উন্নয়নের পথযাত্রার কাণ্ডারী শেখ হাসিনা

1019

Published on সেপ্টেম্বর 30, 2021
  • Details Image

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজঃ

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যার জন্মদিনটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এই মহামারি বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করছে। করোনায় দেশে এ পর্যন্ত ২৭ সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে করোনায় বিশ্বের অপরাপর দেশের তুলনায় অতি ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বাধীন সরকার করোনার ভ্যাকসিন দেশের মানুষের জন্য বিনামূল্যে যে রকম সহজলভ্য করেছেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে তা তুলনাহীন। শুধু করোনা ভ্যাকসিনই নয়; সরকার এ সময় কর্মহীন হয়ে পড়া এবং নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাদ্য এবং আর্থিক সহায়তার ফলে সামাজিক সুরক্ষার দিকটি মুখ থুবড়ে পড়েনি।

করোনার ঢেউয়ে সারাবিশ্বে প্রতি তিনজনে একজনের কাজ হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার প্রবাসী আয়ের প্রবাহ অব্যাহত রাখা এবং নতুন শ্রমশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা জোরদারের পাশাপাশি বিদেশগামী শ্রমিকদের দ্রুত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। করোনায় বিশ্বের অনেক দেশ নাকাল হলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা পর্যবেক্ষকদের নজরে পড়েছে।

পর্যবেক্ষকরা আঞ্চলিক উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডেভিড ব্রিউস্টার গত ১০ জুন একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এতে ডেভিড ব্রিউস্টার বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখের পাশাপাশি আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ সুদানকে এ বছরের জুনে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা এবং আফ্রিকার অপর দেশ সোমালিয়ার দারিদ্র্যমুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ৮ দশমিক ২১ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়।

দুই দশক আগেও বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট প্রায় ৯০ শতাংশ বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করে প্রণয়ন করা হতো। আজ সেখানে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রভাবশালী দেশ হওয়ার পথে এ মাইলফলক আমাদের গর্ব ও অহংকারের।

এ কথা বিস্মৃত হয়নি যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার 'তলাবিহীন ঝুড়ি' হিসেবে উল্ল্লেখ করেছিলেন। আজ বাংলাদেশের ১৭ কোটি আত্মবিশ্বাসী মানুষ হেনরি কিসিঞ্জারের অভিমতকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। যেখানে প্রতিবেশী ভারতের আয় ১৯৪৭ ডলার এবং পাকিস্তানের ১৫৪৩ ডলার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্টেম্নর সোনার বাংলার বাস্তব রূপায়ণের কারিগর শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া সহজ ছিল না। 'মাদার অব হিউম্যানিটি' খেতাবপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মাসহ সবাই ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানার প্রবাস জীবনও সহজ ছিল না। ঘাতকের ভয়ে তাদের প্রকৃত নাম-পরিচয় গোপন করে থাকতে হয়েছে। তারা ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ভারতে আশ্রয় নেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে এবং দলের অভ্যন্তরে চেতনা ও মতাদর্শগত পার্থক্য সৃষ্টি হয়।

১৯৮১ সালে পিতৃমাতৃহীন শেখ হাসিনা ছয় বছর পর প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে আসেন। বিদেশে অবস্থানকালেই ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েক নেতার অনুরোধে সভানেত্রী নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মনে করেছেন, শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী পদে অধিষ্ঠিত করা হলে 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ঐক্যের প্রতীক' হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সুসংগঠিত করা যাবে। জনমানুষের আস্থা ফিরে আসবে। দেশে ফিরে শেখ হাসিনা ৩৩ বছর বয়সেই অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো বলেন, 'শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে।' শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মানুষ বুঝতে পারে, বঙ্গবন্ধুর মতোই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ সুপ্রশস্ত হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও সর্বস্তরের জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন, শিল্প-কারখানার উন্নয়ন, বাণিজ্য, যোগাযোগ, প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায়। দারিদ্র্যের হার কমে আসে, মাথাপিছু আয় ও গড় আয়ু বেড়ে যায়, স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হয়, দেশের নাগরিকের শিক্ষা-জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রজ্ঞা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। সামাজিক সেবার মান বৃদ্ধি পায় এবং সমাজের প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যে কারণে পুরো দেশের অবকাঠামোগত ও মনস্তাত্ত্বিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে বিধায় মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ও জীবনমান উন্নত হয়েছে। ডিজিটালাইজেশনের সুবাদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতেরও দৃশ্যপট পাল্টেছে। মানুষের স্বপ্টম্ন ও কল্পনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শত বছরের মহাপরিকল্পনা 'ডেল্টা প্ল্যান-২১০০' বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলে নতুন ভূমি জাগবে। দেশের আয়তন বাড়বে। এর সবই সম্ভব হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনায়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এই মেয়াদকালেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি উন্নত, ডিজিটাল, স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্টম্ন বাস্তবায়নে কাজ করে সফল হন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে মেগা প্রজেক্টগুলো শুরু করেন। এগুলো চালু হলে নিঃসন্দেহে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশ ও জনগণের জীবনমান আরও উন্নত হবে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকার ও দলে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। সব বাধা পেরিয়ে 'ভিশন-২০৪১' বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। জাতীয় জীবনে ঘনিয়ে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন। ইতোমধ্যে দুর্নীতি বন্ধের অনুশাসন জারি করেছেন। এতেও আকাশচুম্বী সফলতা আসবে বলে দেশের প্রতিটি নাগরিক বিশ্বাস করে। দেশ পরিচালনা; দেশ-জাতির কল্যাণ ও উন্নয়নে তার চিন্তা-চেতনা, স্বপ্টম্ন-কল্পনার বাস্তবায়ন, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের সদিচ্ছার কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রার কাণ্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তার ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন জানাচ্ছি।

লেখকঃ অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যেঃ দৈনিক সমকাল

(মতামত লেখকের নিজস্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত