2295
Published on জুন 5, 2021ইয়াসির আরাফাত তূর্যঃ
বাঙালি জাতির মুক্তির প্রমিথিউস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ''একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি, একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সাথে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা ,অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি ও অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।"
বাঙালির প্রতি শেখ মুজিবের এই অমোঘ ভালোবাসা ও তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অন্যতম প্রকাশ ছিল ছয় দফা ঘোষণা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েই ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।
শেখ মুজিব কর্তৃক পেশকৃত ছয় দফা দাবিসমূহ:
দফা-০১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি: লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।
দফা-০২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ।
দফা-০৩ : মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা: মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু'টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ (ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা (খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে।
দফা-০৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা: ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।
দফা-০৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা: (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে। (গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে। (ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না। (ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।
দফা-০৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা: আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।
শাসকগোষ্ঠীর প্রচণ্ড চাপে ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা ৬ দফা দাবি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলে যে, পাকিস্তানের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে এর জবাব দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরেই তিনি সাংবাদিকদের সামনে ছয় দফা দাবিসমূহ সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন।
১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়। এরপর শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যার শিরোনাম ছিল "ছয় দফা: আমাদের বাঁচার দাবি"।
১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সম্মেলনে ৬ দফা দাবি সমূহ পেশ করেন। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে।
খুব সহজেই যে ছয় দফা দাবিকে সবাই গ্রহণ করেছিল তা কিন্তু নয় বরং ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলতে অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে, সইতে হয়েছে পাশবিক নির্যাতন ,নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে, নানান ষড়যন্ত্রে জর্জরিত হতে হয়েছে শেখ মুজিবসহ মুক্তিকামী বাঙালি নেতাকর্মীদের। এসময় শাসকগোষ্ঠীর মদদে একদল ধর্ম ব্যবসায়ী শাসকশ্রেণির দালাল প্রচার করতে লাগলো যে- ছয় দফা ইসলাম বিরোধী দাবি, ধর্ম নষ্ট করার পাঁয়তারা ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে ছয় দফা আন্দোলন নস্যাৎ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকলে শেখ মুজিব জাতির উদ্দেশ্যে এক রেডিও ও টেলিভিশনে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন,
"৬ দফা বা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ইসলামকে বিপন্ন করে তুলেছে বলে যে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে, সেই মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্যে আমি শেষবারের মতো আহ্বান জানাচ্ছি। অঞ্চলে অঞ্চলে ও মানুষে মানুষে সুবিচারের নিশ্চয়তা প্রত্যাশী কোনো কিছুই ইসলামের পরিপন্থী হতে পারে না।''
৭ জুন ছয় দফা দিবস
প্রতি বছর ৭ জুন বাংলাদেশে 'ছয় দফা দিবস' পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী যে তীব্র গণ-আন্দোলনের দাবানল সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি শাহাদাৎ বরণ করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুকে জেলে আটকে রাখা হয়েছেল।
১৯৬৬ সালের ১০ ও ১১ জুন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায়, হরতাল পালনের মাধ্যমে ছয় দফার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করায়, ছাত্র-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ জানানো হয়। পূর্ববঙ্গের মানুষ যে স্বায়ত্তশাসন চায়, তারই প্রমাণ এই হরতালের সফলতা। সেজন্য এই সভায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামীলীগ কর্তৃক ১৯৬৬ সালের ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন নির্যাতন-নিপীড়ন প্রতিরোধ দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগের সব নেতা–কর্মীর বাড়িতে বাড়িতে কালো পতাকা উত্তোলন এবং তিন দিন সবাই কালো ব্যাজ পরবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। হরতালে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি তহবিল গঠন এবং মামলা পরিচালনা ও জামিনের জন্য আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি আইনি সহায়তা কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামীলীগের দলীয় তহবিল থেকে সব ধরনের খরচাদি বহন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া, আন্দোলন সংগ্রামের সব কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ছয় দফা দাবির ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন আরও ব্যাপকভাবে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সভা, সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিল, প্রচারপত্র বিলিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই দাবির প্রতি ব্যাপক জনমত গড়ে তোলার বৃহত্তর রাজনৈতিক কার্যক্রম নির্ধারিত হয়।
অন্যদিকে বাঙালির উপর শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে আইয়ুব-মোনায়েম গং যত কঠোর নির্যাতন চালাতে থাকেন, জনগণ তত বেশি তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সব নিপীড়ন পদদলিত করে আরও সংগঠিত হতে থাকেন।
১৯৬৬ সালের ২৩ ও ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং আন্দোলন দ্বিতীয় ধাপে এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই আন্দোলন কেন্দ্র থেকে জেলা, মহকুমা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে ।
দমন পীড়ন ও গণআন্দোলন
শোষক সরকারও নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে। যাদেরকেই আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হতো, তাদের নির্বিচারে বিনাদোষে গ্রেফতার করতে থাকে সরকার। অবশেষে অবশিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগের একমাত্র মহিলা সম্পাদিকা আমেনা বেগম। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সিদ্ধান্ত দিলেন, উদ্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমেনা বেগমকেই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হোক। আওয়ামী লীগ সেই পদক্ষেপ নেয়।
বাঙালির প্রাণের দাবি হিসেবে পরিণত হওয়া ছয় দফাকে নস্যাৎ করতে পাকিস্তান সরকার নতুন চক্রান্ত শুরু করল। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকার কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে নিয়ে যায়। অত্যন্ত গোপনে রাতের অন্ধকারে সেনাবাহিনীর দ্বারা এই ঘৃণিত কাজ করানো হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায়।
এই মামলায় ১ নম্বর আসামি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সঙ্গে আরও ৩৪ জন সামরিক ও অসামরিক অফিসার ও ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে ছয় দফা দাবি নস্যাৎ করতে কিছু নেতাকে দিয়ে আট দফা নামে আরেকটি দাবি উত্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তবে এতে তেমন কাজ হয় না। গুটিকয়েক নেতা বিভ্রান্ত হলেও ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার প্রতিই ঐক্যবদ্ধ থাকেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা অর্থাৎ রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান মামলার মূল অভিযোগ ছিল যে- আসামিরা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়।
এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বক্তব্য ছিল, "আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ, সংখ্যাগুরু। আমরা বিচ্ছিন্ন হব কেন? আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। যারা সংখ্যালগিষ্ঠ, তারা বিচ্ছিন্ন হতে পারে, সংখ্যাগরিষ্ঠরা নয়।"
এই মামলা দেওয়ার ফলে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বাংলার মানুষের মনে স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ও চেতনা শাণিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হয়। ছাত্ররা ছয় দফাসহ এগারো দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জেলা, মহকুমায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করো; জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো; শেখ মুজিবের মুক্তি চাই’ এ ধরনের স্লোগানে স্লোগানে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পাশাপাশি স্কুলের ছাত্ররাও রাস্তায় নেমে আসে। এরই একপর্যায়ে ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের আশঙ্কা হয়, এভাবে তাদের নেতা শেখ মুজিবকেও হত্যা করা হতে পারে। সাধারণ মানুষ ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করতে অগ্রসর হয়। জনতা মামলার বিচারক প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
প্রচণ্ড গণ–আন্দোলনের মুখে ২১ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে একটা সামরিক জিপে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তার ধানমন্ডির বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। অন্য বন্দিদেরও মুক্তি দেওয়া হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের হর্ষধ্বনিতে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন তিনি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে সংঘটিত তীব্র গণ–আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে। ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান। ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক বক্তব্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়