3031
Published on এপ্রিল 10, 2021হায়দার মোহাম্মদ জিতু:
মিডিয়া এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কন্টেন বানানোর ক্ষেত্রে প্রি প্রোডাকশন, প্রোডাকশন এবং পোস্ট প্রোডাকশন, এই তিন ধাপে কাজ করা হয়। যেখানে প্রথম ধাপে পরিকল্পনা, দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োগ এবং তৃতীয় ধাপে পর্যবেক্ষণ-ফলাফল হিসেব করা হয়। এই হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালীর জীবন যৌবনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রয়োগের যুদ্ধও শুরু করেছিলেন দেশ গঠনের সংগ্রামে। কিন্তু বহিঃশত্রু, বিপথগামী অভ্যন্তরীণ চক্রের হত্যাযজ্ঞে দ্বিতীয় ধাপ অসম্পন্ন এবং তৃতীয় ধাপও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
অবশ্য বাঙালীর সৌভাগ্য যে, পরবর্তীতে সেই হাল ধরেছেন বাঙালীর দুঃসাহসী কন্যা শেখ হাসিনা। যার হাত ধরে আজ বাঙালী জয়যাত্রার মিছিলে। ফলাফল বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যেখানে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানান প্ল্যাটফর্ম এবং সংগঠন গড়ে উঠেছে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য, সেখানে শেখ হাসিনা এ ধরনের প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সুন্দর-সাম্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছেন মাধুর্য সম্পন্ন নান্দনিকতায়।
শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় আজ নারীরা অর্থনৈতিক সংগ্রামে এগিয়ে এসেছেন বীরদর্পে। মার্ক্স দর্শন মতে ক্ষমতা হস্তগত করার প্রাথমিক উপায় অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর নিয়ন্ত্রণ। সে হিসেবে নারীর যে অস্তিত্ব-উপস্থিতি তা শেখ হাসিনাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ণয় করেছেন। প্রত্যেকের জন্য সহজে লেনদেনে ব্যাংক এ্যাকাউন্টসহ সরকারী সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। উৎপাদনমুখী মিছিলে শামিল করেছেন। যা পেশাগত কাঠামো নিরীক্ষণে স্পষ্ট বোঝা যায়। অর্থাৎ লৈঙ্গিক বৈষম্য হটিয়ে সমতার অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পথ অনুসন্ধানে অগ্রসর হয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক উৎপাদনমুখী বৈশ্বিক ব্যবস্থার সঙ্গে বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবেলায়ও দেশকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে লড়ে যাবার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এটাই একজন ভিশনারি নেতার আচরণ।
বাংলাদেশ আজ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডিতে থাকা দেশ নয়। বরং বিশ্ব দরবারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই বৈশ্বিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এদেশকেও করোনা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব গুণে সেই সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছে। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত ২ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যাতে ১ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার ৮৪১ পরিবারকে উপকারভোগী হয়েছেন। শিশু খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যয় করেছে প্রায় ১২৬ কোটি টাকা, যাতে প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৪ হাজার ৫২৭ পরিবার উপকারভোগী হয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতাল, শিক্ষা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সকল পর্যায়েই নানা প্রণোদনা-প্যাকেজ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তবে এও সত্য যে, দেশের এই সঙ্কটে কেউ কেউ মজা দেখার জন্য তৈরি হয়েছিলেন। ভাবখানা এমন যে, দেখি শেখ হাসিনা এইবার কি করেন? কিন্তু এরা জানেন না শেখ হাসিনা সেই মায়ের সন্তান যিনি ’৭১-এ বাঙালীর বিজয় বার্তা আসার সময় যখন পাকিস্তানী সেনারা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বাঙ্কার বসিয়ে অবস্থান করছিলেন, ঠিক সে সময় তাদের বন্দুকের নলের সামনেই বাড়িতে টাঙ্গানো পাকিস্তানী পতাকা টেনে হিঁচড়ে পদদলিত করে উড়িয়ে ছিলেন বাংলাদেশের পতাকা। অর্থাৎ তিনি এমনই অদম্য বাবা-মার সন্তান, যাদের স্পর্ধার অনুপ্রেরণায় শেখ হাসিনা আজ দেশরত্ন থেকে বিশ্বরত্ন হওয়ার পথে।
তবে এই বৈশ্বিক হয়ে ওঠার গল্পে শেখ হাসিনাকে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা ষড়যন্ত্র এবং মৃত্যু দামামার অজস্র পথ। তবে একেও তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। জানিয়েছেন ‘মৃত্যুর আগে আমি মরতে রাজি নই। তার আগে যতক্ষণ জীবন আছে, বাংলার মানুষের সেবা করে যাব।’ এমন মহৎ চিন্তার অধিকারী রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা এবং তাঁর জনগণের জন্য অপেক্ষা করছে একটি মহাগৌরব সম্পন্ন মুহূর্ত।
কিছুদিন আগে শেখ হাসিনার সামনে অপেক্ষা করছিল শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী, মার্গারেট থ্যাচার, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার মতো বিশ্ব নারী সরকারপ্রধানদের ছাড়িয়ে শীর্ষ বিন্দুতে পৌঁছাবার হাতছানি। টানা তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আজ সে পথ আরও উন্মুক্ত। বর্তমানে তিনি হতে চলেছেন বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদী নারী সরকার প্রধান এবং ভবিষ্যতে সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় থাকা একক নারী রাষ্ট্রপ্রধান।
একাধারে টানা ক্ষমতায় থাকা নারী সরকার প্রধানদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন সেন্ট লুসিয়ার গবর্নর জেনারেল ডেম পারলেত লুইজি, ২০ বছর ১০৫ দিন দেশ পরিচালনা করেছেন। ব্রিটিশ লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার ১১ বছর ২০৮ দিন দায়িত্বে ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ১৫ বছরের কিছু বেশি। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা হিসেবে প্রায় ১২ বছর এবং সর্বমোট হিসেবে প্রায় ১৭ বছর সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। যা নারী নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় দীর্ঘ সময়। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাও দুই পদে ১১ বছর ৭ দিন দায়িত্বে ছিলেন। যদিও চন্দ্রিকা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাত্র ৮৫ দিন।
বিশ্বে উল্লেখযোগ্য নারী সরকারপ্রধানদের মাঝে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে বিশ্বে আলোচিত মাত্র ৪ জন নারী- ইন্দিরা গান্ধী, মার্গারেট থ্যাচার, এ্যাঞ্জেলা মেরকেল এবং শেখ হাসিনা। এসব নারী প্রধান প্রত্যেকেই তাঁর দেশকে দিয়েছেন নতুন দর্শন এবং অপার সম্ভাবনা। তাঁদের মাঝে শুধু মেরকেল এবং শেখ হাসিনা আজও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
কাজেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাঙালীর কর্মযজ্ঞ (প্রোডাকশন) এবং ভবিষ্যত (পোস্ট প্রোডাকশন বা ফলাফল) নির্ধারিত। আর এই পথচলাতেই ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য গৌরব এবং ইতিহাস অপেক্ষা করছে। যেখানে বৈশ্বিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এবং তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নাম। যা পুরো বাঙালী জাতির জন্য হবে পরম গৌরবের এবং ভবিষ্যত অগ্রযাত্রায় অনুপ্রেরণার কারণ।
লেখক : প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