1219
Published on সেপ্টেম্বর 7, 2021ড. আব্দুল জব্বার খাঁনঃ
খন্দকার মোশতাকের সরকার বা বিচারপতি সায়েমের সরকার কোনোটিই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা মেনে গঠিত হয়নি। সংবিধান মতে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর দায়িত্বভার উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে অর্পিত হওয়া উচিত ছিল। তা না করে সামরিক ব্যাকআপে খুনী চক্রের অন্যতম সহযোগী খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি এবং হাস্যকরভাবে প্রথম বেসামরিক প্রধান সামরিক শাসক বনে যায়। এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ বাকি তিন জাতীয় নেতাকে তার সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য নানান প্রলোভন এবং চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এই চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে কোনোভাবেই বশ করতে না পারায় তাদেরকে কারাবন্দী করে এবং ০৩ নভেম্বরে ৬০ রাউন্ড গুলি ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জেলের ভেতরেই হত্যা করা হয় তাদের। অর্থাৎ, সংবিধান অনুযায়ী যে উপ-রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর কথা ছিল, তাকেই হত্যা করা হয়েছিল। আজ যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারণ হিসেবে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যুক্তি দেন তারা হয় ইতিহাস জানেন না অথবা নির্লজ্জ।
এরপর আবু সাদাত সায়েম একজন বিচারপতি হয়েও একই ফাঁদে পা দিলেন। তাঁর প্রথম অপরাধ তিনি অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাকের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় অপরাধ, তিনিও নিজেকে প্রধান সামরিক হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তিন বাহিনী প্রধানকে উপ-সামরিক শাসক করে বাংলাদেশ সম্পুর্ণ অগণতান্ত্রিক লেবাসধারী একটি সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করলেন। শুধু তিনি নিজে মোশতাকের মত বেসামরিক প্রধান সামরিক শাসক ছিলেন বিধায় এই সায়েম সরকারকে 'সাচ্চা সামরিক শাসন' বলা যায়নি।
লক্ষণীয় হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণ হিসেবে অনেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যুক্তি দাঁড় করালেও ইতিহাসের এই গতিধারা কিন্তু কোনোভাবেই তা' সমর্থন করে না। স্পষ্টতই মোশতাক-সায়েমের দু'টি সরকারই গণতন্ত্র এবং সংবিধান পরিপন্থী ছিল। আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন, সেটি হলো অনেকেই মনে করেন যে বঙ্গবন্ধুর সময় দেশে বাকশাল সরকার ছিল, দেশে সব দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সঠিক তথ্য হলো, বঙ্গবন্ধু তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং সেই মতে জাতীয় দল গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষণস্থায়ী পদ্ধতি প্রস্তাব করেছিলেন। '৭৫ এর ০১ সেপ্টেম্বরে তাঁর সেই নতুন পদ্ধতির সরকার চালু হবার কথা ছিল। ১৫ আগস্টে সকল জেলার গভর্ণরদের শপথ নেয়ার কথা ছিল। আর সেই ১৫ আগস্টেই তাঁকে হত্যা করা হয়। যার ফলে তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের সরকার পদ্ধতি কখনো মাঠে গড়াতে পারেনি। লক্ষ্য করুন, সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছিল মোশতাক সরকার - '৭৫ এর ৩০ আগস্ট। সকল দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ড আবার উন্মুক্ত করেছিলেন সায়েম সরকার - '৭৬ এর ৩০ জুলাইয়ে।
গল্প আর ইতিহাস এক নয়। তারিখ ধরে ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হয় না। শোনা কথার গল্প দিয়ে প্রকৃত সত্য ঢাকা যায় না।