরণ করা হয় ৬, মাউন্টেন ডিভিশনের প্রধান জিওসি মেজর জেনারেল পিসি রেড্ডিকে। তিনি একটি হেলিকাপ্টারে করে নীলফামারীর দারওয়ানিতে পৌঁছার পর সেখানে পাক মেজর ইকবাল শাফী এসে আত্মসমর্পণ বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করেন। আত্মসমর্পন বিষয়ে আলোচনার জন্য ভারতের কোচবিহার থেকে হেলিকাপ্টারে দারওয়ানি আসেন ৬, মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল পিসি রেড্ডি। 23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী পাকবাহিনীর 16th Infantry Division--এর জিওসি মেজর জেনারেল নজর হোসেনের সাথে ওয়ারল্যাসে যোগাযোগ করে মিত্রবাহিনীর সাথে দেখা করার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে ৪৮, পাঞ্জাবের অধিনায়ক একজন ধোপার মাধ্যমে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠায়। পাকিস্তানের ৪৮, পাঞ্জাবের অধিনায়ক ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের অধিনায়ক পিএন কাথাপালিয়ার সাথে আত্মসমর্পণ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করেছিল।
23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী যথারীতি দেখা করে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় মিত্রবাহিনীর কাছে এবং সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের পাশে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাকবাহিনীকে একত্র করার জন্য ১৭ তারিখ বিকেল পর্যন্ত সময় চান। আলোচনায় চূড়ান্ত হয় যে, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হবে সৈয়দপুরের জমজম এয়ারপোর্টে বিকাল ১৫টা ৪৫মিনিটে। ২১, রাজপুতকে সকল অস্ত্র আটক করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। ১২, রাজপুতকে সকল যুদ্ধবন্দীদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। ৫, গ্রেনেদিয়ারস সৈয়াদপুরের আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে এবং ৭, মারাঠা সৈয়দপুরে রিজার্ভ রাখা হয়। ফলে সৈয়দপুর ক্যান্টমেন্ট কার্যত মিত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
ইতোমধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু সৈয়দপুর অমিমাংসিত রয়ে গেছে। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১। সময় ১৫টা ৪৫মিনিট। জমজম এয়ারপোর্টের রানওয়েতে 23rd Infantry Brigade এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফী জেনারেল নজর হোসেন স্বাক্ষরিত আত্মসমর্পণের দলিল বের করেন। আত্মসমর্পণের দলিলটি সাদা কাগজে প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা বর্তমানে ভারতে সংরক্ষিত রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছে। ১৭ ডিসেম্বর পড়ন্ত বিকেলে সৈয়দপুরের জমজম এয়ারপোর্টে অবনত মস্তিস্কে পাকসেনারা। নেতৃত্বে রয়েছেন মিত্রবাহিনীর ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার পিএন কাথাপালিয়া। সাথে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ২১, রাজপুত ব্যাটিলিয়নের জুনিয়র অফিসার এসজি ডালভি। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি ছিল মূলত সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানরত 23rd Infantry Brigade- এর ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শাফীর অধীনে থাকা ৩৪, পাঞ্জাব (নীলফামারী), ২৫, পাঞ্জাব (লালমনিরহাট), ৪৮, পাঞ্জাব (ঠাকুরগাঁও) এবং ২৬, ফ্রন্টিয়ারস ফোর্সসহ (দিনাজপুর) অন্যান্য সেনা সদস্য ও বেসামারিক পাকিস্তানি কিছু ব্যাক্তিবর্গের সাথে মিত্রবাহিনীর একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। অন্যদিকে ৮৬, মুজাহিদ গাইবান্ধা এবং ৮, পাঞ্জাব রংপুরের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। একই দিনে রংপুরেও আরেকটি পৃথক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হয় সমগ্র উত্তরবঙ্গের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যেখানে উপস্থিত ছিলেন মিত্রবাহিনীর ২০ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল লেসম্যান সিং এবং পাক বাহিনীর 16th Infantry Division-এর জিওসি মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান চলাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশিদ মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে একাধিকবার সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি সৈন্যদের হত্যা করা কিন্তু ৭১, মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার পিএন কাথাপালিয়া তা কৌশলে ঠেকিয়ে রাখেন। ওই দিন সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করেন ১১১ জন পাক-অফিসার, ১৫৫ জন জেসিও, ৪৪৩২ জন সৈনিক, অন্যান্য ৭৯, বেসামরিক ৩৭, মোট ৪৮১৪ জন। আত্মসমর্পণের দলিলটিতে মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহা এর স্বাক্ষর রয়েছে।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাসের পাতায় ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ চিরোভাস্মর হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আর মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানের ফলশ্রুতিতে সৈয়দপুরে পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। সারেন্ডার অ্যাট জমজম এয়ারপোর্ট-এর মাধ্যমেই শুরু হয় নতুন এক ইতিহাসের, এই ইতিহাস নীলফামারীর ইতিহাস, এই ইতিহাসই বাংলাদেশের ইতিহাস।
লেখকঃ আইনজীবী ও পিএইচডি গবেষক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়