1506
Published on মে 19, 2021হায়দার মোহাম্মদ জিতু:
রাজনৈতিক চিন্তা এবং কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে অনেককেই চাণক্য নীতি, নিকোলা ম্যাকিয়াভেলির প্রিন্স, হেগেল, মিশেল ফুকো, মার্কসসহ অনেক প্রজ্ঞাবান চিন্তকের চিন্তাকে ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ এবং উদ্ধৃত করে থাকেন। কিন্তু প্রত্যেক দর্শন এবং কৌশলই যে আপন আপন ভৌগলিক সীমানা, সংস্কৃতি এবং সমস্যার বিপরীতে সৃষ্টি সেটা অনেকেই বেমালুম চেপে যান। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাস মতে, এই ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিনিয়তই নির্মাণ-বিনির্মাণ ঘটে।
সে হিসেবে এই বাংলার রাজনৈতিক ‘দর্শন-ব্যাকরণ’ বাঙালি জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাকে এখন উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ভেতর দিয়ে বিনির্মাণ করে চলেছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। তবে এও স্বীকার করতে হবে নিজের চর্চা-চেষ্টা এবং সাহসিকতায় শেখ হাসিনা যে প্রজ্ঞা অর্জন করে চলেছেন তাতে তিনি নিজেই এক দর্শন সত্তা হয়ে উঠেছেন। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো মেগা প্রজেক্টকে বাস্তবায়নের পথে নিয়ে চলেছেন।
যদিও এরপরও সস্তা সমালোচনাকারীরা কুৎসা করেন, শায়েস্তা খাঁর আমলে টাকায় আটমণ চাল পাওয়া যেত। কিন্তু তৎকালীন সময়ে যে প্রচুর মানুষ না খেয়েও মারা যেত সে বিষয়ে কোনও বিস্তৃত আলোচনা করেন না। মানসিক নৈরাজ্য পোষণকারী ব্যক্তিরা তো বলেই ফেলেন পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিল। এরা মূলত পাকিস্তানি বংশধর নয়ত পাকিস্তানি এজেন্ট-এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী। অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশ যে আজ খাদ্য শস্যসহ উদ্বৃত্ত পণ্যের অধিকারী সে খবর এরা রাখেনই না।
যেখানে খোদ পাকিস্তানি রাজনীতিবিদরা জনগণকে আশ্বাস স্বরূপ নিজের দেশকে সুইজারল্যান্ড বানানোর প্রতিশ্রুতি দিলে পাল্টা জবাব হিসেবে সেদেশের মিডিয়া-টকশো জানায়, সুইজারল্যান্ড নয়, আল্লাহর দোহাই আমাদের দেশকে বাংলাদেশের মতো বানিয়ে দাও (সুইজারল্যান্ড নেহি, খোদাকে ওয়াস্তে হামে বাংলাদেশ বানাদো)।
তবে তাদের জন্যে ভয়ঙ্কর বাস্তবতা হলো তাদের একজন শেখ হাসিনা নেই। যিনি মৌলবাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নারীদের এগিয়ে নেবেন এবং সকলকে নিয়ে ভাববেন। আরও বিস্তৃত অর্থে, যিনি শুধুই এবং শুধুই দেশ জনগণ নিয়ে ভাববেন। যদিও এই জনগণের হয়ে ওঠার পথটাও তাঁর সহজ ছিল না। কারণ ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর তাঁর দেশে ফেরার ব্যাপারে ঘোষিত-অঘোষিত নানা নিষেধাজ্ঞা ছিল।
কিন্তু সকল মানসিক নিপীড়ন এবং হত্যার হুমকিকে মোকাবিলা করে ১৯৮১ এর ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন এবং জনগণের জন্যে সংযম-সংগ্রামের যাত্রা শুরু করেন। তাঁর এই অদম্য লড়াকু মানসিকতা এবং অগ্রযাত্রা রাজনীতি করা, করতে চাওয়া প্রজন্মের কাছে অবশ্যই চর্চার। কারণ বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে নারী নীতি গ্রহণ করলেও পরিপূর্ণভাবে তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। ফলাফল বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী বাংলা ছেয়ে গিয়েছিল মৌলবাদী চিন্তায়।
সেই সময়কে মোকাবিলা করেও মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১০ বছরের পুত্র জয় এবং ৯ বছরের কন্যা পুতুলকে কোলে-কাঁধে নিয়ে সংসার এবং দল-দেশ সামলেছেন। যা দিগন্ত ছাড়িয়ে যাবার মতই। এসব ছাড়াও তাঁর আরেক কীর্তি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশসহ বিশ্ব ব্যবস্থার জন্যে মাইলফলক। তা হলো রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েও নিজের, নিজের সন্তানদের এবং জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই চালিয়ে গেছেন এবং এখনও যাচ্ছেন।
তবে তাঁর জন্যে আরও বহুমুখী লড়াই অপেক্ষা করছে। কারণ রুপের বদলে পুরনো শত্রুরা নতুন নতুন জোট তৈরি করছে। তাছাড়া বৈশ্বিক বিজয়ের অংশীদার হয়ে উঠায় মৌলবাদী আখড়া নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে এখানে ঘাটি চাহিদা এবং অস্ত্র বিক্রির বাজারে ঢোকাবার কৌশল মারাত্মক তৎপর। এক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, দাতা সংস্থা, ধর্মীয় লবিষ্ট ছদ্মবেশে অনেকে হয়ত অবস্থানও করছেন। অর্থাৎ দীর্ঘ মেয়াদি স্লিপার সেল হিসেবে কাজ করছেন। যা বিশ্ব রাজনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কাঠামো বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়।
কাজেই এই লড়াই আগামীতে আরও প্রকপ হয়ে উঠতে পারে। যা ঘটবে মৌলবাদী এবং তাদের ঘাড়ে চেপে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাথে প্রগতিশীল বাংলাদেশের। তবে এই লড়াইয়েও বিজয় সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রজন্মের কাছে ইংরেজি, আরবি যে যে ভাষা বোঝে সেই ভাষাতেই অনূদিত করে দেশের ইতিহাস শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। আর তা করতে পারলে পূর্বসূরিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়বে এবং গৌরবান্বিত হয়ে উঠবে নিজের জাত্যাভিমান।
আর এসবও সম্ভব এবং প্রত্যাশা আছে হবে। কারণ এই প্রজন্ম এবং বাংলাদেশের একজন শেখ হাসিনা আছেন।
লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ
সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন