1077
Published on অক্টোবর 23, 2021সাম্প্রতিক সহিংসতার পর ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হামলাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে ২০,৬১৯ জনের বিরুদ্ধে মোট ১০২টি মামলা দায়ের হয়েছে। ৫৮৪ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন রাখার ঘটনায় সিসিটিভির ভিডিও দেখে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ১০ মামলায় এখন পর্যন্ত দুই ডজনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ সহায়তা, খাদ্য, কাপড়, অন্যান্য নিত্য পণ্য এবং গৃহ নির্মাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ঘর করে দেব এবং ইতোমধ্যে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ নিয়ে তারা কাজ করছেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মনোবল বাড়াতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশজুড়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাও তাদের সহায়তা করছেন বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৩৭টি জেলা ও তিনটি মহানগরীতে মোট ১১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে; পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী চব্বিশ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা, সংসদ সদস্য, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। কাউকে এ সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন।”
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকায় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি-সম্মেলন, শান্তি-মিছিল ও সভা করছে তাদের নেতাকর্মীরা।
“শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নগদ অর্থ, খাদ্য-বস্ত্র দেওয়া হয়েছে।”
শিগগিরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি টিম দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করবে বলে জানান বিপ্লব বড়ুয়া।
এদিকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জেলার জনপ্রতিনিধিদের সর্তক থাকার ও নিজ নিজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে যথাযথভাবে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দিয়েছে। রোববার এ বিষয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল সভা করবে মন্ত্রণালয়।
কোরআন অবমাননার অভিযোগে যেখান থেকে সহিংসতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল, কুমিল্লার সেই স্থান পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গত কয়েকদিনে প্রধান প্রধান ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শান্তি বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ধর্মীয় নেতা ও ইমামদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যের পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোকে মানবিক সহায়তা হিসেবে ঘর নির্মাণে ১০০ বান্ডেল টিন, নগদ চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং এক হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন।
রংপুর জেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নয় লাখ টাকার নগদ অর্থ ও ১০০ বান্ডেল টিন দিয়েছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাৎক্ষণিকভাবে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তাবু স্থাপন করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রতিটি পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।