পাকিস্তানিদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বানচালের চেষ্টা করেছিল জামায়াত

1140

Published on ডিসেম্বর 12, 2021
  • Details Image

মুক্তিযুদ্ধ যখন শেষের দিকে, বাঙালি জাতির বিজয় যখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। পাকিস্তানিদের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং মুক্তিকামী বাঙালি জাতির পক্ষে যখন বিশ্বজুড়ে জনমত তুঙ্গে, ঠিক তখনই নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানিরা। তারা তখন জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে বাঙালি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। উদ্দেশ্য, বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় বানচাল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করা।

আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এও তৎপর হয়ে ওঠে পাকিস্তানিদের এটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য। এজন্য তারা খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, মাহাবুবুল আলম চাষীদের সঙ্গে একটি ডানপন্থী বলয় গড়ে তোলে। তাদের টার্গেট ছিল- মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয় রোধ করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে মুছে দেওয়া। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন রাষ্ট্র গঠন করা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন গোয়েন্দাদের সাথে তাদের এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায়, প্রবাসী সরকারের নেতারা সতর্ক হয়ে যায়। ফলে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে থেমে ছিল না জামায়াত। শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাসনা দমিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।

রণাঙ্গণে যেমন জামায়াতের নেতাকর্মীরা সরাসরি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেছে, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করেছে, লুটপাট করেছে, জবরদখল করেছে। তেমনি কূটনৈতিকভাবেও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের সমর্থন দান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে, যখন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি জান্তারা। ঠিক তখনই পাকিস্তানি জান্তাদের সমর্থনে এবং বাঙালির জাতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে কথা বলতে যায় জামায়াতের মুখপাত্র ও মুসলিম লীগ নেতা নেতা শাহ আজিজুর রহমান। সরাসরি মুক্তিযোদ্দাদের বিরুদ্ধ বিষোদগার করে সে। পাকিস্তান কূটনৈতিক দলের বাঙালি নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে, বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করে এই শাহ আজিজ। এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশকে যেনো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়, এজন্য আহ্বান জানায় সে। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসায়।

মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে জামায়াতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলী। আত্মজীবনীতে সে লিখেছে, 'জেনারেল নিয়াজী বাংলাকে শত্রুভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করে সেনাদের ক্ষেপিয়ে তুলতো। তবে আমি কিছু নেতার সাথে যোগাযোগ করি। ফলে নুরুল আমীন, খাজা খয়ের, ফরিদ আহমদ, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযমরা টিক্কার সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং শান্তি কমিটি গঠন করে। তাদের উদ্যোগে মুসলীম লীগ, পিডিপি, জামায়াতে ইসলামিসহ আরো কয়েকটি পাকিস্তানপন্থী দলকে নিয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। ৭ এপ্রিল যুদ্ধ চলাকালে তারা পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় একটি মিছিলও বের করেছিল। এরপর পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করা, রাজধানীর বাইরে রাস্তাঘাট চিনিয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করাসহ সার্বিক কাজের জন্য রাজাকার নামে আরেকটি বাহিনী গঠন করা হয়। এমনকি যুদ্ধকালে নিয়াজীর তৈরি সশস্ত্র আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীও দারুণ সহযোগিতা করেছে পাকিস্তানি সেনাদের। এসব বাহিনীর প্রধান ছিল গোলাম আযম, শাহ আজিজ, নিজামী, মুজাহিদসহ শীর্ষ জামায়াত ও শিবিরের নেতারা।' খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ৭১-এর ধর্ষক-খুনিদের এই কমান্ডারদের মন্ত্রী বানিয়েছিল।

মূলত, পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল রাজাকার বাহিনী। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এজন্য প্রায় ৫০ হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। এসময় একদিন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেনারেল একে নিয়াজী তার জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিককে ডাকে। সিদ্দিক সালিক তার আত্মজীবনীতে লিখেছে যে- এরপর নিয়াজি তাকে বলেছিল, 'আজ থেকে তুমি রাজাকারদের আল-বদর ও আল-শামস বলে অভিহিত করবে। তাহলে বোঝা যাবে না যে, এরা কোনো নির্দিষ্ট পার্টির লোক।'

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত