জিয়া যেভাবে বদলেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

2618

Published on মার্চ 28, 2021
  • Details Image

তন্ময় ইমরানঃ

‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ চালুর মধ্য দিয়ে মুক্তির সংগ্রামকে শুরুতেই জনযুদ্ধে রূপান্তরের প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছিল। ২৫ মার্চের কালরাতের ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বাঙালির পক্ষ থেকে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ চালু করা ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের জন্য এক পাল্টা জবাব।

কোনোরকম অস্ত্র ছাড়াই কেবল কণ্ঠের জোরে সুসজ্জিত কোনো সামরিকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে নামা পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য।

মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা বেতার কেন্দ্রটি ছিল বাঙালির হৃদস্পন্দন। যদিও ট্র্যাজেডি এই যে, সামরিক শাসক ও পাকিস্তানি দোসররা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের সূচনালগ্নকেই কাজে লাগিয়েছে- নিজেদের অবৈধ ক্ষমতায়ন বৈধ করতে।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিনে প্রথমবার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে পাঠ করেন জিয়াউর রহমান। পরদিনই সেটি পাল্টে নিজেকে ‘প্রভিশনাল হেড অব বাংলাদেশ’ এবং ‘চিফ অভ লিবারেশন ফ্রন্ট’ বলে দাবি করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন তিনি।

একাত্তরের ২৮ মার্চে দেওয়া ওই ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর নাম না আসায় চারিদিক থেকে প্রতিবাদের মুখে জিয়া ২৯ মার্চ আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ঘোষণা দেন।

প্রযোজক কাওসার মাহমুদ পরিচালিত ‘শব্দসেনা’ নামের ৭১ মিনিটের এক ডকুমেন্টরিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনালগ্নের সাথে জড়িত বেলাল মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং শমসের মবিন চৌধুরীর দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্যচিত্রটির এখনও পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২১ সালের অগাস্টেই এটি মুক্তি পাবে। এতে ২০০৮ সাল থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গড়ে তোলার সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাওসার মাহমুদ।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নেওয়া ওইসব সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অলিখিত সেক্টর স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র নিয়ে নানা তর্কের অবসান ঘটবে বলে তিনি মনে করছেন।

তথ্যচিত্রটিতে বেলাল মোহাম্মদ তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কিত একটি লিফলেট সকাল থেকেই চট্টগ্রামে বিলি হচ্ছিল। সেটিই ছিল ২৬শে মার্চ সন্ধ্যায় চালু হওয়ার পর ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে প্রচারিত প্রথম ঘোষণাপত্র, যেটি পড়েন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। তবে এর আগে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম এ হান্নান সাহেব দুপুরেই স্ব উদ্যোগে ওই একই লিফলেটকে ভিত্তি করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তখন বেতারে সংবাদ প্রচারের সময় না হওয়ায় ওই ঘোষণা প্রায় কেউই শোনেননি। ”

২৬শে মার্চের স্মৃতিচারণে বেলাল মোহাম্মদ বলেন, আগ্রাবাদ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে খুব সহজেই পাকিস্তানি বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হওয়ার সুযোগ ছিল। কাজেই কালুরঘাটে যে ব্যাক-আপ রেডিও স্টেশন ছিল সেখান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা হয়।

চট্টগ্রাম বেতারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার এ পরামর্শ দিয়ে বেলালকে বলেন, “আগ্রাবাদ রেডিও স্টেশন পাকিস্তানি বাহিনী শেল-এর আওতায় পড়ে। তাছাড়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রও স্বয়ংসম্পূর্ণ।”

বেলাল মোহাম্মদরা আগ্রাবাদ স্টেশন থেকে বের হয়ে কালুরঘাটের দিকে রওনা দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কর্মী আনোয়ার আলী জিজ্ঞাসা করেন- “যাচ্ছেন তো… কী প্রচার করবেন!”

পরে তিনি সকাল থেকে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হিসেবে প্রচারিত লিফলেটটি বেলাল মোহাম্মদের হাতে দেন।

বেলাল মোহাম্মদ তার সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও আবুল কাশেম সন্দীপ ২৬ তারিখ যখন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যান তখন সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। বেতারের প্রকৌশলী মির্জা নাসিরুদ্দিন, আমিনুর রহমানকে দিয়ে অনেকটা জোর করেই কালুরঘাট বেতার চালু করেছিলেন তিনি। এমনকি ব্যাক-আপ হিসেবে নিজের সঙ্গে প্রকৌশলী মোসলেম খান ও টেকনিশিয়ান শুক্কুর আলীকে নিয়ে এসেছিলেন হান্নান।

আব্দুল্লাহ আল ফারুক তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “আবুল কাশেম সন্দীপের ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়েছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। পরে আমি ওই ঘোষণাপত্র অনুবাদ করে ইংরেজি পাঠ করি এবং বাংলা ও ইংরেজি বুলেটিনও পাঠ করি।”

বেলাল মোহাম্মদ জানান, তিনি ছাড়াও ২৬ মার্চ ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে’র প্রথম দিন স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন- আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান, আবুল কাশেম সন্দীপ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং সুলতানুল আলম।

সুলতানুল আলম সেসময় মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের ঘোষক ছিলেন। আবুল কাশেম সন্দীপ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি কলেজের সহ-অধ্যক্ষ এবং আব্দুল্লাহ আল ফারুক চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কর্মী ছিলেন। আব্দুল্লাহ আল ফারুক পরবর্তীতে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর নেন। এখন তিনি জার্মানিতেই অবস্থান করছেন।

বেলাল মোহাম্মদ জানান, ২৬ মার্চ আবুল কাশেম সন্দীপের ঘোষণার পরপরই কবি আবদুস সালামের কণ্ঠে কোরানের বাণী প্রচারিত হয় এবং একই সাথে তিনি একটি কথিকাও পাঠ করেন। কথিকায় আবদুস সালাম- কীভাবে পাকিস্তানি বাহিনীকে মরিচের গুড়া, গরমপানি, বাল্বের কাচ ইত্যাদি হাতের কাছের উপকরণ দিয়ে হেনস্তা করা যেতে পারে সেসব পরামর্শ দেন।

তবে বেলাল মোহাম্মদ ও আব্দুল্লাহ আল ফারুক দুইজনের মতেই ২৬ মার্চের ওই সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান যে বক্তব্য দেন সেটিই ছিল সবচেয়ে প্রেরণাদায়ী ও জ্বালাময়ী। ওই ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনি।

দুপুরে দেওয়া ঘোষণাটির কোনো রেকর্ড না থাকলেও, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে সন্ধ্যায় প্রচারিত হান্নানের ওই ৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের এক দুষ্প্রাপ্য অডিও ক্লিপ কাওসার মাহমুদ তার ‘শব্দসেনা’ ডকুমেন্টরিতে সংযুক্ত করেছেন।

(নিরাপত্তার স্বার্থেই এ বক্তব্যে বেলাল মোহাম্মদ এম এ হান্নানকে নিজের নাম বলতে দেননি। তবে বক্তব্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা উল্লেখ আছে। লেখাটি লেখার সময় বক্তব্যটি আমি শুনে নিয়েছি। বেলাল মোহাম্মদও তার সাক্ষাৎকারে নাম বলতে না দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।)

২৭ মার্চ, ১৯৭১ এবং জিয়ার প্রথমবার ঘোষণাপত্র পাঠ

বেলাল, সন্দীপ ও আব্দুল্লাহ আল ফারুকসহ বেশ কয়েকজনের আড্ডাস্থল ছিল এনায়েত বাজারে অবস্থিত চট্টগ্রামের সেসময়ের দাঁতের ডাক্তার এম শফীর বাড়ি ‘মুশতারী লজ’। মিসেস মুশতারী শফীও ছিলেন তাদের আড্ডার নিয়মিত সদস্য।

‘মুশতারী লজ’ থেকেই আগের দিন সকালে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে’র প্রাথমিক পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে ছুটে এসেছিলেন বেলাল মোহাম্মদ। নামটা দিয়েছিলেন আবুল কাশেম সন্দীপ।

২৬ মার্চ রেডিও চালুর পর রাত সাড়ে ১১টায় বেলাল, ফারুক, সন্দীপ আবার মুশতারী লজে ফিরে আসেন। সেখানে বেগম মুশতারী ও তার ছোট ভাইয়ের সহায়তায় পরদিন রেডিও চালু রাখার জন্য বুলেটিনের সংবাদ তৈরি করা শুরু করেন।

কিন্তু ওই রাতে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় আসে এবং তখন তারা ঠিক করেন চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের জন্য পটিয়ায় অবস্থানরত তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে সাহায্য চাইবেন। এ লক্ষ্যেই মাহমুদ হোসেন নামের আগ্রাবাদ হোটেলে বসবাসরত এক বাঙালি ব্যবসায়ীর কাছে গাড়ির জন্য সাহায্য চান তারা। তিনি ছিলেন বেলাল মোহাম্মদের বন্ধুস্থানীয়। মাহমুদ হোসেনের গাড়ি ব্যবহার করে জিয়াউর রহমানের কাছে পরের দিন সকালে যাওয়ার জন্য তাকে ফোন করেন বেলাল।

মাঝখানের জন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এর অন্যতম উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ। সর্বডানে নীল টি শার্ট গায়ে পরিচালক কাওসার মাহমুদ।

মাহমুদ হোসেন বেলালকে বলেন, তিনিও ‘হ্যালো ম্যানকাইন্ড’ রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিজ উদ্যোগে পাঠ করেছেন।

বেলাল মোহাম্মদরা তখন ধরে নিয়েছিলেন মাহমুদ হোসেন হয়তো সত্যি কথা বলছেন না।

মাহমুদ হোসেনকে নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে লেখক, সাংবাদিক ও ব্লগার অমি রহমান পিয়ালের ‘রহস্যময় মাহমুদ হোসেন ও কালুরঘাট’ শিরোনামে চমৎকার একটি অনুসন্ধানী নিবন্ধ রয়েছে। সেখানে আরও বিস্তারিত রয়েছে বলে এ প্রসঙ্গে আর গেলাম না।

পটিয়ায় জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইলে তিনি নিরাপত্তা সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হন। এসময়ে জিয়া জানান, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছেন। মজার ব্যাপার হলো- তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা তো শুনেছেনই, রাতে মাহমুদ হোসেনের ঘোষণাও শুনেছেন ইংরেজিতে!

জিয়া তার অধীনে থাকা দেড়শ জনের দল নিয়ে পটিয়া থেকে কালুরঘাটে তিনটি লরি নিয়ে রওনা হন। পরে রেডিও স্টেশনে আসার পর ‘সামরিক বাহিনীর কোনও কর্মকর্তার মারফতে ঘোষণা দিলে, জনগণ বেশি সাহস পাবে’ সেই চিন্তা থেকে বেলাল মোহাম্মদ জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের অনুরোধ করেন।

কাওসার মাহমুদের ডকুমেন্টরিতে বেলাল তার সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জিয়া এবং তিনি মিলে জিয়ার ঘোষণার প্রথম ড্রাফটি করেন। ইংরেজিতে লেখা সেই ঘোষণাপত্রের প্রত্যেকটি শব্দই তারা দুইজনেই উচ্চারণ করে করে দেখেন ঠিক আছে কি না।

নাট্যকার ও অভিনেতা মমতাজউদ্দিন আহমেদও কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের বাংলার শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ। তার কাছে সেই ইংরেজি ড্রাফটটি বাংলা করতে দেওয়া হয়।

মমতাজউদ্দিন তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “প্রথম ড্রাফট-এ বঙ্গবন্ধুর নাম ছিল। একটা শব্দ আমি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম, শব্দটা এখন ঠিক মনে নেই… খুব সম্ভবত ‘ঈমান’ হবে। জিয়া সেটি রেখে দিতে বললেন।”

