এখন হেফাজতের হেফাজত করবে কে?

2498

Published on এপ্রিল 28, 2021
  • Details Image

বিভুরঞ্জন সরকার:

সরকার যে তাদের প্রতি কঠোর হতে পারে, সরকারেরও যে নিজস্ব রাজনৈতিক লক্ষ্য, পরিকল্পনা এবং কৌশল আছে, সেটা সম্ভবত হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটির নীতিনির্ধারকরা ভুলে গিয়েছিলেন। গত কয়বছর আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে নমনীয় আচরণ পেয়ে হেফাজতের কিছু নেতা বেশিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠেছিলেন। তারা ধরে নিয়েছিলেন, তারা যেহেতু ইসলামের হেফাজত করার নিয়তে মাঠে নেমেছেন, তাই সরকারসহ অন্য সবাই তাদের হেফাজতের দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য। তাই নিজেদের ‘অরাজনৈতিক’ দাবি করা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিষয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে নাক গলানো শুরু করেছিলেন। এমন কি সরকার উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের খোয়াবও হেফাজত নেতাদের কেউ কেউ দেখতে আরম্ভ করেছিলেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার ধৃষ্টতাও হেফাজতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেখিয়েছেন।

তারা যে ভুল করেছিলেন গত কয়দিনে সেটা তাদের বোধে এসেছে। হেফাজতের প্রধান মুখ হিসেবে সামনে আসা মামুনুল হকসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে যাওয়ার পর এখন হেফাজত বুঝতে পারছে, কত ধানে কত চাল। রাজনীতির চালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তারা যে শিশু এটাও এখন বুঝতে তাদের কষ্ট হচ্ছে না। সোজা রাজনৈতিক পথ পরিহার করে বাঁকা পথে হেঁটে শেখ হাসিনাকে বিপদ ফেলার চেষ্টা-অপচেষ্টা করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এখন গভীর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। অথচ হেফাজত শেখ হাসিনার সরলতাকে দুর্বলতা ভেবে একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে, যা তাদের এখন খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়েছে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের নাম ব্যবহার করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে হেফাজত ইসলাম বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে। আত্মরক্ষার উপায় খুঁজতে দিশাহারা হেফাজত নেতারা এখন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে গা বাঁচাতে আবারও সমঝোতা চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। অবশ্য সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “যারা সহিংসতা করেছে, তারা যতই সমঝোতার জন্য আসুক অপরাধের জন্য তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে।”

সরকার তার অবস্থানে দৃঢ় থাকলে হেফাজতের যেসব নেতা সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত, যারা বিভিন্ন সময় নানা সন্ত্রাসী কাজে সংশ্লিষ্ট থেকেছে, ভিন্ন দেশ থেকে টাকাসহ সমর্থন পেয়ে বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা পালন করেছে, তারা এবার শাস্তি এড়াতে পারবে না। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হেফাজত নেতারা জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা যাচাইবাছাই করে অন্য যাদের নাম বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত বলে জানা যাচ্ছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ধর্মের নাম ব্যবহারকারী এই চিহ্নিত লেবাসধারীরা যে দেশের জন্য কত বড় ক্ষতির কারণ হতে পারেন, তা বোঝার জন্য আর নতুন কোনো গবেষণাপত্রের অপেক্ষায় থাকার দরকার নেই। এরা আসলে বিষ বহনকারী সাপের মতো। ওঝা দেখতে ফনা নামালেও আবার দংশন করার সুযোগের জন্য মওকা খোঁজে। মামুনুল হকের মতো হেফাজতিদের আবার অনুকম্পা দেখালে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। খোন্দকার মোশতাকের মতো যারা সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হওয়ার সুযোগ খোঁজে তাদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডকেও নির্মোহ হতে হবে।

আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবেই সম্ভবত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। ২৫ এপ্রিল রোববার রাত ১১টায় এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দিয়ে বাবুনগরী বলেন, “দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতার পরামর্শে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। ইনশা আল্লাহ আগামী দিনে আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে হেফাজতের কার্যক্রম শুরু হবে।”

এর আগে একইদিন বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। আল-হাইআতুলের অধীনেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হয়ে থাকে। যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় আল-হাইআতুলের স্থায়ী কমিটির সভায় ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতির বাইরে থাকার ওই সিদ্ধান্ত হয়। তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও ঠিক হয়।

এটা এখন জানা যে, গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ–সহিংসতার পর হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। বিক্ষোভ–সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এর মধ্যে রোববার পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন বাবুনগরী। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরই আবার বাবুনগরীকে আমির এবং নুরুল ইসলামকে মহাসচিব করে মোট ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়ায় অনেকের কাছেই এটাকে একটি গোঁজামিলের চেষ্টা বলে মনে হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির একাংশের সঙ্গে বিরোধের মধ্যে গত বছরের ১৫ নভেম্বর এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। জুনাইদ বাবুনগরী নেতৃত্বাধীন কমিটিতে শাহ আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী এবং তার অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি। আহমেদ শফীর সঙ্গে সরকারের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে বাবুনগরী এবং মামুনুল হকরা সরকারের বিরুদ্ধে বলে পরিচিত। ওয়াজ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে এরা সরকারবিরোধী কঠোর বক্তব্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার মতো উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে তারা দেশের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরিতে মদদ জুগিয়ে এসেছে।

প্রথমে সরকার ঘোষিত নারী নীতির বিরোধিতা করে মাঠ গরম করেছিল হেফাজত। তারপর গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ–সহিংসতা করে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। শাপলাচত্বর ঘটনায় হেফাজতকে পেছন থেকে উৎসাহ জুগিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। বেগম জিয়ার সঙ্গে বাবুনগরীর বৈঠকের কথাও এখন জানা যাচ্ছে। সরকার পতনের একটি লক্ষ্য তখনও হেফাজতের ছিল। কিন্তু সরকার তাদের শাপলাচত্বর থেকে বিতাড়িত করায় ওই সময় কিছুটা পশ্চাদপসারণ করতে হয় তাদের। তারপর এক অংশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি নেওয়ায় অন্যপক্ষ তলা গোছানোর কাজ করতে থাকে। মাওলানা আহমেদ শফীর অসুস্থতা এবং মৃত্যুর পর উগ্রবাদীদের দখলে চলে যায় হেফাজত।

গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমে নতুন করে আলোচনায় আসে হেফাজত এবং সে সময় থেকে মামুনুল হক হয়ে ওঠেন হেফাজতের অন্যতম নেতা । বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে আবার পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে হেফাজত। প্রকাশ্যে হিন্দুত্ববাদী মোদীর বিরোধিতা করা হলেও তাদের আসল টার্গেট ছিল বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব। ওই উৎসব পণ্ড করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক এ অপশক্তি গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ঢাকা, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। এ সময় সংঘাত–সহিংসতায় সরকারি হিসেবে ১৭ জন নিহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং আরও কয়েক জায়গায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। থানা-রেলস্টেশনও তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। এসব সহিংস ঘটনার পর হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জোরদার হয়ে ওঠে। দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পোষার অভিযোগও সরকারের বিরুদ্ধে ওঠে।

হেফাজত যখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তখন, গত ৩ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ কৌতূহলী মানুষের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। হেফাজতের নেতা–কর্মীরা সেখানে হামলা চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেন। মামুনুলের নানা নারী কেলেঙ্কারির ভিডিও ফাঁস হওয়ার পরও তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে হেফাজত নেতৃত্ব তাদের নৈতিক অবস্থান সাধারণ মানুষের সামনে দুর্বল করে তোলেন। বিয়ে নিয়ে তাদের অপব্যাখ্যা মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়ে তোলে। এরপর হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দৃশ্যমান হয়। ১১ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর হেফাজতের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় ১৮ এপ্রিল আলোচিত মামুনুল হককে ধরা হয়। পরদিন রাতে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের বাসায় যান। তারা অযথা কাউকে হয়রানি–গ্রেপ্তার না করার দাবি জানান। এ ছাড়া হেফাজতে ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে নয় বলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন হেফাজত নেতারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতি দিয়ে মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতাদের ‘আলেম ওলামা’ বলে উল্লেখ করে তাদের মুক্তি দাবি করে হেফাজতের সঙ্গে বিএনপির গোপন মৈত্রীর কথাই প্রকাশ করেছেন। বিএনপি নিজে না পেরে হেফাজতের ঘাড়ে সওয়ার হওয়ার নীতি নিয়েও কোনো সুফল না পাওয়ায় তারাও হয়তো হতাশ। বিএনপির বিবৃতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরও গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ না হওয়ায় হেফাজত কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। এখন মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতিতে না জড়ানোর কথা বলা এবং সংগঠনের কমিটি ভেঙ্গে দেওয়াকে অনেকেই হেফাজতের ইমেজ রক্ষার অপচেষ্টা বলে মনে করছেন।

সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি পেতে হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন যে বক্তব্য দিয়েছেন, মানুষ তার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার থেকে সব পক্ষই বিরত থাকলে সবারই মঙ্গল হবে। ধর্মের হেফাজতের জন্য কোনো সংগঠনের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ব্যাপার। জবরদস্তি করে চাপিয়ে দেওয়ার কাজটি বিদ্বেষ এবং ঘৃণা ছড়ায়। সম্প্রীতি বাড়ায় না।

সরকারের অন্যায়-অনিয়ম-দুর্নীতি-অনাচার-পক্ষপাত-জুলুমের বিরোধিতা হোক রাজনৈতিকভাবে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে সহিংস পথে নয়।

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সৌজন্যেঃ bdnews24.com

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত