1890
Published on জুন 2, 2021অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরঃ
করোনা মহামারির মাঝেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট এটি। চলতি বছরের ৩ জুন জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। গতবারের মতো এবারও করোনা মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজেটের সারসংক্ষেপ দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাজেট বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিয়েছেন।
কৃষিঋণে সুদের হার কমাতে হবে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোকে সুসংহত করতে হবে। বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কমানোসহ কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।
করোনা মহামারির চলমান সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের বাজেটে বিশ্ব অর্থনীতির সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামঞ্জস্যতার নিরিখে বেশ কয়েটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করোনা মোকাবিলা। আগামী এক-দুই বছর আমাদের দেশে করোনা মোকাবিলা সবচেয়ে জরুরি খাত হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে করোনার বিস্তার রোধে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য টিকা দেওয়ার বিকল্প নেই। আগামী অর্থবছর দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে, সেজন্য টিকা কেনা, দেওয়া, সংরক্ষণ, টিকা দানকারীদের প্রশিক্ষণসহ এই বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আগামী বাজেটে রাখতে হবে।
গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষায়। বর্তমানে আমাদের চিকিৎসকের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। যথেষ্ট ঘাটতি আছে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর। আগামী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। করোনার এই সংকটকালীন এ খাতের জরুরি চাহিদা মেটাতেও এবারের বাজেটে এ খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্যশিক্ষা খাতকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্য আগামী বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতকে মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছেন।
এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭.৪ শতাংশ, জিডিপির ১.৩ শতাংশ। আগামী বাজেটে করোনায় কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় সেজন্য মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে অত্যাধুনিককরণ, সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সরঞ্জাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এই মাস্টারপ্ল্যান যেন ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে যেন তার মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবাকে আরও গতিশীল করতে আগামী বছরের বাজেটে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং এদের জন্য প্রণোদনা, ঝুঁকি ও সম্মানি ভাতা বাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা এ খাতকে গতিশীল করবে বলে আমার বিশ্বাস।
করোনা মহামারিতে মানুষের জীবন রক্ষা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করে চলছেন। এই সংগ্রামে তিনি বেশ সফলতাও পেয়েছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। ১২ বছরে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। ২০০৫ সালে দেশে দারিদ্র্যতার হার ছিল ৪০ শতাংশ ২০২১ সালে এই হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এখন করোনার অতিমারির কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দরিদ্র পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আগামী বছরের বাজেটে বেশকিছু কর্মসূচি রাখা একেবারেই আবশ্যক বলে মনে করছি।
করোনার কারণে কিছু লোক তাদের কাজ হারিয়েছে,তাদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এবং যেসব কাজ হারিয়ে গেছে সেই কাজগুলোকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। এই দুটি বিষয়কে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এই কাজ ফেরত পাওয়া এবং নতুন কাজ সৃষ্টির মধ্যকার সময়ে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অর্থবছরে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ এবং দারিদ্র্য নির্মূলে আড়াই কোটি মানুষকে অস্থায়ীভাবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছে এই বাজেটের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে গরিবদের এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা। যারা অতিরিক্ত গরিব আছেন, তারা গরিব হবেন এবং যারা গরিব আছেন তাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা আমরা আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু যদি এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হয় তাহলে তাদের কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অন্যথায় তা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। বাজেটে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ নজর দিতে হবে। কৃষি খাতেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দতে হবে। দেশের খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে কৃষিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করতে হবে।
কৃষিঋণে সুদের হার কমাতে হবে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোকে সুসংহত করতে হবে। বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কমানোসহ কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্রতা রোধে গত বছর ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এ বছর করোনা মহামারিতে কাজ হারানো ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার দরিদ্র পরিবার আড়াই হাজার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু এই মানুষগুলোকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ সব সময় সরকারের পক্ষে তাদের অর্থ সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে না।
মানব সভ্যতা টিকে আছে শিক্ষার ওপর। শিক্ষাকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। করোনার অতিমারিতে যেসব খাত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা খাত।শিক্ষায় যে ক্ষতিটা হচ্ছে তা এখন সেভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে না কারণ শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। যেখানে শিক্ষার যেকোনো প্রভাব ১০ থেকে ১২ বছর পরে পড়ে।করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিগত ১৫ মাস যাবত বন্ধ।এই বন্ধ আগামী ১২ই জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হয়তো এই বন্ধের সময় সময়সীমা আরো অনেক দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে।এর প্রভাব এখন আমরা সেভাবে উপলব্ধি করতে পারবো না। এর প্রভাব আমরা উপলব্ধি করতে পারবো এখন থেকে ১০ থেকে ১২ বছর পরে। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের বাজেট এবং এর পরবর্তী বাজেটগুলো প্রণয়ন করতে হবে।
করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিগত ১৫ মাস যাবত বন্ধ। এই বন্ধ আগামী ১২ই জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দীর্ঘ বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইতোমধ্যে ঝরে পড়েছে, হয়তো আরো একটি অংশ আর পড়াশুনাই করবে না। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থা এক কঠিন বাস্তবতার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। এই বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে টিকার আওতায় না এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সংশ্লিষ্ট সকলেই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বাজেটে এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বা বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত। এই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ বিকল্প পাঠদান পদ্ধতি হিসেবে আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও বিনামূল্যে আবার কোথাও স্বল্পসুদে ল্যাপটপ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিনামূল্যে ডাটার ব্যবস্থা করতে হবে, এ জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা বরাদ্দ রাখতে হবে।শিক্ষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে তা নাহলে শিক্ষকরা নতুন প্রযুক্তিতে শিক্ষা দানে উৎসাহিত হবে না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতি অর্থবছরেই বাজেটের আকার রেকর্ড গড়েছে।২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে বাজেটের আকার দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর গত বছর করোনা সংকটের মধ্যে ঘোষণা করা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আগের বছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৩৩ হাজার ৫১১ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ এক হাজার ৫১১ কোটি টাকার বাজেট প্রাক্কলন করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
করোনা মহামারির মধ্যেও বঙ্গবন্ধু কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে কয়েকটি দেশ এগিয়ে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অন্যান্য দেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খাবি খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৫.২৪ শতাংশ। আর আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। অন্যদিকে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫.৩ শতাংশ।এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার। যা বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
যে কোন প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষ তার জীবন ও জীবিকা রক্ষার তাগিদে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লাড়াই করে থাকে। মানুষের এ লাড়াই মৃত্যু, শোক, জরা কিংবা তাপের মধ্যেও থেমে থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক অতিমারি বা মহামারির বিপর্যস্ত বাস্তবতায় আমরা যার যার অবস্থান থেকে একই সঙ্গে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সেই ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট রয়েছি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় মহামারির শুরু থেকেই প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সারাদেশের সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে সহায়তা প্রদান করেছেন।পাশাপাশি সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচীও অব্যাহত রয়েছে।৬৪ জেলায় ইউনিয়ন হিসেবে করে জেলা প্রশাসকদের কাছে বেশ কিছু টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে,যাতে যে কোন জায়গায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে তারা যেন সেটা ব্যয় করতে পারেন এবং দুস্থদের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
এছাড়া সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ১০ কোটি টাকা প্রদান করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই মহামারি মোকাবেলায় শিল্পী, কলা-কুশলী থেকে শুরু করে মসজিদ-মাদ্রাসায়ও অনুদান দিয়েছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে,লাশ দাফন,মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দেয়ার মতো কাজগুলোও করেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ততটা উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ভাষণের বলেছিলেন ‘আমাদের এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে,যে সমাজে কৃষকরা, ক্ষুধার্ত জনগণ আবার হাসতে পারবে।’অর্থাৎ এ কৃষক শ্রমিক বঞ্চিত মানুষ তাদের ভাগ্য গড়া এটিই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেটাই তিনি করতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতার সেই সেই আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশের ক্ষুধার্ত জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। গত একযুগে দেশ কতটা উন্নত হয়েছে তা গত তিন বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন।
লেখক : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি,বাংলাদেশ।