বেগম মুশতারী শফিও জিয়ার বক্তব্য ২৭ মার্চ শুনেছিলেন। স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, “৭টা ৪০ মিনিটে আমি তার বক্তব্য শুনি। প্রথম কথাগুলো ছিল বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন। পাঞ্জাবীদের দুইদিনের মধ্যে আমরা শেষ করে ফেলতে পারবো। আর শেষের দিকে বলেছিলেন- এখন দেশ-বিদেশের কাছে আমাদের সাহায্য চাচ্ছি। ভিক্টরি ইজ আওয়ারস। জয় বাংলা।”

এই ঘটনার আরেক সাক্ষী আব্দুল্লাহ আল ফারুক। কেননা ঘোষণাপত্র বাংলা অনুবাদটা তার বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছিল।

তিনি বলেন, “জিয়া প্রথম যে ঘোষণা করেছেন সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল ‘অন বিহাফ আওর গ্রেট লিডার শেখ মুজিব।”

২৮ মার্চ, ১৯৭১ ও জিয়ার ঘোষণায় ‘বঙ্গবন্ধু’-কে উপেক্ষা

মূলত এইদিনেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ‘শব্দসেনা’-য় কাওসার মাহমুদ তখন জিয়ার অধীনে থাকা সেনা কর্মকর্তা শমসের মবিন চৌধুরীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। শমসের মবিন চৌধুরী পরে দীর্ঘদিন জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

২০১৮ সালে ‘বিকল্প ধারা’য় যোগ দেওয়া শমসের মবিন চৌধুরী ‘শব্দসেনা’-য় তার সাক্ষাৎকারে বলেন, “২৮ শে মার্চ মেজর জিয়া তার হাতে যে দলিলটা, (ঘোষণাপত্র) সেটা আমার হাতে দিয়ে বলেন এটা তুমি রেডিও স্টেশনে গিয়ে বারবার পড়তে থাকবে।”

২৮ তারিখের এই ঘোষণায় ‘বঙ্গবন্ধু’র নাম জিয়া বাদ দেন বা উল্লেখ করেননি।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “সেই ঘোষণায় জিয়া বলেছিলেন- আই হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেলফ প্রভিশনাল হেড অব দ্য গভর্মেন্ট অব বাংলাদেশ।”

তিনিও জিয়ার ওই বিতর্কিত ঘোষণাপত্রটি সেদিন বেশ কয়েকবার পাঠ করেন। এছাড়াও সেদিনই জিয়াউর রহমান স্টেশনে এসে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ থেকে ‘বিপ্লবী’ শব্দটা বাদ দেন।

‘শব্দসেনা’য় দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, “আমরা কেউই সেদিন ব্যাপারটাকে খুব সহজভাবে নেইনি।”

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ জনতার মধ্যেও। বেতার কেন্দ্রের অবস্থান জানেন এমন কেউ কেউ ফোন করছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ফোন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম না আসায় তা তার অসন্তুষ্টির কথা জানান।

স্মৃতিচারণে শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, “হান্নান সাহেব ফোন দেন। আমিই ধরি। উনার সাথে অবশ্য আমার আগেও দেখা হয়েছে। উনি সাধুবাদ জানালেন। তারপর বললেন- এই ঘোষণায় কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম আসে নাই। সকলে তো বঙ্গবন্ধুকেই চেনে, তাই না। লড়াই তো তার জন্যই।”

“আমি হান্নান সাহেবের সাথে একমত হলাম। বললাম- দিস ওয়ার অব ইনডিপেন্ডপেন্স ইজ বিন ফট আন্ডার দ্য গাইডেন্স অব শেখ মুজিবুর রহমান- এটা যোগ করা উচিত। পরে সেই রাতে আমি মেজর জিয়াকে বলাতেই তিনি বললেন- অফকোর্স বঙ্গবন্ধুর নাম থাকতে হবে।”

২৯ মার্চের ঘোষণায় ভুল শুধরে আবারও বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ৩০ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর বিমান হামলা হয়।

তাতে কেউ হতাহত না হলেও সাময়িক সময়ের জন্য সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং পরে আবার এপ্রিলের ১৪ তারিখে বেলোনিয়ার জঙ্গল থেকে শব্দসেনারা শুরু করেন তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ।

সৌজন্যেঃ বিডিনিউজ২৪

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত