1694
Published on জুলাই 29, 2021সাইফুল্লাহ্ আল মামুনঃ
মাধ্যমিকে কবিতা বা গদ্যের নামকরনের সার্থকতা পড়েননি এমন ব্যক্তি হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না। কখনো কখনো গদ্য বা পদ্যর বাইরেও নাম করনের সফলতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যেমন আজ আমি করছি। কিন্তু কোন ব্যক্তির নামকরনের সার্থকতা নিয়ে কি কখনো আলোচনা হয়? হতে পারে। তবে নামকরনের পাঁচ মাসের মধ্যে কি কখনো সার্থকতা আশা করা যায়? আর যদি তা কোন মানুষের ক্ষেত্রে হয়! পৃথিবীতে এমন উদাহরন খুব বেশী হয়তো পাওয়া যাবে না কিন্তু আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যেই রয়েছে এক উজ্বল উদাহরন। যার ঐতিহাসিক মূল্যও আমাদের কাছে অনেক বেশী। হয়তো অনেকেই বুঝে গেছেন আমি বলতে চাইছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তনয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তিবিদ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালিন অগ্নিঝরা সময়ে জন্ম হয় জয়ের। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ডাঃ ওয়াদুদ ও ডাঃ সুফিয়া ওয়াদুদের ক্লিনিকে শেখ হাসিনাকে নেওয়া হলে চেক-আপ করা হয়। প্রতি সপ্তাহে ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
জুলাই মাসের মাঝামাঝি শেখ হাসিনাকে ডাঃ ওয়াদুদের তত্বাবধানে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সমস্যা দেখা দেয় হাসপাতালে কে থাকবেন। সেজন্য মেজর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেগম মুজিবকে থাকার অনুমতি চাইলে মেজর ইকবাল নামক একজন সেনা অফিসার বন্দীশালায় এসে রুঢ় ব্যবহার করে জানিয়ে দেয় কেবল একজন সেবিকা বা এজাতীয় কেউ একজন হাসপাতালে অবস্থান করতে পারবেন। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন এবং এ টি এম সৈয়দ হোসেনের স্ত্রী লিলি হোসেন নিজেই সেবিকা সেজে এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করেন। ২৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে নির্ধারিত সময়ের ৬ সপ্তাহ পূর্বে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।
পৃথিবীতে নতুন মানুষের আগমনেও কেউ মিষ্টি খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। উপরন্তু হাসপাতাল ও বন্দীশালা উভয় স্থানেই পাক বাহিনীর দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। শুরু হয় নতুন হুমকী ধামকী। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর বৃদ্ধ-অসহায় পিতা-মাতা ঢাকায় এসে আরামবাগে নাতনী জামাইয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনা সন্তানসহ হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে অতিগোপনে দাদা-দাদীকে নতুন অতিথিকে দেখিয়ে দোয়া নিয়ে বন্দীশালায় প্রবেশ করেন। বন্দীশালায় আসার পর দেখা দেয় বাচ্চা ও মা উভয়ের জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু এবারও পাকিদের প্রচন্ড উগ্রতায় চিকিৎসককে বাড়িতে আসতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দু’জন সশস্ত্র প্রহরীকে দেওয়া হয়। এমনিই নানান সংকট শুধুমাত্র পরম করুনাময়ের অশেষ রহমতেই উৎরাতে পেরেছেন বঙ্গবন্ধু পরিবার।
একদিন নবজাতককে গোসল করিয়ে শরীরে তেল মাখতে মাখতে বেগম মুজিব ছেলে সন্তানের নাম কী হবে সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনা করছিলেন। শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে পিতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে জানান, “আব্বা আমাকে বলেছিলেন, ছেলে হলে জয় বাংলার ‘জয়’ আর মেয়ে হলে ‘জয়া’ নাম রাখতে”। বেগম মুজিব সঙ্গে সঙ্গেই নবজাতককে কোলে তুলে নিয়ে বলেন, ‘সত্যিই এ আমার জয়। আমার কোন ভাই নেই, জয় আমার সত্যিই ভাই। তাই মুজিব নামের সঙ্গে মিলিয়ে আসল নাম রাখলাম সজিব’। সেই থেকে ‘সজিব ওয়াজেদ জয়’ বাংলার বিজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দলমত নির্বিশেষে সকলের স্লোগান ′জয় বাংলা′ একই সুত্রে গাথা এক অচ্ছেদ্য সম্পর্ক।
এই নাম রাখার পর থেকেই বন্দীশালায় পাহারারত সৈন্যরাসহ অন্যান্য অফিসারেরাও ড. ওয়াজেদকে প্রায়শই জিজ্ঞাসা করতো ‘জয় নাম কিসলিয়ে রাখা’? ড ওয়াজেদ কৌশলে আসল কথা এড়িয়ে গিয়ে বলতো, নাতিকে পেয়ে আমার শাশুড়ি খুব খুশী হয়েছেন। যেহেতু ‘জয়’ মানে ‘আনন্দ’ তাই আমার শাশুড়ি ‘জয়’ নাম রেখেছেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারন করলে পাহারারত সৈন্যসহ অফিসারেরাও ড. ওয়াজেদকে কটাক্ষ করে বলতো, “পশ্চিম পাকিস্থানমে এক নমরুদকো(বঙ্গবন্ধু) পাকড়াও করকে রাখা হুয়া, লেকিন এধার এক কাফের(সজিব ওয়াজেদ জয়) পয়দা হুয়া।”
বাঙালির জীবনে স্বাধীন বাংলাদেশ পাওয়া হলো পরম পাওয়া। আর সেই পরম পাওয়াটি নিশ্চিত করতে লক্ষ কোটি নিবেদিত প্রাণ নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে। কেউ সম্মুখ সমরে আবার কেউ আড়ালে অন্তরালে ভোগ করেছেন অপরিসীম যাতনা। তবু সকলেই যেন মেনে নিয়েছেন সেই কষ্টের কথা, বেদনার কথা।
এটাই তো স্বাভাবিক যে, বর্বর পাকবাহিনী যাকে নমরুদ বলে গালি দিয়েছে সে-ই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর যাকে কাফের বলে তিরষ্কার করেছে সে হবে আধুনিক বাংলাদেশের অতি আপন মানুষ সজিব ওয়াজেদ জয়। শুভ জন্মদিন জয় বাংলার জয়। শুভ জন্মদিন মুজিবের সজীব।
জন্মের পাঁচ মাসের মধ্যেই জয় নামের স্বার্থকতা এসেছিল। বাঙালি তার হাজার বছরের শৃঙ্খলের পরকাষ্ট ভেঙে মুক্তির স্বাধ পেয়েছিলো। আর যৌবনে জয়ের মস্তিষ্ক প্রসূত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করে বিশ্বের দরবারে উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উচু করে দাড়াবে। ইতিমধ্যে সে পথে বাংলাদেশের অগ্রগামিতা বিশ্বের মধ্য সারির এবং অনুন্নত দেশ সমূহের সামনে নি:সন্দেহে বাস্তব উদাহরন।
সত্যিই জন্ম এবং কর্মে জয় নামের সার্থকতা আমরা পরতে পরতে উপলব্ধি করছি। জয় নামের এই সার্থকতা অব্যহত থাকুক অনন্তকাল।
লেখক: সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটি।